শহরে পুকুর ভরাট করে বড় দালান, গ্রামে চাষের জমিতে পুকুর খনন

রাজ টাইমস | প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:৫৫; আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৩:০১

পুকুর ভরাট করে বহুতল ভবন (বাঁয়ে), গ্রামে চাষের জমি নষ্ট করে পুকুর খনন (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী শহরের জিরো পয়েন্টে ‘আরডিএ মার্কেট’। আশপাশে বড় কোনো জলাশয় না থাকায় সুউচ্চ ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে ফায়ার সার্ভিস। অথচ কয়েক দশক আগেও সেখানে বড়কুঠি নামে ২ দশমিক ১৩ একরের একটি পুকুর ছিল। অবৈধভাবে পুকুরটি ভরাট করে ভবনটি বানিয়েছে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে মোহনপুর উপজেলার মেইল বিল। বিলের পশ্চিম-দক্ষিণে বড় বড় তিনটি পুকুর। মাছ চাষের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য দুটি পুকুর কেটেছেন। অন্যটি তাঁর ভাইয়ের। বছর পাঁচেক আগেও সেখানে ধানি জমি ছিল। কৃষকদের আপত্তি সত্ত্বেও সেই জমি ইজারা নিয়ে কৃষিজমিতে পুকুর কেটেছেন সংসদ সদস্য।
শহর ও গ্রামের বিপরীতধর্মী এই কর্মকাণ্ডে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। শহরে পুকুর ভরাট করে বানানো হচ্ছে বড় বড় দালান। এতে রাজশাহী উত্তপ্ত হচ্ছে। ঝুঁকি বাড়ছে অগ্নিকাণ্ডের। বর্ষায় দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। অন্যদিকে কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় অবাধে কৃষিজমিতে পুকুর খনন চলছে। এতে কৃষিজমি কমার পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ বাড়ছে।

রাজশাহী নগরের কাজীহাটা এলাকায় নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজের পশ্চিমে মাঠের প্রথম অংশে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। কাশফুল-ঘাসে বাকিটা অরণ্য হয়ে গেছে। ছবি তুলতে দেখে স্থানীয় এক নারী বলে উঠলেন, ‘আবার পুকুর করবেন নাকি। কত মানুষ গোসল করেছে।’ স্থানীয় এক তরুণ একটি গাছ দেখিয়ে বললেন, ‘ওই গাছের ওপর থেকে নিচে পানিতে ঝাঁপ দিতাম।’ পুকুরটি ভরাটের পর বর্তমানের অবস্থা শুধুই মাঠ আর কাশফুলের অরণ্য।

প্রায় এক দশক আগে রাজশাহী শহরে ৯৫২টি পুকুর ছিল। এর মধ্যে ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত পুকুর ৪৮টি। সরকারি পুকুরের মধ্যে বৈধভাবে ৯টি ও অবৈধভাবে ৮টি ভরাট করা হয়েছে। এ ছাড়া বেশির ভাগ পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। অন্যদিকে অবাধে মাছের খামার করায় পাঁচ বছরে রাজশাহীতে ২২ হাজার হেক্টর আবাদি জমি কমে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে পুকুরে পানির সরবরাহ ঠিক রাখতে ভূগর্ভস্থ পানি তোলা হচ্ছে। এতে নেমে যাচ্ছে পানির স্তর। পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) গবেষণা অনুযায়ী, তিন বছরে রাজশাহী শহরে ২৪ ফুট এবং গ্রামে ২০ থেকে ৩৫ ফুট পর্যন্ত পানির স্তর নেমে গেছে।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (সংশোধিত)-২০১০ অনুযায়ী, জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট বা অন্য কোনোভাবে শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে জলাধার সম্পর্কিত বিধিনিষেধ শিথিল করা যেতে পারে। অন্যদিকে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০-এর বিধান অনুসারে ব্যক্তিগত পুকুরও জলাধারের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় তা ভরাট করা যাবে না।

শহরে ছিল ৯৫২ পুকুর
রাজশাহীতে পুকুর ভরাট ও দখল নিয়ে ২০১৪ সালে ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের’ পক্ষে হাইকোর্টে একটি রিট করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। সেই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে নগরে পুকুর গণনা করে বোয়ালিয়া ভূমি কার্যালয়। খতিয়ান, দাগ নম্বর, জমির পরিমাণসহ মোট ৯৫২টি পুকুরের তালিকা পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত পুকুর ৪৮টি। বাকিগুলো ব্যক্তিমালিকানাধীন।

ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৮ আগস্ট রাজশাহী শহরের পুকুরগুলো সংরক্ষণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। সিটি মেয়র, পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসক ও র‍্যাবকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ভরাট বন্ধ হয়নি। সম্প্রতি সংরক্ষিত ‘শুকনা দিঘি’ ভরাট করেছেন স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী। এ ছাড়া গত এক বছরে নগরের রামচন্দ্রপুর এলাকায় একটি, মেহেরচণ্ডী ও মোহনপুর এলাকায় দুটি পুকুরের কিছু অংশ ভরাট করতে দেখা গেছে।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ প্রথম আলোকে বলেন, রিটের পর হাইকোর্টের নির্দেশে পুকুরের তালিকা করে জেলা প্রশাসন। হাইকোর্ট পুকুরগুলো সংরক্ষণের নির্দেশ দিলেও ভরাট বন্ধ হয়নি। রিট চলাকালেও পুকুর ভরাট হয়েছে। এমনকি রিটের আদেশের পর শুকনা দিঘি ভরাট হয়েছে।

সরকারি ৪৮ পুকুরের অধিকাংশই ভরাট
২০১৪ সালে খাস খতিয়ানভুক্ত ৪৮টি পুকুরের সন্ধান পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১৯টি পুকুরে পানি আছে। বৈধভাবে অর্থাৎ প্রশাসনের অনুমোদনসাপেক্ষে ৯টি, আর অবৈধভাবে (খেয়ালখুশিমতো) ৮টি পুকুর ভরাট করা হয়েছে। ৪টি পুকুর সিটি করপোরেশনের দখলে ছিল। বাকি ৮টি পুকুর জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে।

অবৈধভাবে ভরাট করা আটটি পুকুরের মধ্যে পুলিশ লাইনসের ভেতরে দুটি পুকুর আছে। বোয়ালিয়া ক্লাবের সামনের পুকুর ভরাট করে রাজশাহী টেনিস কমপ্লেক্স করা হয়েছে। রাজশাহী আইন কলেজের সামনে পুকুরটি সিটি করপোরেশন বর্জ্য ফেলে ভরাট করেছে। পুকুর ভরাট করে বানানো হয়েছে ‘আরডিএ মার্কেট’। রাজশাহী চেম্বার ভবন একসময় পুকুর ছিল। নগরের লক্ষ্মীপুর কাঁচাবাজারের দক্ষিণে পুকুরটিও অবৈধভাবে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। পুকুরগুলো ভরাট হলেও জেলা প্রশাসন তেমন উদ্যোগ নেয়নি।

জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, শহরে পুকুর ভরাট বন্ধে জেলা প্রশাসন অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। এ বিষয়ে তাঁদের দুর্বলতা নেই। পুকুর ভরাট বন্ধে আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আদালত যেভাবে নির্দেশনা দেবেন, জেলা প্রশাসন সেভাবেই কাজ করবে।

২০ বছরের একটি মহাপরিকল্পনা করেছে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)। নগর-পরিকল্পনায় জলাধার থাকবে ৬০৪টি। সিটি করপোরেশনের মধ্যে পুকুরের সংখ্যা হবে দুই শতাধিক। যদিও শুকনা দিঘি আরডিএর পরিকল্পনায় নেই। জানতে চাইলে আরডিএর নগর পরিকল্পক (ভারপ্রাপ্ত) রাহেলুর ইসলাম বলেন, ওই পুকুরটি নেই। পাশে আরেকটি পুকুর আছে। মহাপরিকল্পনায় থাকা পুকুরগুলো ঠিক আছে কি না, তাঁরা যাচাই করে দেখছেন। তবে পুকুরের জায়গায় আরডিএ মার্কেটের বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলতে চাননি।

