চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে বিতর্কের ঝড় কী বার্তা দিচ্ছে?

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১১:২৮; আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৪ ১৫:৩২

বাংলাদেশে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে ব্যাপক বিতর্কের ঝড় উঠেছে।
নির্বাচনে একজন প্রার্থী প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে অশ্লীল আচরণের করার অভিযোগ করেছেন। তিনি একটা সাধারন ডায়েরি করেছেন বলে জানিয়েছেন।

আরেকজন প্রার্থীর নামে টাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ এনে স্ক্রিনশট দেখানো হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে।

যদিও এই প্রার্থী এখন বলছেন অভিযোগটি ভুয়া এবং তিনি সাইবার ক্রাইম ইউনিটে মামলা করবেন।

এছাড়া আরও নানা অভিযোগ উঠেছে ছোট এই নির্বাচনকে ঘিরে।

অশালীন মন্তব্য করার অভিযোগ অভিনেত্রী নিপুনের

২৮ শে জানুয়ারি বাংলাদেশের শিল্পী সমিতির নির্বাচনে অভিনেত্রী নিপুন আকতার এবারের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করেন। একই প্যানেলে ছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন সভাপতি পদে।

ইলিয়াস কাঞ্চন জিতে যান। কিন্তু নিপুন আকতার হেরে যান। এরপর নিপুন একের পর এক অভিযোগ আনেন।

তার যে অভিযোগটি চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে সেটি হল এই নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে যিনি দায়িত্ব পালন করেছেন সেই পীরজাদা শহীদুল হারুনের বিরুদ্ধে তিনি অশালীন মন্তব্য করার অভিযোগ করেছেন।

নিপুন আকতার ৩০ জানুয়ারি ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে বলেন " সকাল বেলা তিনি (পীরজাদা শহীদুল হারুন) আমার দুই গালে দুইটা কিস চাচ্ছে। সেখানে আমার দুইজন নারী প্রার্থী ছিল। আমার উচিত ছিল তার ঐ দুই গালে দুইটা চড় মারা। যেটা আমি করি নাই। উনি যখন এই কথাটা বলেছে তখন আমার ঐ দুই নারী প্রার্থী দেখেছে। তখনি আমার চড় মেরে নির্বাচন বন্ধ করে দেয়া উচিত ছিল।"

তিনি বলেন, তার মনে হয়েছে আগে এই অভিযোগগুলো সংবাদমাধ্যমে আসা উচিত।

নিপুন আকতার বলেছেন বনানী থানায় তিনি একটা জিডি বা সাধারণ ডায়েরি করেছেন তার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে।

এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পীরজাদা শহীদুল হারুন সংবাদমাধ্যমে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন "অভিযোগটা মিথ্যা, এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। দুষ্টুমি বা মজা করেও তিনি এমন কোন কথা বলেন নি বলে দাবি করেন।"

জায়েদ খানের বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে ভোট কারচুপির অভিযোগ:

অভিনেতা এবং সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের বিরুদ্ধে নির্বাচনের দিন ভোটারদের টাকা দিয়ে ভোট কেনার ব্যাপারেও অভিযোগ উঠে।

মোবাইলের মেসেঞ্জারের টাকা লেনদেন সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি বার্তার স্ক্রিনশট অভিনেত্রী নিপুন আকতার সাংবাদিকদের দেখান।

এতসব অভিযোগ নিয়ে সাংবাদিকদের জায়েদ খান বলেন "সম্পূর্ণ বানোয়াট একটা ক্লোন করে আমার একটা ছবি দিয়ে একটা প্রোফাইল খুলে স্ক্রিনশটগুলো রেডি করে ছেড়ে দিয়েছেন। আমি খুব দ্রুত ঐদিনই সাইবার ক্রাইমের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমি স্ক্রিনশট পাঠিয়ে দিয়েছি। তারা কাজ করছে। সাইবার ক্রাইম যেন খুঁজে বের করে কারা আসলেই এই কাজ গুলো করেছে। প্রয়োজনে আমি মামলা পর্যন্ত করবো।"

"অপর প্রান্ত থেকে যখন রিপ্লাই দিচ্ছে তার নাম, নম্বর, ছবি কিছু নেই। এটা সুপার এডিটেড।" তিনি বলেন তারা বিরুদ্ধে "তথ্য-সন্ত্রাস" করা হচ্ছে।

কেন এই পরিস্থিতি?

