মাঙ্কিপক্স কতটা ভয়ের, আক্রান্ত হলে কী করবেন

রাজ টাইমস | প্রকাশিত: ২৪ মে ২০২২ ০৬:১৪; আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:১০

কঙ্গোয় মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত এক যুবকের ফুসকুড়ির নমুনা নিচ্ছেন চিকিৎসাকর্মীরা। ছবি: এএফপি

কোভিড-১৯ মহামারির আতঙ্ক পুরোপুরি না কাটতেই মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন উদ্বেগ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ২০ মে দেয়া বিবৃতি অনুসারে, ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে প্রায় ৮০টি নিশ্চিত সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সন্দেহভাজন আরও ৫০ রোগী পর্যবেক্ষণে আছেন। মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

তবে মাঙ্কিপক্স কোনো নতুন রোগ নয়। ভাইরাসজনিত রোগটির প্রাদুর্ভাব পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে মাঝেমধ্যেই দেখা যায়। এবার ইউরোপ ও আমেরিকাতেও বেশ কয়েকজন এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এ কারণে ভাইরাস ছড়ানোর গতি বেড়েছে কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় বিশেষজ্ঞরা।

ইউরোপে ডব্লিউএইচওর আঞ্চলিক পরিচালক হ্যান্স ক্লুগ বলেছেন, ‘আমরা গ্রীষ্ম মৌসুমে প্রবেশ করছি, এর সঙ্গে গণজমায়েত, উৎসব ও পার্টির সংখ্যা বাড়ছে। এতে সংক্রমণের হার বাড়তে পারে বলে আমি উদ্বিগ্ন।’

এর আগে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ঠেকাতেও কঠোর লকডাউন ও গণজমায়েত নিয়ন্ত্রণের কৌশল অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছিল ডব্লিউএইচও। তবে তীব্র অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে বিশ্বের প্রতিটি দেশই পরে সেই পথ থেকে সরে আসে। পাশাপাশি বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, খোলা এলাকার পরিবর্তে আবদ্ধ পরিবেশেই করোনা ভাইরাসের কার্যকারিতা ও বিস্তার বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঙ্কিপক্সের বিস্তারের ধরন পর্যালোচনায় বোঝা যায় বিশ্বজুড়ে নতুন মহামারি সৃষ্টির আশঙ্কা বলতে গেলে নেই। তবে মাত্র বছর দুয়েক আগে কোভিড-১৯ মহামারির কারণেই রোগটি নিয়ে বাড়তি ভীতি তৈরি হয়েছে। তারা বলছেন, মাঙ্কিপক্সে শারীরিক জটিলতার মাত্রাও বেশ কম। কিছু বিরল ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি গুরুতর অসুস্থতার মুখে পড়তে পারেন।

কোন ভাইরাস দায়ী

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, বিরল রোগ মাঙ্কিপক্সের জন্য দায়ী ভাইরাসটির নাম মাঙ্কিপক্স ভাইরাস। এটি পক্সভিরিডাই পরিবারের অর্থোপক্সভাইরাস গণের অন্তর্গত। এই অর্থোপক্সভাইরাস গণের মধ্যেই রয়েছে ভ্যারিওলা ভাইরাস, যা গুটিবসন্তের জন্য দায়ী। আবার এই গণের অন্তর্ভুক্ত ভ্যাক্সিনিয়া ভাইরাস গুটিবসন্তের টিকা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণেই মাঙ্কিপক্সের ক্ষেত্রে গুটিবসন্তের মতো উপসর্গ দেখা যায়।

আফ্রিকা মহাদেশের ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোয় (ডিআরসি) ১৯৭০ সালে প্রথম একটি শিশুর দেহে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ শনাক্ত হয়। শিশুটিকে শুরুতে গুটিবসন্ত আক্রান্ত বলে সন্দেহ করছিলেন চিকিৎসকেরা।