২২ সংরক্ষিত পুকুরেও মাটি
ভরাটের অভিযোগে ২০১৪ সালে পুকুরমালিকদের নোটিশ দিয়েছিল সিটি করপোরেশন। কিন্তু ভরাট বন্ধ হয়নি। ২০১৯ সালে ব্যক্তিমালিকানাধীন ২২টি পুকুর অধিগ্রহণ করে সংরক্ষণের মেগা পরিকল্পনা নেয় সিটি কর্তৃপক্ষ। পুকুরগুলো পার্কের মতো করে গড়ে তোলা হবে। ওই প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯৫ কোটি টাকা। কিন্তু পরিকল্পনা কাগজে-কলমেই থেকে গেছে। পুকুর ভরাট বন্ধ হয়নি।
সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম বলেন, ব্যক্তিগত পুকুর টিকিয়ে রাখতে হলে অধিগ্রহণ করা প্রয়োজন। সেই চিন্তা থেকেই ২২টি পুকুর সংরক্ষণের জন্য একটি তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম শরীফ উদ্দিন বলেন, পুকুর ভরাট করে ভবন নির্মাণ করতে গেলে অনেক অনাপত্তিপত্র নিতে হয়। কীভাবে তাঁরা এনওসি পান, উল্টো সেই প্রশ্ন রাখেন তিনি। তিনি বলেন, সবাই মিলে পুকুর রক্ষা করতে হবে। অন্যথায় রাজশাহী জলাধারশূন্য হয়ে পড়বে।

পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহীর উপপরিচালক মাহমুদা পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, পুকুর ভরাটের অভিযোগ পেলে তাঁরা সরেজমিনে তদন্ত করে শুনানিতে অংশ নেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তিনি বলেন, রাজশাহীতে পুকুর সংরক্ষণ নিয়ে হাইকোর্টের একটি আদেশের কথা তাঁরা শুনেছেন। কিন্তু দাপ্তরিকভাবে আদেশটি তাঁদের কাছে আসেনি বলে তিনি দাবি করেন।

উল্টো চিত্র শহরের বাইরে
শহরে পুকুর ভরাট হচ্ছে, উল্টো চিত্র রাজশাহীর উপজেলাগুলোতে। মাছ চাষের ‘সফলতার’ গল্প শুনিয়ে গ্রামে অবাধে চলছে পুকুর খনন। ক্ষমতাবান থেকে শুরু করে মাছচাষিদের অনেকেই পুকুর কেটেছেন। একসময়ের ধানি জমিতে এসব পুকুর কাটা হয়েছে। এক যুগে মোহনপুর ও পুঠিয়া উপজেলার অন্তত ২ হাজার হেক্টর জমিতে পুকুর কাটা হয়েছে।

পুঠিয়ার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের শক্তিপাড়া বিলে ৭০ শতাংশ জমি ছিল রাজশাহী মহানগর কমিউনিস্ট পার্টির সহসম্পাদক অজিত কুমার মণ্ডলের। ওই বিলে আগেই পাঁচটি পুকুর কাটা হয়। আশপাশে পুকুর হওয়ায় নিজের জমিতেও তিনি পুকুর কেটেছেন। তিনি বলেন, বিলে খুব অল্প জমি বাকি আছে। সেটুকুও যেকোনো সময় পুকুর হয়ে যাবে। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা খনন করছেন তা নয়, আশপাশে পুকুর হলে পাশের জমিতে ভালো ফসল হয় না। এ জন্য লাভের আশায় অনেকে পুকুর কাটছেন।

মোহনপুর উপজেলার মেইল বিলের পশ্চিম-দক্ষিণে বড় বড় তিনটি পুকুর। এর মধ্যে দুটি পুকুর স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. আয়েন উদ্দিনের। অন্যটি তাঁর ভাইয়ের। এলাকাবাসী জানান, বছর পাঁচেক আগে সেখানে ধানি জমি ছিল। সেই ধানি জমির আড়াই শ বিঘা জমিতে রাতারাতি পুকুর খনন করা হয়। পুকুর কাটায় শতাধিক কৃষকের আপত্তি সত্ত্বেও পুকুরগুলো কাটা হয়েছে।

সরেজমিনে পুকুরের প্রকৃত মালিকদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ৬০ বছর বয়সী এক কৃষক বলেন, তাঁর ৩০ শতাংশের বেশি জমি জোর করে পুকুর কাটা হয়েছে; কিন্তু তিনি টাকা পাননি। টাকা তিনি নেবেনও না। আয়েন উদ্দিনের পতনের পর জমি উদ্ধার করবেন। এখনো জমির খাজনা তিনিই দিচ্ছেন।