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির এই নির্বাচনে বিজয়ীদের কার্যকাল ২০২২ থেকে ২০২৪। এখানে মোট ভোটার ছিল ৪২৮জন।

এর মধ্যে ভোট ৩৬৫টি ভোট পড়ে। ছোট এই নির্বাচনকে ঘিরে গত প্রায় মাস খানেক ধরে বাংলাদেশে চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন বা বিএফডিসি ছিল শিল্পীদের পদচারণায় মুখর।

এর আগে কয়েকটি নির্বাচনে দুই দফায় সভাপতি পদে মিশা সওদাগর এবং সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খান নির্বাচন হয়ে আসছিলেন।

কিন্তু এবারের নির্বাচনের আগে দেখা যায় এই প্যানেলের বিরুদ্ধে নানা ধরণের অভিযোগের সুর।

বিশেষ করে জায়েদ খানের বিপক্ষে প্রকাশ্যে অনেক অভিনেতাকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

অভিনেত্রী সাদিকা পারভিন পপি দীর্ঘদিন ক্যামেরার অন্তরালে রয়েছেন।

সেই পপি নির্বাচনের কয়েকদিন আগে একটি ভিডিওতে ইলিয়াস কাঞ্চন এবং নিপুন প্যানেলকে স্বাগত জানান।

একই সঙ্গে তৎকালীন কমিটির একজনের নাম প্রকাশ না করে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন। তিনি বলেন তার মত তিন বার জাতীয় চলচ্চিত্র পাওয়া শিল্পী নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন চলচ্চিত্র থেকে।

তার এই ভিডিও ব্যাপক ভাইরাল হয়। অভিযোগের তীর উঠে জায়েদ খানের বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, এই সমিতি বা এফডিসির কাজের জবাবদিহিতার কোন জায়গা নেই। তারা চলচ্চিত্রের উন্নতির কথা কখনো ভাবে না। শুধু নিজেদের পদ ধরে রাখতে চায়।

ছোট্ট একটা সমিতি সেটা নিয়ে কেন এত আলোচনা এবং এ থেকে বিএফডিসির কী চিত্র উঠে এসেছে?

এমন প্রশ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন,ফিল্ম এন্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক এ জে এম শফিউল আলম ভূইয়া মনে করেন এবারের নির্বাচন দৃষ্টি কেড়েছে দুটি কারণে।

প্রথমত: তারকা-মূল্য এবং সামাজিক মাধ্যমে তারা খোলামেলা কথা বলেছেন। দ্বিতীয়ত, আগের সমিতি কতটা কাজ করেছে, প্রকৃত শিল্পীরা কে কোথায় আছেন,তাদের খোঁজ খবর না নেয়া - এসব কিছু মানুষের নজর কেড়েছে।

"এই বিষয়গুলো যদি সত্যি হয়, তাহলে তা পুরো পরিবেশ সম্পর্কে একটা বিরূপ ধারণা তৈরি করে। এসব কিছু এফডিসির কর্তৃপক্ষের দেখা উচিৎ ছিল।"

এই নির্বাচনের মাধ্যমে এফডিসির নাজুক অবস্থা সামনে চলে এসেছে" বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, "এফডিসি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। অনুদান থেকে টাকা কমিয়ে পরীক্ষামূলক ভাবে প্রনোদনা দিয়ে এফডিসি সিনেমা বানাতে পারে। অনেক নির্মাতা টাকা নিয়ে সঠিকভাবে খরচ করেন না। প্রনোদনা দেবে যারা ভালো সিনেমা বানায় তাদের। বছরে ১০ থেকে ১২টা ভালো চলচ্চিত্র করতে পারলে মানুষ দেখবে। এফডিসি একটা কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেব দাঁড়াবে।"



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top