অবশ্য মানুষের সংক্রমণ ধরা পড়ার এক যুগ আগে ১৯৫৮ সালে প্রথম মাঙ্কিপক্স শনাক্ত করেন বিজ্ঞানীরা। সেবার ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোয় গবেষণার জন্য আটকে রাখা বানরের দেহে গুটিবসন্তের মতো রোগের সংক্রমণ ধরা পড়ে। পরীক্ষা করে দেখা যায়, ওই রোগের জন্য দায়ী ভাইরাসটি গুটিবসন্তের ভাইরাসের চেয়ে কিছুটা আলাদা। আর এর পরই ভাইরাসটির নাম দেয়া হয় মাঙ্কিপক্স।

ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোয় মানুষের দেহে ভাইরাসটির সংক্রমণ শনাক্তের কিছুদিনের মধ্যে মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকান আরও অনেক দেশ যেমন ক্যামেরুন, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, কোত ডে ভোয়া, গ্যাবন, লাইবেরিয়া, নাইজেরিয়া, রিপাবলিক অফ দ্য কঙ্গো এবং সিয়েরা লিওনে মাঙ্কিপক্সের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। বেশির ভাগ সংক্রমণের ঘটনা অবশ্য ঘটেছিল ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোয়।

ছয় দশকেরও বেশি আগে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হলেও এর প্রাকৃতিক পোষক সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত নন। কেউ কেউ ধারণা করেন, আফ্রিকান ইঁদুর বা বানরজাতীয় প্রাণী ভাইরাসটির পোষক হতে পারে। আর সেসব প্রাণী থেকেই মাঙ্কিপক্স মাঝেমধ্যে মানুষে সংক্রমিত হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বেশ কিছু প্রাণীকে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের পোষক হিসেবে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে। এর মধ্যে আছে দুই প্রজাতির কাঠবিড়ালি (রোপ স্কুইরেল ও ট্রি স্কুইরেল), গাম্বিয়ান পাউচড ইঁদুর, ডর্মিস এবং বানর।

সংক্রমণ

মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের ঘটনা সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যায় ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোয়। এ ছাড়া মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন দেশেও এই রোগের অস্তিত্ব রয়েছে। আফ্রিকার দেশগুলোয় ভ্রমণ ও আমদানি করা প্রাণীর মাধ্যমে বিশ্বের আরও কিছু দেশে বিভিন্ন সময়ে মাঙ্কিপক্সের অল্পবিস্তর সংক্রমণ দেখা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয় ২০০৩ সালে। টেক্সাসে ঘানা থেকে আমদানি করা পশুর একটি চালান থেকে ভাইরাসের সংক্রমণের ওই ঘটনা ঘটেছিল বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে গত বছরের নভেম্বর ও জুলাইয়েও মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়।

১৯৭০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আফ্রিকার ১১টি দেশে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৯৬-৯৭ সালে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোয় বেশ বড় একটি প্রাদুর্ভাব ঘটে। তবে আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুহার ছিল বেশ কম। ২০১৭ সালে নাইজেরিয়ায় ৫০০-র বেশি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হন। সেখানে মৃত্যুর হার ছিল প্রায় ৩ শতাংশ। নাইজেরিয়া থেকে ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে ২০১৮ সালে ইসরায়েল, যুক্তরাজ্য ও সিঙ্গাপুরেও মাঙ্কিপক্সের বিস্তার ঘটেছিল।

মাঙ্কিপক্সের ভাইরাসের সঙ্গে গুটিবসন্তের ভাইরাসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় গুটিবসন্তের টিকা দুটি ক্ষেত্রেই সুরক্ষা দিতে পারে। তবে ১৯৮০ সালে গুটিবসন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মূলের ঘোষণা দেয়ার পর বিভিন্ন দেশে এই টিকাদান বন্ধ রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এই সুযোগে মাঙ্কিপক্স জনস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে সক্রিয় অর্থোপক্স ভাইরাস হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) তথ্য অনুযায়ী, মাঙ্কিপক্স সংক্রমিত কোনো প্রাণীকে স্পর্শ করলে বা সেটি কামড় দিলে অথবা ওই প্রাণীর রক্ত, শরীরের তরল, ফোসকা স্পর্শ করলে মানুষে এই ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে।

