9981

04/23/2024 দেশে প্রথম সাদা সোনা সিলিকা উৎপাদন হচ্ছে

দেশে প্রথম সাদা সোনা সিলিকা উৎপাদন হচ্ছে

রাজ টাইমস ডেস্ক

১১ জুন ২০২২ ০৪:৫৯

সাদা সোনা খ্যাত সিলিকা। এটিকে সিলিকন ডাই অক্সাইড বলা হয়ে থাকে। এটি সাবান, সিরামিক, কাগজ, পেপার বোর্ড, পানি পরিশোধনাগার, ভবন নিমার্ণ, গার্মেন্টস, পেট্রোলিয়াম এবং মেটাল তৈরিতে কাচাঁমাল হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশে সোডিয়াম সিলিকেটের বাৎসরিক চাহিদা আনুমানিক ২,০০০ মেট্রিক ট্রন পেরিয়েছে। যে হারে শিল্প কলকারখানা বাড়ছে, এ চাহিদা আরও বেড়ে যাবে।

দেশে বিপুল পরিমাণে সোডিয়াম সিলিকেট (সিলিকা) তৈরির কাঁচামাল থাকা সত্ত্বেও প্রতি বছর সোডিয়াম সিলিকেট আমদানি করার জন্য অনেক বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে। দেশের মাটিতে সিলিকা তৈরির প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে দেশের ৫৫-৬০ ভাগ সোডিয়াম সিলিকেটের চাহিদা পূরণ করা যাবে। এতে দেশের টাকা দেশেই থাকবে।

তবে ভালো খবর হলো- দেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো ধানের তুষ দিয়ে উৎপাদন করা হচ্ছে সিলিকা। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং গ্রামে সাসটেইনেবল এনার্জি অ্যান্ড এগ্রো রিসোর্স লিমিটেড (সোর্স) নামে একটি প্রতিষ্ঠান সিলিকা উৎপাদনের কাজ করছে।

ধান থেকে চাল প্রক্রিয়াজাত করার পরে একটি বর্জ্য পাওয়া যায়। যে বর্জ্যটির নাম তুষ। জানা যায়, তুষকে পুড়িয়ে ছাই করলে ৬০-৭০ ভাগ সিলিকা পাওয়া যায়। এটি কষ্টিক ডাইজেশন করে সোডিয়াম সিলিকেট তৈরি করে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করা যায়।

প্রথমে নির্দিষ্ট পরিমাণ ধানের তুষের ছাই মেপে ডাইজেস্টরে নিয়ে কষ্টিক সোডা দিয়ে ডাইজেশন (অনবরত নাড়ান) করা হয়। ডাইজেশন প্রক্রিয়াটি ১০০-১৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১-২ ঘণ্টা চালানো হয়। এখান থেকে যে ধোঁয়াটি বের হয়, সেটি বাইরে ছেড়ে না দিয়ে সেটা দিয়েই বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়। এই বিদ্যুৎ দিয়ে পুরো ইউনিটে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হয়ে থাকে। এতে করে বাইরে থেকে কোনো বিদ্যুতের প্রয়োজন পড়ে না। এরপর তরল সোডিয়াম সিলিকেট ২-৩ মাইক্রন ছাকনি দ্বারা ছাকা হয়। এতে বিশুদ্ধ তরল সোডিয়াম সিলিকেট পাওয়া যায়।

চাহিদা অনুযায়ী সোডিয়াম সিলিকেটে পানির পরিমাণ ঠিক রাখার জন্য বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পানি বাষ্পীভূত করা হয়। এরপর এই বিশুদ্ধ সোডিয়াম সিলিকেট ২৫০ লিটার স্টিলের ড্রামে ভরে বাজারজাত করা হয়। ছাকনি হতে প্রাপ্ত বর্জ্যপদার্থ এক্টিভেটেড কার্বন ড্রাইয়ারের মাধ্যমে শুকিয়ে বাজারজাত করা হয়।

