বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন

এক বছরেই সোয়া লাখ আমানতকারী হারাল আর্থিক প্রতিষ্ঠান

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:৫৫; আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:৩৭

ছবি: সংগৃহীত

ঋণ অনিয়ম, চেয়ারম্যান-এমডি অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের কারণে ধুঁকছে দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (এনবিএফআই)। এতে আর্থিক এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে চরম আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। এর ফলে এসব প্রতিষ্ঠান এখন আমানতের সঙ্গে আমানতকারীও হারাতে শুরু করেছে। বছরের ব্যবধানে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আমানতকারী খোয়া গেছে প্রায় ১ লাখ ২৮ হাজার জন। আর মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে এ সংখ্যা কমেছে প্রায় ২৬ হাজার জন। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে মানুষের কাছে আস্থা আগেই হারিয়ে ফেলেছে। এখন উচ্চ মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা। এতে জীবনযাপনের খরচ বেড়ে গেছে, কমছে প্রকৃত আয়। এসব কারণে আমানত ও ব্যক্তি আমানতকারীর হিসাব কমেছে। এ ছাড়া আমানত ও ঋণের ক্ষেত্রে সুদের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়ার কারণেও কমতে পারে বলে তারা জানান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতকারী ৫ লাখ ৭০ হাজার ১৯৬ জন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৪২ হাজার ২৭৯ জন। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে এসব প্রতিষ্ঠান আমানতকারী হারিয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৯১৭ জন। শুধু তাই নয়, চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠান আমানতকারী হারিয়েছে ২৫ হাজার ৭৮২ জন। গত জুন শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানতকারীর পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৬১ জন।

তবে আশার দিক হচ্ছে, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত কিছুটা বাড়ছে। গতবছরের সেপ্টেম্বরে এসব প্রতিষ্ঠানের আমানতের পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত বেড়েছে ৩ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। আর তিন মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত বেড়েছে মাত্র ৩৭ কোটি টাকা। গত জুন শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত ছিল ৪৪ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। তিন মাসে আমানত বেড়েছে শূন্য দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।

এদিকে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গত তিন মাসে কোটিপতি আমানতের পরিমাণও কমেছে। একই সময়ে এসব প্রতিষ্ঠানে কোটি টাকার হিসাব বেড়েছে। তথ্য বলছে, গত জুনে দেশের কোটি টাকার হিসাব ছিল ৯ হাজার ১০৪টি। সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ২৬৫টিতে। অর্থাৎ তিন মাসে কোটি টাকার হিসাব বেড়েছে ১৬১টি। তবে এই সময়ে কোটি টাকার হিসেবে অর্থ কমেছে ১২ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা। গত জুনে কোটি টাকার হিসেবে আমানত ছিল ৩৭ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন কালবেলাকে বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতকারী কমে যাওয়ার দুটি কারণ। প্রধান কারণ হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুশাসন নেই। ধীরে ধীরে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। পাশাপাশি ঋণ কেলেঙ্কারিসহ নানা ঘটনা তো আছে। এজন্য আমানতকারীদের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। আর অন্যটি হচ্ছে, দেশের মূল্যস্ফীতির কারণে মধ্যবিত্ত শ্রেণি কষ্টে আছে। তাদের আয় বৃদ্ধি না পাওয়ায় তারা আমানত তুলে হিসাব বন্ধ করে দিচ্ছেন।

আমানত বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি সকলের জন্য সমস্যা নয়। দ্রব্যের মূল্য বাড়লে ব্যবসায়ীদের আয় বাড়ে। এজন্য তাদের আমানতও বেড়েছে। আর ছোট আমানতকারীদের আয় কমায় তারা হিসাব বন্ধ করেছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বিএলএফসিএর চেয়ারম্যান ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোম্পানির (আইআইডিএফসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. গোলাম সরওয়ার ভূঁইয়া কালবেলাকে বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানতকারী কমলেও আমানত বেড়েছে। এর কারণ ব্যাংক তাদের সুদের হার বাড়িয়েছে। পাশাপাশি ট্রেজারি বন্ডে সুদের হার অনেক বেশি হওয়ায় আমানতকারীরা সেদিকেই ঝুঁকছে। এ ছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা তো আছেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুন শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ৭২ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে ঋণ বেড়েছে ৮৯৯ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ২৪ শতাংশ।

বর্তমানে দেশে ৩৫টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি সরকারি, ১২টি দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানায় এবং বাকিগুলো দেশীয় ব্যক্তিমালিকানায় পরিচালিত। এর মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি বাদে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান রয়েছে তারল্য সংকটে। অবস্থা এমন পর্যায়ে যে, আমানতকারীদের টাকাও ফেরত দিতে পারছে না কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে অন্তত ১০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা এখন নাজুক।




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top