সংক্রমিত প্রাণীর মাংস ভালোভাবে রান্না না করে খেলেও মানুষ মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হতে পারে। এ ছাড়া সংক্রামিত প্রাণীর চামড়া বা পশম স্পর্শের মাধ্যমে সংক্রমণের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না এনএইচএস।

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস বলছে, মাঙ্কিপক্সের কারণে ফুসকুড়িতে আক্রান্ত ব্যক্তির পোশাক, বিছানা বা তোয়ালে স্পর্শ করা যাবে না। এ ছাড়া মাঙ্কিপক্সজনিত ফোসকা বা চলটা স্পর্শ না করার পাশাপাশি ফুসকুড়ি থাকা ব্যক্তির কাশি বা হাঁচি থেকে দূরে থাকতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, দীর্ঘক্ষণ আক্রান্ত ব্যক্তির মুখোমুখি অবস্থান করলে তার হাঁচি-কাশির ড্রপলেট বা অণুকণার মাধ্যমে সুস্থ ব্যক্তিও ভাইরাস আক্রান্ত হতে পারেন। এ কারণে স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীর পরিবারের সদস্যদের বাড়তি ঝুঁকি রয়েছে।

প্ল্যাসেন্টার মাধ্যমে মা থেকে ভ্রূণে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে। জন্মের সময় এবং পরে মায়ের সান্নিধ্যে থাকা সন্তানও ঝুঁকির বাইরে নয়।

সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকজনের ক্ষেত্রে শারীরিক মিলনের মাধ্যমে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বক্তব্যে রয়েছে অস্পষ্টতা।

ডব্লিউএইচওর ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক বা দূষিত পদার্থ স্পর্শের মতো ঘনিষ্ঠ সংযোগের (সংক্রমিত ত্বকের ক্ষত, নিঃশ্বাসের ড্রপলেট বা শরীরের তরল স্পর্শ) মাধ্যমে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ ঘটে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ডেভিড হেম্যানও সতর্ক করে বলছেন, ‘এখন যা ঘটছে বলে মনে হচ্ছে তা হলো এটি (মাঙ্কিপক্স ভাইরাস) যৌন ক্রিয়াকলাপ বা যৌনাঙ্গের মাধ্যমে কিছু মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। যৌনতার মাধ্যমে সংক্রমণের কারণেই সারা বিশ্বে ভাইরাসটির ছড়ানোর মাত্রা বেড়ে গেছে।’

তবে মাঙ্কিপক্স নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্যাক্টশিটে বলা হয়েছে, শারীরিক ঘনিষ্ঠতা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায় এমন ধারণাটি সুপরিচিত হলেও বিষয়টি নিয়ে এখনও অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। ঝুঁকির এই দিকটি ভালোভাবে বোঝার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।

লক্ষণ ও উপসর্গ

ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র বলছে, মাঙ্কিপক্সের ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পর প্রতিলিপি তৈরি করতে শুরু করে। এরপর রক্তের মাধ্যমে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণত সংক্রমণের এক-দুই সপ্তাহের আগে বাহ্যিক কোনো উপসর্গ দেখা যায় না।

মাঙ্কিপক্স ত্বকে গুটিবসন্তের মতো ক্ষত তৈরি করে, তবে লক্ষণগুলো সাধারণত গুটিবসন্তের তুলনায় মৃদু। আক্রান্তরা প্রাথমিকভাবে সাধারণ জ্বর ও মাথাব্যথায় ভুগতে পারেন। কারও কারও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। লক্ষণ প্রকাশের ১ থেকে ১০ দিন পর শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। ধীরে ধীরে তা পুঁজ ভরা ফোসকায় পরিণত হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্যাক্টশিটের তথ্য অনুযায়ী, মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের ইনকিউবেশন পিরিয়ড (সংক্রমণ থেকে উপসর্গের সূত্রপাত পর্যন্ত সময়ের ব্যবধান) সাধারণত ৬ থেকে ১৩ দিন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ৫ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত হতে পারে।

