9790

04/20/2025 আমের রাজ্যে লিচুর রাজত্ব

আমের রাজ্যে লিচুর রাজত্ব

রাজ টাইমস

২৮ মে ২০২২ ০৩:২০

দেশজুড়ে আমের রাজ্য হিসেবে সুপরিচিত রাজশাহী। এবার মৌসুমের প্রথমদিকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গাছ থেকে ঝরেছে মুকুল, গুটি ও অপরিপক্ক আম। অন্যদিকে লিচুর মৌসুমে অনুকূল আবহাওয়ায় এবছর রাজশাহীতে লিচুর ব্যাপক ফলন হয়েছে। এ কারণে রাজশাহীর হাটে-বাজারে আমের বদলে রঙিন ও রসালো লিচুর আধিপত্য দেখা যাচ্ছে।

গত কয়েকসপ্তাহ যাবত রাজশাহীর সাহেব বাজার, শালবাগান, খড়খড়ি, বানেশ্বর, লক্ষীপুর, কোর্ট বাজার ও রাজশাহীর বাস টার্মিনালের ফল বাজারসহ অন্যান্য হাট-বাজার সরেজমিনে পরিদর্শন করে এমনটাই দেখা গেছে।

হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চলতি মাসের প্রথমদিকে রাজশাহীতে বাজারে ওঠে আঠি জাতের লিচু। এসব আঠি জাতের লিচু আকারে ছোট, তুলনামূলক কম মাংসল ও বিচির আকার বড় হয়ে থাকে। স্বাদের দিক থেকে কিছুটা টক-মিষ্টি। মৌসুমের শুরুতে বাজারে আসায় দামও ছিল বেশ চড়া। মৌসুমের প্রথমে এসব লিচু বাজারভেদে বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। তবে ধীরে ধীরে দাম কমে বিক্রি হতে থাকে ১৮০ থেকে ২২০ টাকায়।

তবে চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে উঠতে শুরু করে বোম্বে জাতের সুস্বাদু লিচু। এসব লিচুর আকার বেশ বড় এবং এ জাতের লিচুর বিচিও বেশ ছোট হয়ে থাকে। যার কারণে মাংসল অংশটিও অনেক বেশি। সপ্তাহজুড়ে বাজার ঘুরে দেখা গেছে দামের তারতম্য।

রাজশাহী মহানগরীর কোর্ট, লক্ষীপুর ও সাহেব বাজারে বোম্বের লিচু বিক্রি করতে দেখা গেছে ২২০ থেকে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকায়। তবে বানেশ্বর, কাটাখালী, খড়খড়ি ও শালবাগান এলাকায় ২০০ থেকে ২২০ টাকা তুলনামূলক কমে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

এদিকে নগরীর শিরোইল স্টেশন বাস টার্মিনালের ফলের দোকান ও রাস্তার পাশে বড় ঢালা ও ভ্যানে বিক্রি হওয়া লিচুর দাম অন্যান্য স্থানের চেয়ে একটু বেশি দেখা গেছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গমনকারী যাত্রীদের কাছে বিক্রি হচ্ছে এসব লিচু। একারণে বিক্রেতারা হাঁকছেন চড়া দাম।

একশ লিচু তারা বিক্রি করছেন ২২০ থেকে ২৫০ টাকায়। তবে বিক্রেতাদের দাবি, তাদের লিচু অন্যান্য জায়গার লিচুর চেয়ে আকারে বড় ও সুস্বাদু। একারণে দাম বেশি। তাছাড়া গাড়ি ভাড়া ও শ্রমিক খরচ বাড়তি থাকায় লিচুর দাম কিছু বেশি রাখতে হচ্ছে।

শুধু রাজশাহীর হাট বাজারেই নয়, বিভিন্ন পাড়া মহল্লাতেও ভ্যানে করে লিচু সাজিয়ে বিক্রি করতে দেখা গেছে লিচু। পাড়া-মহল্লায় বিক্রি হওয়া লিচুর আকার তুলনামূলক ছোট।

নগরীর টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের গেটের সামনে ভ্যানে করে লিচু বিক্রি করছিলেন দুজন। এখানে হেকমত আলী নামে এক লিচু ব্যবসায়ীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি করছি।

শালবাগানের ফল ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান রানা। শালবাগানে রয়েছে তার ফলের আড়ত। আম লিচুর মৌসুমে রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে গাছের লিচু দেখে কিনছেন। আকার ও স্বাদ বুঝে বোম্বের লিচু চাষিদের কাছে থেকে নিচ্ছেন ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা হাজারে। লেবার খরচ, ভ্যানভাড়াসহ আনুষাঙ্গিক খরচ মিলিয়ে বাজারে বিক্রি করছেন ২০০ থেকে ২৩০ টাকায়।

নগরীর শিরোইল বাস টার্মিনালের মৌসুমী লিচু ব্যবসায়ী আব্দুল মোমিন। লিচু বিক্রি নিয়ে বেশ ব্যস্ত তিনি। ন্যাশনাল কাউন্টারের একটি বড় ডালা নিয়ে বসেছেন কয়েক হাজার চারেক লিচু নিয়ে। জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রথম দিকে ৩০০ টাকায় লিচু বিক্রি করেছি। বর্তমানে বেচছি আড়াই টাকায়। চাহিদার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাহিদা খুব ভালো। মানুষ শুধু এখন লিচুই খাচ্ছে। আমের কথা মানুষ মুখেই নিচ্ছে না।

এদিকে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রাজশাহী জেলায় মোট ৫২৪ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ৫ হেক্টর বেশি। এবছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ১৪৪ দশমিক ১০ মেট্রিক টন। হেক্টর প্রতি ফলন হয়েছে ৬ মেট্রিক টন।

লিচুর আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্য কেন্দ্রের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. আব্দুল্লাহিল কাফি জাগো নিউজকে বলেন, এ মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়েছে।

সামান্য ঝড়-বৃষ্টি হলেও রাজশাহী জেলা সেভাবে কালবৈশাখী ঝড়ের প্রভাব পড়েনি। তাছাড়া এবছর আমাদের পক্ষ থেকে লিচুর ফেটে যাওয়া ও লিচু ছিদ্রকারী পোকার দমন বিষয়ে চাষিদের মধ্যে অনেক বেশি বেশি করে পরামর্শ প্রদান ও প্রচারণা করা হয়েছে।

আমের মুকুলের জন্য এবছর আবহাওয়া ভালো না থাকলেও লিচুর জন্য এই মৌসুম ছিল বেশ অনুকূলে। যার কারণে এ মৌসুমে পর্যাপ্ত পরিমাণে রাজশাহীতে লিচুর ফলন হয়েছে বলে জানান জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এ কৃষিবিদ।

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]