দু’বার টিকা নেয়ার পরও আক্রান্ত

রাজশাহীতে ভীতিকর করোনা পরিস্থিতি; ১৩ দিনে মৃত্যু ১২৫

বিশেষ প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ১৪ জুন ২০২১ ০২:৫১; আপডেট: ১৪ জুন ২০২১ ১৮:৪১

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ওয়ার্ডে স্থান না পেয়ে বারান্দায় অপেক্ষামান করোনা রোগী ও স্বজনরা।

রাজশাহীতে ভীতিকর করোনা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। চলতি মাসের ১ থেকে আজ পর্যন্ত করোনায় সংক্রামিত এবং উপসর্গ নিয়ে ১২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে আজ রোববারই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ১৩ জনের মৃত্যু হয়। এদিকে দু’বার টিকা নেয়ার পরও অনেকে আক্রান্ত হবার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মানাকেই শেষ ভরসা হিসেবে দেখছে রাজশাহী স্বাস্থ্য বিভাগ। বর্তমানে এখানে করোনা শনাক্তের হার ৪১ দশমিক ১৮ শতাংশ।

তথ্য উপাত্ব থেকে দেখা গেছে, গতকয়েকদিন ধরে সারাদেশে করোনা ভাইরাসে সংক্রামিত হয়ে দৈনিক মৃত্যু ও শনাক্তের হার বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৪৭ জন মারা যান। যা পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ ৪৭ জনের মধ্যে শুধুমাত্র রাজশাহীতে মারা গেছেন ১৩ জন। আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে একদিনে শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৪৩৬ জন। রাজশাহী বিভাগে রাজশাহীর দুইটি ল্যাবে চার জেলার মোট ৬৫২ জনের নমুনার মধ্যে করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে ২৪৩ জনের। শনিবার দিবাগত রাতে দুইটি পিসিআর ল্যাবের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল থেকে জানা যায়, আগের দিনের চেয়ে করোনা শনাক্তের হার কম হলেও এদিন ৪১ দশমিক ১৮ শতাংশ সংক্রামিত হবার প্রবনতা রয়েছে। এর আগের দিন শনিবার ছিল ৫৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

রাজশাহীতে বিরাজ করছে ভীতিকর করোনা পরিস্থিতি। হাসপাতালের বারান্দায় অবস্থান করা করোনা রোগী।

এদিকে চলতি মাসের শুরুতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোগীর সংক্রামিত ও মৃত্যুর হার বেশী ছিলো। কিন্তু গেলো কয়েকদিনে সে চিত্র পাল্টে যাচ্ছে। তথ্য সূত্র বলছে, এখন সবচেয়ে বেশি রোগী মারা যাচ্ছেন রাজশাহী জেলার। তবে আজ রোববার মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা বেশী থাকলেও আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে রাজশাহীর হার বেশী।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘন্টায় মৃত ১৩ জনের মধ্যে ৬ জনের করোনা পজেটিভ ছিল। বাকিরা উপসর্গ নিয়ে মারা যান। মৃতদের মধ্যে ১২ জন পুরুষ ও একজন মহিলা রয়েছে। এদের মধ্যে রাজশাহীর দুইজন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছয়জন, নওগাঁর তিনজন, নাটোরের একজন ও কুষ্টিয়ার একজন। মারা যাওয়া করোনা শনাক্তদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচজন ও নওগাঁর একজন। গত ১ জুন সকাল ৬টা থেকে ১৩ জুন সকাল ৬টা পর্যন্ত হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা যাওয়া ১২৫ জনের মধ্যে ৭০ জনই মারা গেছেন করোনা শনাক্ত হওয়ার পর এবং বাকিরা উপসর্গ নিয়ে মারা যান।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনা রোগীর তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

বর্তমানে হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী ভর্তি হন ৪২ জন। আর ২৭১ বেডের বিপরীতে রোগী ভর্তি রোগী আছেন ২৯৪ জন। অতিরিক্ত রোগীদের বিকল্পভাবে বেড বাড়িয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। নতুন রোগীদের মধ্যে রাজশাহীর ২৭ জন, চাঁপাইনবাগঞ্জের সাতজন, নাটোরের তিনজন ও নওগাঁর পাঁচজন রয়েছেন। ভর্তি ২৯৪ জনের মধ্যে রাজশাহীর ১৩০, চাঁপাইয়ের ১০৮, নাটোরের ১৪, নওগাঁর ২৮, পাবনার চার ও কুষ্টিয়ার একজন রয়েছেন। হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন ১৮ জন।
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাইয়ুম তালুকদার গণমাধ্যম কে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মাস্কই টিকা। মাস্ক পরা আর স্বাস্থ্যবিধি মানা ছাড়া করোনা থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই। অনেকে দুবার টিকা নেওয়ার পরও আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, করোনার এই পরিস্থিতিতে তাঁরা মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন। মাস্ক না পরলে, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে খুব শিগগির আরও কঠোর বিধিনিষেধ আসবে।

এদিকে জেলা প্রশাসনের একজন দ্বায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, মানুষ স্বাস্থ্য বিধির নির্দেশনা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। বিকালের পর যে কঠোর বিধিনিষেধ সেটি নিশ্চিত করার জন্য জেলা প্রশাসন সর্বাত্বক চেষ্টা করছেন। এখন সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি উপর বিবেচনা করে প্রয়োজনে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, দেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। কয়েক মাস সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার ঊর্ধ্বগতিতে থাকার পর অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তবে চলতি বছরের শুরুতে করোনাভাইরাসের প্রকোপ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও গত মার্চ মাস থেকে মৃত্যু ও শনাক্ত আবারও বাড়তে থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনো দেশে টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়। সে হিসেবে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেই বলা হয়।

করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ রোধে রাজশাহী নগরীতে চলছে কঠোর লকডাউন। সাতদিনের এই লকডাউনের তৃতীয় দিনে রোববার নগরীতে মানুষের চলাচল একটু বেশি দেখা গেছে। তবে লকডাউন বাস্তবায়নে নগরজুড়ে বাড়তি তৎপরতা দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে।

 




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top