আজ সুন্দরবন দিবস

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:১১; আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৭:১৩

ছবি: সংগৃহীত

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুন্দরবন সংলগ্ন অঞ্চলে বাড়ছে খাবার পানির সংকট। সুপেয় পানির অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন সাধারণ মানুষ। একই সঙ্গের প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা মিঠা পানির জলাধারগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় বনের প্রাণীদেরও পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সরকার নানা উদ্যোগের কথা বললেও বাস্তবে টাকার অভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন চলছে খুবই ধীর গতিতে। এমনই এক পরিস্থিতি সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দেশে পালিত হচ্ছে সুন্দরবন দিবস।

২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের আওতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রূপান্তর ও পরশের উদ্যোগে এবং দেশের আরও ৭০টি পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহণে প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সুন্দরবন দিবস’ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই প্রতি বছর দেশে সুন্দরবন দিবস পালিত হয়ে আসছে।

পরিবেশ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সুন্দরবনের পানি সংকট কাটাতে ৮৪টি পুকুর খনন ও পুনঃখনন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বসবাস। এই প্রকল্পের আওতায় বন্যপ্রাণীর দীর্ঘদিনের সুপেয় মিঠা পানির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বনজীবী ও পর্যটকদের খাবার পানির জন্য ৪টি নতুন পুকুর খনন ও ৮০টি পুকুর পুনঃখনন করার কথা। জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে ৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয়ে এসব পুকুরের মধ্যে ৭০টিতে নির্মাণ করার কথা পাকা ঘাট। পুরাতন পুকুরগুলো ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ভরাট হয়ে যাওয়ায় বছরের পর বছর ধরে বাঘ-হরিণসহ বন্যপ্রাণী সাধারণত সুপেয় পানি সংকটের মধ্যে থাকে।

এই প্রকল্পের পরিচালক ও বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার জানান, সুন্দরবনে এ প্রকল্প ৩টির কাজ শেষ হলে ইকোট্যুরিজমের উন্নয়ন ও দীর্ঘদিন ধরে বাঘ-হরিণসহ বন্যপ্রাণীর সুপেয় পানি সমস্যার বহুলাংশের সমাধান হবে। অবকাঠামোগত সমস্যা অনেক কমে আসার পাশাপাশি ম্যানগ্রোভ বনের প্রাণপ্রকৃতি নিয়ে ইকোলজিক্যাল মনিটরিং সিস্টেমের মাধ্যমে গবেষণা করে সমস্যা সমাধান করা সহজতর হবে।

মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পটি চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে শেষ হবার কথা থাকলেও শেষ হবে কিনা তা অনিশ্চিত। কারণ এই প্রকল্পের অর্থছাড়ের বিলম্ব হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এক চতুর্থতাংশ টাকা ছাড় হয়েছে। এতে বড় জোর ২৫ ভাগ কাজ হতে পারে।


এ বিষয়ে মিহির কুমার বলেন, আমাদের ৮০টি পুকুর খনন ও পুনঃখনন কাজের ২৫ ভাগের মতো হয়েছে। এখনও কাজ চলমান। তবে কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে হলে দ্রুত অর্থছাড় প্রয়োজন।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বাপার (বাংলাদেশে পরিবেশ আন্দোলন) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, সুন্দরবন বরাবরই অবহেলার জায়গায়। শুধু সুপেয় পানি নয় সবক্ষেত্রেই এর প্রাণ ও প্রতিবেশ রক্ষায় সরকারের নেওয়া বেশিরভাগ প্রকল্পের অবস্থা এমনই। তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরেই সুন্দরবন বাঁচানোর আন্দোলন করে আসছি। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর জন্য কয়লা যখন নদী দিয়ে আনা হবে তখনও নদীর পানি দূষণের শিকার হবে। সুন্দরবনকে বাঁচাতে হলে আসলে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা করা জরুরি।’

ভালবাসা দিবস আর পহেলা ফাল্গুনের আড়ালে ঢেকে যাওয়া এই সুন্দরবন দিবস উদযাপন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি। তারা যৌথ উদ্যোগে আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি “সুন্দরবন দিবসে সুন্দরবনের গল্প” শীর্ষক এক ওয়েবিনারের আয়োজন করেছে। ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করবেন বাপা ও সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সভাপতি, সুলতানা কামাল। এতে বক্তব্য রাখবেন বাপার সহ-সভাপতি, ড. নজরুল ইসলাম, সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. আব্দুল মতিন, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি’র সদস্য সচিব, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরীসহ আর‌ও অনেকে।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top