উৎপাদন অনুযায়ী বাজারের চাহিদা অনেক পরিমাণে বেশি। স্বল্প সময়ের মধ্যে উৎপাদন বাড়িয়ে বাজার চাহিদা পূরণের চেষ্টা করবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রতিষ্ঠানের ফোরম্যান দুলাল হোসেন বলেন, ‘আমরা এ প্রতিষ্ঠানে ১৭ জন মানুষ কর্মরত আছি। প্রায় ছয় বছর থেকে প্রতিষ্ঠানটির সাথে আছি। ছয় মাস থেকে আমাদের প্রোডাকশন হচ্ছে। আমরা ধানের তুষ থেকে সিলিকা পাউডার তৈরি করছি পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। যারা কাজ করি একেকজন একেকটি মেশিন দেখাশোনা করি। আর এখানে সবাই আমরা মাসিক বেতনে কাজ করছি।’

প্ল্যান্টটি দেখতে আসা হাসিনুর রহমান বলেন, ‘প্ল্যান্টটির কথা জানতে পেরে দেখার খুব আগ্রহ ছিল। আজকে সরাসরি পুরো প্ল্যান্টটি দেখলাম। সত্যিই এটি প্রশংসার দাবি রাখে। তুষ দিয়ে তারা সিলিকা উৎপাদনের পাশাপাশি এখান থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে পুরো প্ল্যান্টটি পরিচালনা করছে। এটি অনেক ভালো ও পরিবেশবান্ধব। ঠাকুরগাঁওয়ের মতো একটি জেলায় শিল্প কারখানায় মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে বলে আমি আশা করছি।’

প্রতিষ্ঠানের পরিচালক প্রকৌশলী মানিক হোসেন বলেন, ‘আমরা ধানের তুষ দিয়ে সিলিকা ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করি। যে প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে পরিবেশবান্ধব। পৃথিবীর অল্প কয়েকটি প্ল্যান্টের মধ্যে এটি একটি। আমাদের পুরো প্রক্রিয়াটি শতভাগ পরিবেশবান্ধব। আমরা আশা করছি এর মাধ্যমে আমরা দেশের যে সিলিকার চাহিদা তা মেটাতে সক্ষম হবো।’

সাসটেইনেবল এনার্জি অ্যান্ড এগ্রো রিসোর্স লিমিটেডের (সিল) ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাসুদুর রহমান বাবু বলেন, ‘ইডকলের আর্থিক সহযোগিতায় আমাদের এ প্রজেক্ট। আমরা এ প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন ৫০০ কেজি সিলিকন পার অক্সাইড পাউডার তৈরি করছি। যেহেতু এটি দেশে পাওয়া যায় না আমদানি করা ছাড়া, তাই এর চাহিদা অনেক বেশি।’

মাসুদুর রহমান বাবু আরও বলেন, ‘আমরাই প্রথম দেশে তৈরি করছি সিলিকা। ধীরে ধীরে এর প্রোডাকশন আরও বাড়াবো। এক টন ক্যাপাসিটিতে আমরা খুব শিগগিরই যাবো। তারপরেও এর চাহিদা পূরণ হবে না। আমরা যদি দুই টন তৈরি করতে পারি, তাহলে কিছুটা চাহিদা পূরণ হবে। এতে ইটকল আমাদের আর্থিক সহযোগিতা করছে, পাশাপাশি যদি সরকারের সু-নজর আসে, তাহলে আরও উৎপাদন করে চাহিদা মেটানো সম্ভব।’

প্রকাশক ও সম্পাদক : মহিব্বুল আরেফিন
যোগাযোগ: ২৬৮, পূবালী মার্কেট, শিরোইল, ঘোড়ামারা, রাজশাহী-৬০০০
মোবাইল: ০৯৬৩৮ ১৭ ৩৩ ৮১; ০১৭২৮ ২২ ৩৩ ২৮
ইমেইল: [email protected]; [email protected]