দেশে আসতে শুরু করেছে রমজানের ভোগ্য পণ্য

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:৩৫; আপডেট: ১৭ মে ২০২৪ ১৩:৩৩

ছবি: প্রতীকী

আগামী এপ্রিলে রমজান শুরু হচ্ছে, তার আগেই ব্যবসায়ীদের গুদামে পৌঁছতে শুরু করেছে আমদানি করা ভোগ্য পণ্য। সব পণ্য গুদামে পৌঁছতে মার্চের মধ্যভাগ পর্যন্ত সময় লাগবে। তবে চট্টগ্রাম বন্দরে কোনো ধরনের জট না থাকায় এবার বেশ নির্বিঘ্নে ভোগ্য পণ্য আমদানি করে জাহাজ থেকে নামিয়ে নিজেদের গুদামে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে বন্দর ঘিরে তাঁদের বাড়তি পরিবহন খরচ করতে হয়নি।

ব্যবসায়ীদের হিসাবে এবার রমজানের প্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্য, যেমন—ছোলা, ভোজ্য তেল, চিনি ও মসুর ডালের প্রচুর সরবরাহ আছে। আমদানির পথে আছে আরো অনেক। ফলে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহে কোনো ঘাটতি সমস্যা নেই। এর পরও রমজানে ভোগ্য পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকবে কি না, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

খাতুনগঞ্জের বড় ভোগ্য পণ্য আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের আবুল বশর চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এবার আন্তর্জাতিক বাজারে অনেকগুলো ভোগ্য পণ্যের দাম চড়া ছিল, সঙ্গে মার্কিন ডলারের বিনিময়মূল্যও বেশি ছিল। ফলে বেশি দামে কিনতে হয়েছে এসব পণ্য। এর পরও আমদানি ঠিক আছে, সরবরাহও ভালো। ফলে আগামী রমজানে দামে খুব বেশি হেরফের হবে বলে মনে হচ্ছে না। ’ তিনি বলছেন, ‘এবার কিন্তু বাজারে বেচাকেনা একেবারেই নেই। কেন যেন মনে হচ্ছে ভোগ্য পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় লোকজন খাওয়া-কেনা কমিয়েছে। তা না হলে এই সময়ে পাইকারিতে বেশ ভালো রকম বেচাকেনা শুরু হয়। এখন তার কোনো লক্ষণই তো দেখছি না। ফলে ভোগ্য পণ্যের দাম এখনো পাইকারিতে অনেক কম। ’

রমজানের বাজার নিয়ে খাতুনগঞ্জের আড়তদার সোলায়মান বাদশা বলছেন, ‘শবেবরাতের কয়েক দিন আগে মূলত বেচাকেনা শুরু হলেও এখন থেকে কিছু বিক্রি হয়। কিন্তু এবার সেটিও দেখছি না। এখন ভোজ্য তেল ছাড়া অন্য কোনো পণ্যের দাম বাড়তি নেই। তবে বাজারে সরবরাহ একেবারেই স্বাভাবিক; বন্দর দিয়ে প্রচুর পণ্য আড়তে আসছে। ফলে রমজানের বাজার খুব অস্থির হবে বলেও মনে হচ্ছে না। ’

ভোজ্য তেল নিয়ে এরই মধ্যে বাজারে টালমাটাল অবস্থা। ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার অজুহাতে অন্তত আট দফা দাম বাড়িয়েছেন। ফলে রমজানে ভোজ্য তেলের বাজার কেমন থাকে এ নিয়ে ভয় রয়েছে।

তবে রমজানের আরেক পণ্য ছোলার বাজারে দাম নিম্নমুখী। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাড়তি চাহিদা থাকে বলেই অন্তত দুই মাস আগে থেকেই রমজানের প্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্য আমদানি করে মজুদ করে থাকেন ব্যবসায়ীরা। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে ব্যবসায়ীরা এবারও রমজানের আগে পণ্য আনতে শুরু করেছেন। অন্য রমজানের চেয়ে এবার ব্যতিক্রম হচ্ছে, করোনার কারণে গত বছরের অবিক্রীত বিপুল ভোগ্য পণ্য গুদামেই রয়েই গেছে; তার ওপর পণ্য আমদানিও স্বাভাবিক আছে। পর্যাপ্ত আমদানির পরও শেষ পর্যন্ত ছোলার দাম স্থিতিশীল থাকবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কা রয়েছে।

খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক পায়েল ট্রেডার্সের মালিক আশুতোষ মহাজন বলছেন, অনেক আমদানিকারকের ছোলা এখন চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে জাহাজ থেকে নামছে। এতে বাজারে একসঙ্গে প্রচুর ছোলা এসেছে; আর আগের বছরেরও অবিক্রীত প্রচুর ছোলা রয়ে গেছে। ফলে বাজার একেবারেই মন্দা। রমজান পর্যন্ত এই দাম হয়তো থাকবে না। তবে খুব বেশি বাড়বে বলেও মনে হয় না।

তিনি বলেন, ‘গত বছরও আমরা সর্বোচ্চ ৬৫ টাকা দরে অস্ট্রেলিয়ার ছোলা বিক্রি করেছি। এখন সেই ছোলা আড়তে বিক্রি করছি প্রায় ৬২ টাকা দরে। যে পরিমাণ ছোলা আমদানি হয়েছে, তাতে দাম বাড়া দূরে থাক, আরো কমে যেতে পারে। ’

রমজানে চিনির চাহিদা কম থাকে। ফলে দাম বাড়ার কথা নয়। তবে গত কয়েক মাসে চিনির দাম বেড়ে গিয়ে এখন স্থির হয়ে আছে। নতুন করে দাম বাড়েনি। খাতুনগঞ্জে বর্তমানে প্রতি মণ (৩৭.৩২ কেজি) চিনি বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৬০০ টাকা দরে, যা এক মাস আগেও বিক্রি হয়েছিল প্রায় কাছাকাছি দামে, দুই হাজার ৫০০ টাকায়। কিন্তু ছয় মাস আগে এই চিনি বিক্রি হয়েছিল দুই হাজার ১০০ টাকায়। সেই হিসেবে ছয় মাসের ব্যবধানে পাইকারিতে চিনির দাম বেড়েছে প্রতি মণে ৪০০ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে এখন চিনির দাম কমলেও এর সুফল দেশে পড়েনি।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top