9918

04/23/2025 অবৈধ ক্লিনিক বন্ধ ঘোষণা কর্তৃপক্ষের, মাইকিং করে রোগী ডাকছে মালিকরা

অবৈধ ক্লিনিক বন্ধ ঘোষণা কর্তৃপক্ষের, মাইকিং করে রোগী ডাকছে মালিকরা

রাজ টাইমস

৬ জুন ২০২২ ০৭:৩৫

রাজশাহীতে অবৈধ ৪২টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হলেও দিব্যি চালু রাখা হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে গণমাধ্যমে ঘটা করে পাঠানো বন্ধের তালিকার সাথে বাস্তবের কোনো মিল পাওয়া যায়নি। গণমাধ্যমে দায়সারা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে এই প্রতিষ্ঠানগুলো অবৈধ বলা হলেও মালিকেরা বৈধ দাবি করে কার্যক্রম চালু রেখেছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে এসব প্রতিষ্ঠান আগের মতো তাে চলছেই, কয়েকটি ক্লিনিকে মাইকিং করে রোগী ডাকতেও দেখা গেছে। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণেই অবৈধ ক্লিনিকগুলো আগের মতোই ব্যবসা করে যাচ্ছে। এ নিয়ে সিভিল সার্জন অফিস ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তার সঙ্গে গোপন সমঝোতা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, রাজশাহীর বাঘায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। শর্ত পূরণ না করায় এগুলো গেল ৫ বছরেও সরকারি নিবন্ধন পায়নি। ১ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশ মোতাবেক বাঘার ১১টি অবৈধ ক্লিনিক বন্ধ করা হয়। এগুলো হলো- বাঘা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মঞ্জু ডিজিটাল সেন্টার, মাহমুদ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মাহমুদ ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ক্লিনিক, উপশম মেডিকেল সেন্টার, হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক, আইডিয়াল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নাদিয়া ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ফারিহা খেয়াল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, খেয়াল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আল-মদিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

সিভিল সার্জনের তালিকা অনুসরণ করে এদিন বাঘায় সরেজমিন দেখা গেছে, বন্ধের তালিকায় থাকা অবৈধ ক্লিনিকগুলো চলছে নার্স আর প্যারামেডিক দিয়ে। সাইনবোর্ডে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তালিকা ঝুলানো থাকলেও বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এসব ক্লিনিকে কোনো চিকিৎসককে রোগী দেখতে দেখা যায়নি। বন্ধের তালিকায় থাকা নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার নিউরো কেয়ার ও মেডিকেল কলেজ গেটের সামনের শাহ মাখদুম ডায়াগনস্টিক সেন্টার খোলা ছিল। বাগমারায় অবৈধ ও বন্ধ ঘোষিত সাফল্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডক্টর ক্লিনিক, হামিরকুৎসা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, তাহেরপুরের রয়েল আলট্রাসাউন্ড অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডা. আবদুল হাদি হেলথ কেয়ার অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও নিউ বাগমারা ডায়াগনস্টিক সেন্টারও যথারীতি খোলা ছিল। বৃহস্পতি ও শুক্রবার এগুলো চালু দেখেছেন এলাকার মানুষ। অবশ্য এসব অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকেরা দাবি করেছেন তাদের প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হয়নি।

বন্ধ ঘোষণার তালিকায় থাকা বাগমারার হামিরকুৎসা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রমই শুধু চলছে না, এলাকায় মাইকিং করে রোগী ডাকা হচ্ছে। বাগমারার তাহেরপুর বাজারের রয়েল আলট্রাসাউন্ড অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারও চালু ছিল। এই ক্লিনিকের লোকেরাও এলাকায় মাইকিং করে রোগীদের তাদের ক্লিনিকে সেবা নিতে যেতে অনুরোধ করছেন। তারা মাইকে বলছেন, তাদের ক্লিনিক বন্ধ হয়নি। চালু আছে। কেউ যেন বিভ্রান্ত না হন। বন্ধের তালিকায় থাকা রয়েল আলট্রাসাউন্ডের মালিক আব্দুল মালেক সরদারের দাবি, তার ক্লিনিকের বৈধ কাগজপত্র আছে। তারা মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবাও দিয়ে যাচ্ছেন। তার ক্লিনিকে কোনো অভিযানও হয়নি। তবে সিভিল সার্জনের তালিকায় তার প্রতিষ্ঠানকে অবৈধ ও বন্ধ দেখানো হয়েছে।

বাগমারা উপজেলা ক্লিনিক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জোবাইদুর রহমান বলেন, উপজেলার অবৈধ ও বিতর্কিত অনেক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালানো হয়নি। সেগুলোর কার্যক্রম চলছে। অথচ কয়েকটি ভালোমানের বৈধ ক্লিনিক বন্ধ ঘোষণার তালিকায় দেখানো হয়েছে। অবৈধগুলোর কার্যক্রমও চলছে বলে স্বীকার করেন তিনি।

তানোরে বন্ধ তালিকায় থাকা প্রাইম ডায়াগনিস্টক সেন্টার, চারঘাটের বিএম ক্লিনিক, নিলিমা ক্লিনিক, মিম হাসপাতাল, পবা উপজেলার লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক, সততা হেলথ সার্ভিস, সিবানী হাসপাতাল, মনোয়ার লাইফ সাপোর্ট ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সুফিয়া নার্সিং হোম, মডার্ন আই হাসপাতাল, দুর্গাপুরের দিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হলি ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, গোদাগাড়ীর নাহার ক্লিনিক, জনতা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নিখিলা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মোহনপুরের শতফুল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, রুপোশ মেডিকেয়ার, লাকী ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ইসলামীয়া জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আগের মতোই চালু রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. গোলাম রাব্বানী বলেন, অবৈধ তালিকায় থাকা ক্লিনিকগুলো এখনো বন্ধ রয়েছে। সিভিল সার্জনের অনুমতি ছাড়া কেউ যদি কোনো স্বাস্থ্যসেবা চলমান রাখে সেক্ষেত্রে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, অবৈধ ও বন্ধ ঘোষিত ক্লিনিকগুলো বন্ধই রয়েছে বলেই আমাদের কাছে খবর আছে। তবে তালিকা প্রকাশের পরও কেউ যদি সেগুলো চালু রাখে, অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]