9947

04/28/2025 দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বাজেট উত্থাপন কাল

দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বাজেট উত্থাপন কাল

ডেক্স রির্পোট

৯ জুন ২০২২ ০৩:৫১

জাতীয় সংসদে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের নতুন বাজেট আগামীকাল (৯ জুন) উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। বাজেট নিয়ে আলোচনা শেষে বৃহস্পতিবার (৯ জুন) উত্থাপিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ইতিহাসে সব চেয়ে বড় বাজেট। এবারের বাজেটের সম্ভাব্য আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনের পর নিয়ম অনুযায়ী প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সংসদ সদস্যরা আলোচনা করবেন। এরপর আগামী ৩০ জুন প্রস্তাবিত বাজেট পাশ হবে। বাজেট ছাড়াও এই অধিবেশনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিল উপস্থাপন এবং এর আগে উপস্থাপিত কিছু বিল পাশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে।

নতুন অর্থবছর ২০২২-২৩ বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ। এ ছাড়া তেল, গ্যাস ও সারে ভর্তুকির অর্থ জোগান নিশ্চিত করতে হবে। তবে ডলারের ঊর্ধ্বমুখী দাম মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।

করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সঙ্গে নতুন বাজেটে সরকারের পরিকল্পনার বড় অংশ জুড়েই দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়টি থাকছে। এ লক্ষ্যে বাজেট প্রস্তাবনায় সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা থাকতে পারে।

নতুন বাজেটে আমদানি কেন্দ্রিক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, আমদানি ঠিক রেখে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ স্থিতিশীল রাখার সঙ্গে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বর্তমান পর্যায়ে রাখার মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে সরকারকে।

এ ছাড়া রাজস্ব আয় বাড়ানো এবং বাজেট ঘাটতি কমানো ছাড়াও কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেয়ার প্রস্তাব করতে পারে অর্থ মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বাড়ানো হতে পারে।

সূত্র জানা গেছে, আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার যে বাজেট প্রস্তাব করা হচ্ছে, এটি দেশের মোট জিডিপির ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নে (বৈদেশিক অনুদানসহ) ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর দেবে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। এনবিআর-বহির্ভূত কর ১৮ হাজার কোটি টাকা। কর-বহির্ভূত আয় বাবদ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। ফলে ঘাটতি বাজেট (অনুদানসহ) হবে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির অঙ্ক দাঁড়াবে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।

জানা গেছে, নতুন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হবে ১৮ হাজার কোটি টাকা। কর-বহির্ভূত রাজস্ব (এনটিআর) আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হচ্ছে। নতুন বাজেটে আদায়ের এই লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে যথাক্রমে ১৩ ও ৫ শতাংশ।

এদিকে নতুন বাজেটে ঘাটতি জিডিপি ৫-এর ঘরেই থাকছে। নতুন বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। জিডিপির তুলনায় ঘাটতি কমলেও টাকার অঙ্কে ঘাটতি বাড়ছে ৩০ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। ঘাটতি পূরণে আগামী অর্থবছরের বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার টার্গেট রয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া অন্যান্য খাত থেকে নেওয়া হবে ৫ হাজার ১ কোটি টাকা। এছাড়া বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ ও অনুদান (নিট) গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নতুন বছরে কর আদায় করতে হবে ৩ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের আদায়কৃত কর থেকে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা এবং এনবিআরবহির্ভূত কর থেকে আদায়ের লক্ষ্য ১৮ হাজার কোটি টাকা। এ দুটি খাতের কর ব্যতীত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এ বছর বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার আশা করা হচ্ছে ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান পরিশোধ করতে হয় না। এজন্য এটি সরকারের আয় মনে করা হয়।

বর্তমান সরকারের এবারের মেয়াদে আসন্ন বাজেট এই সরকারের একটি পূর্ণাঙ্গ শেষ বাজেট। কারণ, আগামী বছরের জুনে যে বাজেট পেশ হবে, সেটি হবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের। ২০২৩ সালের ১ জুলাই শুরু হওয়া এই অর্থবছর শেষ হবে ২০২৪ সালের ৩০ জুন। এর কমপক্ষে ৬ মাস আগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দেশে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই বিবেচনায় বর্তমান সরকার এবারই পুরো বাজেট বাস্তবায়নের সুযোগ পাচ্ছে। পরবর্তী বাজেট বাস্তবায়নের সুযোগ পাবে অর্ধেক। ফলে সরকার এবারের বাজেটে ব্যাপক কর্মসৃজনের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে চাচ্ছে। এজন্য ধরা হয়েছে বিনিয়োগের বড় লক্ষ্যমাত্রা। নতুন জিডিপির ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়েছে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা। এর মধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগ ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং সরকারি বিনিয়োগ ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।

সূত্র জানায়, আগের দুটি বাজেট অধিবেশনে সংসদ সদস্যরা পালা করে অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন। তবে এবার সংসদ সদস্যরা চাইলে প্রতি কার্যদিবসে যোগ দিতে পারবেন। সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও নিয়মিত স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। সাংবাদিকরাও সংসদ ভবনে গিয়ে অধিবেশনের সংবাদ সংগ্রহ করতে পারবেন। তবে সংসদ সদস্য, সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে সংসদ ভবনে স্থাপিত করোনা পরীক্ষা বুথে নমুনা নেওয়া হয়েছে। যাদের করোনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসবে কেবল তারাই সংসদে যেতে পারবেন।

এদিকে সংসদ ভবন, সদস্য ভবনগুলো এবং সংসদ এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সংসদ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ, পানি সরবরাহ, লিফট, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সচল ও সংসদ এলাকার সৌন্দর্য্য বাড়ানো হয়েছে।

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]