এতে বলা হয়েছে, ভাইরাস আক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে (সর্বোচ্চ ৫ দিন পর্যন্ত) জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা, লিম্ফ্যাডেনোপ্যাথি (লিম্ফ নোডের ফোলা), পিঠ ব্যথা, পেশিতে ব্যথা এবং প্রচণ্ড দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে। জলবসন্ত, গুটিবসন্ত বা হামের ক্ষেত্রে এ ধরনের সব লক্ষণ থাকলেও লিম্ফ্যাডেনোপ্যাথি দেখা যায় না।

জ্বরের এক থেকে তিন দিনের মধ্যে ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা যায়। কাঁধের চেয়ে মুখ ও হাতের দিকে ফুসকুড়ি থাকে বেশি। আক্রান্তদের শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করে ৯৫ শতাংশের মুখমণ্ডলে ফুসকুড়ি বেশি দেখা গেছে। এ ছাড়া হাতের তালু, পায়ের তলা, মুখের শ্লেষ্মা ঝিল্লি, যৌনাঙ্গ, এমনকি চোখের কর্নিয়াও আক্রান্ত হয়।

এই ফুসকুড়ি ধীরে ধীরে স্বচ্ছ তরলে পূর্ণ হয়, যা পরে পুঁজ তৈরি করে। সর্বশেষে চলটা শুকিয়ে ঝরে পড়ে। মাঙ্কিপক্সে শরীরে কয়েক হাজার পর্যন্ত ফুসকুড়ি তৈরি হতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে ত্বকের বড় অংশের চামড়া উঠে না যাওয়া পর্যন্ত ক্ষত সারে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মাঙ্কিপক্স সাধারণত আপনাআপনি সেরে যায়। রোগের লক্ষণের স্থায়িত্ব দুই থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত। ক্ষতের মাত্রা কতটা হবে, তা রোগীর স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে।

মাঙ্কিপক্স সেরে যাওয়ার পরও অনেকে ত্বকের অন্য সংক্রমণ, ব্রঙ্কোপনিউমোনিয়া, সেপসিস, এনসেফালাইটিস এবং কর্নিয়ার জটিলতায় ভুগতে পারেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বর্তমানে মাঙ্কিপক্সে মৃত্যুহার ৩ থেকে ৬ শতাংশ। তবে কিছু বিশেষজ্ঞের দাবি, এই হার ১ শতাংশের নিচে।

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ রিডিংয়ের সেলুলার মাইক্রোবায়োলজির সহযোগী অধ্যাপক সাইমন ক্লার্ক বলছেন, ‘যুক্তরাজ্যে পশ্চিম আফ্রিকার ভাইরাসের যে ধরনটি ছড়িয়েছে তাতে মৃত্যুহার প্রায় ১ শতাংশ। আফ্রিকার কঙ্গো অঞ্চলের আরেকটি ধরন রয়েছে যেটি প্রায় ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে মারাত্মক হতে পারে, তবে যুক্তরাজ্যে সেটি দেখা যায়নি।’

চিকিৎসা

মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের দুই-চার সপ্তাহের মধ্যে জটিলতাগুলো এমনিতেই সেরে যায়। এ সময়ে রোগীকে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বেশি করে তরল ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে। পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ ঠেকাতে লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসার ওপরও জোর দিচ্ছে তারা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, আক্রান্ত ব্যক্তিকে সেবা দেয়া স্বাস্থ্যকর্মী ও পরিবারের সদস্যদের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। এ জন্য তাদের বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে। সম্ভব হলে গুটিবসন্তের টিকা নিয়েছেন এমন স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঙ্কিপক্স আক্রান্তদের সেবায় নিয়োজিত করতে হবে।

বন্যপ্রাণী, বিশেষ করে অসুস্থ বা মৃত প্রাণীর মাংস, রক্ত এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। পশুর মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে ভালো করে সেদ্ধ করার পরামর্শও দেয়া হয়েছে।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top