অভিযোগের বিষয়ে সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন বলেন, বিলের ওই জায়গায় পানি থাকত। ধান হতো না। তিনি কৃষকদের থেকে ১০ বছরের জন্য জমি ইজারা নিয়েছেন। তিনি বলেন, ওই জায়গায় আগে কিছুই ছিল না। এখন অন্তত সেখানে মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। কিছু মানুষ দোকান বসিয়ে বেচাকেনাও করছে।

পাঁচ বছরে পুকুরের পেটে যত জমি
সাল                   মাছের খামার
২০১৭                  ৩,৪৬২ হেক্টর
২০১৮                ১২,৩০৯ হেক্টর
২০২২                 ২৫,৩০৯ হেক্টর

পুকুর কেটে অনেকেই বিপাকে
পুঠিয়ার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া গ্রামে একটি খাল দিয়ে আত্রাই নদের পানি আসত। নদীতে পানি কমে যাওয়ায় খাল শুকিয়ে গেছে। ওই এলাকায় অন্তত ২৫টি পুকুর খনন করা হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পুকুরগুলোতে পানি থাকছে না। বাধ্য হয়ে ডুবো (সাবমার্সিবল) পাম্পের সাহায্যে প্রায় প্রতিটি পুকুরে ভূগর্ভস্থ পানি তোলা হচ্ছে। কোথাও কোথাও পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানিও উঠছে না।

গত ৬ আগস্ট সাতবাড়িয়ার রুইয়ের বিলে বড় একটি পুকুরে গিয়ে দেখা গেছে, পাম্প দিয়ে পানি দেওয়া হচ্ছে। এ প্রতিবেদককে দেখে পাম্পটি বন্ধ করে দেন তদারককারী এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, পুকুরে পানি কমে যাওয়ায় পানি গরম হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য পানি দিতে বলেছেন মালিক।

মাছচাষি স্বপন কুমার বছরে ৩৫ হাজার টাকায় জমি ইজারা নিয়ে কয়েকটি পুকুর কেটেছেন। তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে তাঁর একটি পুকুরে মেশিনে পানি উঠছে না। পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। পানি না থাকলে পুকুর অকেজো হয়ে পড়বে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

পুকুর নেই, পুকুর আছে
পানি ধরে রাখার জন্য জলাশয়ের প্রয়োজন। সেটা শহরে কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে গ্রামে পুকুর খনন করে মাছ চাষ চলছে। সেই পানিতে মাছের খাবার দেওয়ায় তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। খামারিরা ভূগর্ভস্থ পানি তুলে পুকুরে দেওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ বাড়ছে।

মাহবুব সিদ্দিকী নদী নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি হেরিটেজ রাজশাহীর প্রতিষ্ঠাতা। মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। অনেক অকেজো প্রকল্প হচ্ছে। কিন্তু পুকুর রক্ষায় কোনো প্রকল্প হচ্ছে না। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় রাজশাহী সিটি করপোরেশন ও আরডিএ শহরের দেড় শতাধিক পুকুরমালিকের কাছ থেকে কিনে নিতে পারেন। এ জন্য একটা মহাপরিকল্পনা দরকার।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, একদিকে শহরে জলাশয় কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে গ্রামে পুকুর খনন করে মাছ চাষ চলছে। সেই পানিতে মাছের খাবার দেওয়ায় সেটি আবার ব্যবহার করা যাচ্ছে না। উল্টো খামারিরা দিনরাত ভূগর্ভস্থ পানি তুলে পুকুরে দিচ্ছেন। এতে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ বাড়ছে। তিনি বলেন, প্রতিবছর সাধারণত এক ফুট করে স্তর নেমে যায়। গত বছর হঠাৎ দুই ফুট নেমে গেছে। এবার বৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে পানির স্তর আরও নেমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

করণীয় জানতে চাইলে অধ্যাপক সারওয়ার বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে প্রাকৃতিক উৎসের পানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। বৃষ্টির পানি জমা রাখতে হবে। তিনি বলেন, একটি শহরে যদি ৬৫ ভাগে মানুষ, শিল্পকারখানা, রাস্তাঘাট থাকে, তাহলে অন্তত ৩৫ ভাগ পানির সবুজ স্তর, বনায়ন দরকার। এটি থাকলে সেই শহর বসবাসযোগ্য হবে। এ জন্য রাজশাহী শহরে পানি ধরে রাখার পুকুর, জলাশয় ভালো করে সংরক্ষণ করতে হবে।

সূত্র: প্রথম আলো



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top