নববর্ষ উদযাপনের শুরু কিভাবে?

রাজ টাইমস | প্রকাশিত: ২ জানুয়ারী ২০২২ ১০:২২; আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৪ ২১:৩৭

ছবি: প্রতীকী

পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বছর। আমদের দেশে বাংলা, ইংরেজি ও হিজরি এই তিনটি সনের প্রচলন থাকলেও ঘটা করে শুধু বাংলা আর ইংরেজি নববর্ষ পালন করা হয়। অনেকে ধর্মীয় বিবেচনায় আরবি বা হিজরি নববর্ষও পালন করেন। তবে সারা বিশ্বে বেশ আয়োজন করে পালন করা হয় শুধু ইংরেজি বছরের শুরুর দিন। নানান উৎসব আর আয়োজনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বরণ করে নেওয়া হয় নতুন বছরকে।

কিন্তু এই নববর্ষ পালন করা বা উদযাপন করা শুরু হয়েছিল কখন থেকে জানেন কি?

আধুনিক গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ও জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে শুরু হয় নতুন বছর। তবে নিউ ইয়ার সেলিব্রেশনের প্রথম রেকর্ড পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ সহস্রাব্দের কাছাকাছি সময়ে ব্যাবিলনে। সে উৎসব ব্যাবলিনীয়রা পালন করত বসন্তে, মার্চের শেষভাগে যখন বিষুব অঞ্চলে দিন ও রাত সমান দৈর্ঘ্যে উপনীত হতো।

দিনটি তারা স্মরণীয় করে রাখত ‘আকিতু’ নামে জাঁকজমকপূর্ণ এক ধর্মীয় উৎসব আয়োজনের মাধ্যমে। ব্যাবিলনীয়নদের পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, আকাশের দেবতা মারদুক এক ভীষণ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে সমুদ্রের পিশাচিনী তিয়ামাতকে পরাজিত করেন। ব্যাবিলনীয়দের আকিতু উৎসব ছিল সে বিজয়গাথাকে স্মরণ করার উৎসব। এটিকেই তারা নববর্ষ হিসেবে পালন করত।

উৎসবটির রাজনৈতিক তাৎপর্যও কম ছিল না। এদিন নতুন ব্যাবিলনীয় রাজাকে মুকুট পরিয়ে দেওয়া হতো অথবা পুরাতন রাজার শাসনকে প্রতীকীভাবে নবায়ন করা হতো। বছর গণনা সম্পর্কে এখানে একটি তথ্য তুলে ধরা প্রয়োজন। রোমান ক্যালেন্ডারকে সূর্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করতে জুলিয়াস সিজার তাতে অতিরিক্ত ৯০টি দিন যোগ করেছিলেন। এভাবেই জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের উদ্ভব হয়।

এ রকমই প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাসে বিভিন্ন সভ্যতার বিভিন্নভাবে দিনপঞ্জি প্রণয়নের নিদর্শন পাওয়া গেছে। তবে সব সভ্যতায় একটি ব্যাপারে মিল ছিল, বছরের প্রথম দিন কিংবা মাস নির্ধারণ করা হতো নবান্নের বা নতুন ফসল তোলার দিন-তারিখের সঙ্গে মিল রেখে। ব্যতিক্রমও যে ছিল না, তেমন কিন্তু নয়! প্রাচীন মিসরে বছরে সর্বশেষ বার নীলনদের বান ডাকলে পরে আয়োজন করা হতো নববর্ষের, কাকতালীয়ভাবে ওই সময়টি ছিল লুব্ধক নক্ষত্রের উদয়কাল। চৈনিকরা শীতকাল শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় পূর্ণ চন্দ্রের দিনে নববর্ষ পালন করত।

তবে ইংরেজি নতুন বছর উদযাপনের ধারণাটি আসে খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ অব্দে। তখন মেসোপটেমিয় সভ্যতার (বর্তমান ইরাক) লোকেরা নতুন বছর উদযাপন শুরু করে। তারা তাদের নিজস্ব গণনা বছরের প্রথম দিন নববর্ষ উদযাপন করতো। তবে রোমে নতুন বছর পালনের প্রচলন শুরু হয় খ্রিষ্টপূর্ব ১৫৩ সালে। পরে খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ অব্দে সম্রাট জুলিয়াস সিজার একটি নতুন বর্ষপঞ্জিকার প্রচলন করেন। যা জুলিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত।

রোমে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের অন্তর্গত বছরের প্রথম দিনটি জানুস দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়। জানুস হলেন প্রবেশপথ বা সূচনার দেবতা। তার নাম অনুসারেই বছরের প্রথম মাসের নাম জানুয়ারি নামকরণ করা হয়। এতো গেলো যিশুর জন্মের আগের কথা। যিশুখ্রিষ্টের জন্মের পর তার জন্মের বছর গণনা করে ১৫৮২ সালে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি এই ক্যালেন্ডারের নতুন সংস্কার করেন। যা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত। বর্তমানে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই কার্যত দিনপঞ্জি হিসেবে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হয়।

আনুষ্ঠানিকভাবে নিউ ইয়ার বা ইংরেজি নববর্ষ পালন শুরু হয় ১৯ শতক থেকে। নতুন বছরের আগের দিন অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর হচ্ছে নিউ ইয়ার ইভ। এদিন নতুন বছরের আগমনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ। আমাদের দেশেও এর উত্তেজনা ছড়িয়েছে বেশ কিছু বছর হলো।

এদিকে ইংরেজি নতুন বর্ষ পালনে ব্যতিক্রমও রয়েছে। যেমন ইসরায়েল, দেশটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করলেও ইংরেজি নববর্ষ পালন করে না। আবার কিছু দেশ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকে গ্রহণই করেনি। যেমন সৌদি আরব, নেপাল, ইরান, ইথিওপিয়া ও আফগানিস্তান। এসব দেশও ইংরেজি নববর্ষ পালন করে না।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top