প্লিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিন !

মুহা. আবুযর গিফারী মোল্লা | প্রকাশিত: ১৪ জুন ২০২১ ০৩:৪২; আপডেট: ১৪ জুন ২০২১ ০৩:৪২

ফাইল ছবি

বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সম্প্রসারণের সূচনা পর্বেই বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়। ২০২০ সালের ৮ই মার্চ দেশে প্রথম করোনা ভাইরাস সনাক্ত হয়। ১৬ মার্চ সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর সরকারী পর্যায় থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সময় লাফিয়ে লাফিয়ে দীর্ঘায়িত করা হয়।

অদ্যাবধি বাংলাদেশের সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। এর মধ্যে অবশ্য কওমি মাদ্রাসায় কিছুদিন পাঠদান কার্যক্রম চলমান ছিল। বর্তমানে তাও বন্ধ।

সরকারী সিদ্ধান্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার বিষয়ে কিছু যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে। তা হলো, সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হয় তবে দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের করোনা সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

স্কুল কলেজ খোলা থাকলে শিক্ষার্থীরা সামাজিক দূরত্ব না মেনে শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করবে। অল্প জায়গায় বেশি মানুষ জমায়েত হবে। এতে স্বাস্থ্যঝুকি তৈরী হবে। এসব যুক্তি সরকারের। তার মানে সরকার চাইছে করোনা মহামারির সময়ে যেন সমাবেশ বা গণজমায়েত না হয়। মানুষ একসাথে একই স্থানে যেন অবস্থান না করে।

কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন খবরের মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ এবং গণজমায়েতের আয়োজন হচ্ছে। কোন কোন স্থানে চলছে আবার দলীয় প্রচার প্রচারণা। এমন কি ঘটা করে মাছধরা, ধানকাটার উৎসব আয়োজন করা হচ্ছে। পাশাপশি গণসচেতনতা তৈরীতে গণজমায়েত করে বিটপুলিশিং কার্যক্রম চলছে। অপর দিকে থেমে নেই বিনোদন কেন্দ্র বা পার্ক, দর্শনীয় স্থান, পর্যটন স্পটে জনসমাগম। অবারিত আকাশ পথের পাশাপাশি চলছে দূর পাল্লার বাস, ট্রেন, নৌযান। 

তবে শুধু বন্ধ হয়ে আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা। পাশাপাশি গবেষকদের গবেষণার। দেশে অন্যসব সেক্টরের মানুষ স্বাস্থ্যবিধি জানে, বোঝে, মানে এমন ভাবছে সরকারের মধ্যে থাকা একটি মহল। সরকারকে বোঝানো হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মানতে পারবেনা। ভাবটি এমন তারা স্বাস্থ্যবিধি জানেনা, বোঝেনা, মানবেনা?

দেখা যাচ্ছে, ঝরেপড়া শিক্ষার্থীরা পোশাক শিল্পে কাজ নিয়েছে। পোশাক শিল্প চলছে বিরামহীন ভাবে। বিষটি দাঁড়ালো- পড়শোনার মাঝপথে জীবিকার সন্ধানে যেয়ে মেধাহীনরা হয়ে গেল স্বাস্থ্য সচেতন। এখন প্রশ্ন উঠে কোন যুক্তিতে এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে?

বলা হচ্ছে দেশে করোনা সংক্রমণ পাঁচ শতাংশের কম হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার আগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনা হবে। কিন্তু দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোন উদ্যোগ আছে কি? বাস চলছে, স্বাস্থ্যবিধির কোন মনিটরিং নেই? হাট বাজার চলছে, স্বাস্থবিধির মনিটরিং নেই?

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য ভ্যাকসিনই যদি মূল বিষয় হয়ে থাকে তবে দ্রুত তার ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে একটি জাতি মেধা শূন্য হবার পাশাপাশি অর্থনৈতিক এবং সামাজিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। কারণ ইতোমধ্যে বেসরকারী অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বিপুল একটি জনগোষ্ঠী রাতারাতি বেকার হয়ে কর্মহীন জীবন জাপন করছেন।আবার অনেক শিক্ষকতা বেতন পাচ্ছেন না নিয়মিত।  তাই অনতিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে শিক্ষা ব্যবস্থাকে সচল করে দুর্ভোগে পড়া শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের অর্থিক এবং মানষিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করবেন। এ বিষয়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে বেরিয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ এখন সময়ে দাবী। 

লেখক: মুহা. আবুযর গিফারী মোল্লা
সহাকারী শিক্ষক- প্রফেসর এম ই এইচ আরিফ উচ্চবিদ্যালয়
কালিয়াকৈর, গাজীপুর।।

 



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top