হাইব্রিড কই এখন গলার কাঁটা
রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:৪৮; আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:০৫

চাচুড়ী বিলপাড়ের কৃষ্ণপুর গ্রামের লিটন সরকার। মৎস্য বিভাগের অনুপ্রেরণায় ২০১৭ সালে প্রথমে হাইব্রিড কই চাষ শুরু করেন। পরের বছর আরো ৮টি ঘেরসহ মোট ১০টি ঘেরে এই মাছ চাষ করেন। ২০১৮-১৯ সালে বছরে ৪ হাজার মণ কই উৎপাদন করে বেশ লাভবান হয়েছিলেন।
কিন্তু করোনাকালে গুনতে শুরু করেছেন লোকসান। ২০২০-২১ এই দুই বছরে লোকসান গুনেছেন ৩০ লাখের বেশি টাকা। লিটনের মতো চাচুড়ী বিলের ৩০০ মৎস্যচাষিসহ জেলার সাত শতাধিক চাষি দুই বছরে নিঃস্ব হয়ে মাছ চাষ ছেড়ে দিয়েছেন।
মৎস্য বিভাগের অনুপ্রেরণায় ২০১৪ সালে হাইব্রিড কৈ মাছের চাষ শুরু করেন নড়াইল জেলার মৎস্যচাষিরা। অল্পদিনে হাজারো কৃষক লাভের আশায় হাইব্রিড কৈ চাষ শুরু করেন। তবে করোনাকালে খাবারের দাম বৃদ্ধি, খারাপ চারা মাছ আর মাছের দাম পড়ে যাওয়ায় দুই বছর ধরে পথে বসতে চলেছে জেলার প্রায় ৭০০ কইচাষি। হাজারো একর ঘের পতিত পড়ে আছে। দুই বছরে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা।
এদিকে ব্যবসায়ীর দোকানে সাত লাখ টাকা দেনা ঘাড়ে নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন দাড়িয়াঘাটা গ্রামের যুবক মৎস্যচাষি রাজিব মোল্যা। তিন বছর আগে দুটি ঘের লিজ নিয়ে হাইব্রিড কই চাষ শুরু করেন তিনি, প্রথম বছর পাঁচ লাখ আর পরের বছর সাত লাখ টাকা লোকসান দিয়ে তিনি মাছচাষ ছেড়ে দিয়েছেন, নিজের কিছু জমি বেচে টাকা শোধ করলেও খাবার আর মাছের চারার টাকা পরিশোধ করতে পারেননি।
এলাকার বিভিন্ন খাবার এবং ওষুধের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রত্যেক মৎস্যচাষি লাখ লাখ টাকা দেনা। চাচুড়ী বাজারের বৃহৎ মৎস্য খাবার ব্যবসায়ী ইবারত হোসেনের বকেয়া প্রায় ১০ কোটি টাকা আর খসরুজ্জামান নামের আরেকজনের দেনা দুই কোটির ওপরে।
মৎস্যচাষিদের অভিযোগ, দিনের পর দিন নিম্নমানের মাছের চারার কারণে উৎপাদন কম হওয়ার ফলে লোকসানের হার বেড়েছে।
জেলা মৎস্য বিভাগের কাছে হাইব্রিড কই চাষের সঠিক কোনো তথ্য নেই। সংশ্লিষ্টদের হিসাব অনুযায়ী ২০১৮-১৯ সালে দৈনিক প্রায় ৩০ টন কই মাছ নড়াইলের বিভিন্ন ঘের থেকে উৎপাদন হতো। যা কমে এখন দৈনিক উৎপাদন দুই টনের নিচে। দুই বছরে লোকসানের পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা, পতিত পড়ে আছে হাজারো মাছের ঘের।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এইচ এম বলেন, আমাদের লোকবলের অভাব রয়েছে, কালিয়া উপজেলায় একজন মাত্র মৎস্য কর্মকর্তা, তার সহযোগী কেউ নেই, তাই সঠিকভাবে তদারকি করা সম্ভব হয়নি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: