পাকিস্তানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হলেই গ্রেফতার!

ডেস্ক নিউজ | প্রকাশিত: ১০ মে ২০২৩ ০৫:২৬; আপডেট: ১০ মে ২০২৪ ০৪:৫৪

সংগ্রহীত

ভাগ্যের লিখন পাকিস্তানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হলেই যেন গ্রেফতার হবে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং পিটিআই প্রধান ইমরান খানকে মঙ্গলবার ইসলামাবাদ হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে আধাসামরিক রেঞ্জার্স দ্বারা হেফাজতে নেওয়া হয়, যেখানে তিনি দুটি মামলার শুনানির জন্য এসেছিলেন।

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রীদের কারাগারে রাখার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের একটি টাইমলাইন প্রকাশ করা হলো যারা কোনো না কোনো সময় হেফাজতে কাটিয়েছেন।

১৯৬০- এর দশক

জানুয়ারী ১৯৬২: হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন (সেপ্টেম্বর ১৯৫৬-অক্টোবর ১৯৫৭)। তিনি জেনারেল আইয়ুব খানের সরকার দখলকে সমর্থন করতে অস্বীকার করেন। ইলেকটিভ বডিজ ডিসকোয়ালিফিকেশন অর্ডার (ঊনফড়) এর মাধ্যমে তাকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করা হয় এবং পরবর্তীতে ১৯৬০ সালের জুলাই মাসে তার বিরুদ্ধে ঊনফড় লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়। ১৯৫২ সালের পাকিস্তানের নিরাপত্তা আইনের অধীনে “রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ” এর অভিযোগ তুলে হোসেন শহীদকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বিচার ছাড়াই করাচির কেন্দ্রীয় নির্জন কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়।

১৯৭০- এর দশক
সেপ্টেম্বর ১৯৭৭: জুলফিকার আলী ভুট্টো ১৯৭৩ সালের আগস্ট থেকে ১৯৭৭ সালের জুলাই পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ সালের সেপ্টেম্বরে, একজন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যার ষড়যন্ত্রের জন্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। লাহোর হাইকোর্টের বিচারপতি খাজা মোহাম্মদ আহমদ সামদানি তাকে মুক্তি দিয়েছিলেন যিনি বলেছিলেন যে তার গ্রেপ্তারের কোনো আইনি ভিত্তি নেই, কিন্তু মার্শাল ল রেগুলেশন ১২ এর অধীনে তিনদিন পরে তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এই প্রবিধানটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে এমন একজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেয় যে দেশের নিরাপত্তা বিরোধী কাজ করছিল। এই আইনকে কোনো আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। ভুট্টোকে অবশেষে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় এবং ১৯৭৯ সালের ৪ এপ্রিল তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
১৯৮০- এর দশক

আগস্ট ১৯৮৫: বেনজির ভুট্টো দুইবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন (ডিসেম্বর ১৯৯৮-আগস্ট ১৯৯০ এবং অক্টোবর ১৯৯৩-নভেম্বর ১৯৯৬)। জিয়াউল হকের একনায়কত্বের অধীনে বেনজির বিরোধী নেত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি তার ভাইয়ের শেষকৃত্যের জন্য ১৯৮৫ সালের আগস্টে পাকিস্তানে আসেন এবং ৯০ দিনের জন্য তাকে গৃহবন্দী করা হয়। ১৯৮৬ সালের আগস্টে স্বাধীনতা দিবসের দিন করাচিতে একটি সমাবেশে সরকারের নিন্দা করার জন্য বেনজির ভুট্টোকে গ্রেপ্তার করা হয়।

১৯৯০ এর দশক
মে ১৯৯৮ : লাহোর হাইকোর্টের এহতেসাব বেঞ্চ বেনজির ভুট্টোর জন্য জামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

জুন ১৯৯৮ : পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি বেনজির ভুট্টোর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

জুলাই ১৯৯৮ : এহতেসাব বেঞ্চ বেনজির ভুট্টোর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

এপ্রিল ১৯৯৯ : বেনজির ভুট্টোকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং এহতেসাব বেঞ্চ তাকে সরকারি পদে থাকার অযোগ্য ঘোষণা করে। রায়ের সময় তিনি দেশে ছিলেন না এবং পরে উচ্চ আদালতের রায় বাতিল করা হয়।

অক্টোবর ১৯৯৯: এহতেসাব বেঞ্চ বেনজির ভুট্টোর সম্পত্তি সংক্রান্ত মামলায় আদালতে হাজির না হওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পুনরায় জারি করে।

২০০০- এর দশক
সেপ্টেম্বর ২০০৭ : নওয়াজ শরীফ ১৯৯৯ সালে জেনারেল পারভেজ মোশাররফ কর্তৃক নির্বাসিত হওয়ার পর পাকিস্তানে ফিরে আসেন। ইসলামাবাদে ফিরে আসার পর, বিমানবন্দরটি সিল করে দেওয়া হয় এবং নওয়াজকে ফেরার কয়েক ঘন্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়। সৌদি আরবের জেদ্দায় পাঠানো হয় তাঁকে । তার ১০ বছরের নির্বাসনের বাকি তিন বছর।

নভেম্বর ২০০৭ : বেনজিরকে জেনারেল মোশারফের স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে লং মার্চে নেতৃত্ব দেওয়া থেকে বিরত রাখতে পাঞ্জাবে পিপিপি সিনেটর লতিফ খোসার বাসায় এক সপ্তাহের জন্য গৃহবন্দী করা হয়েছিল।

জুলাই ২০১৮ : নওয়াজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং তার মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ সহ ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো (এনএবি) দ্বারা দুর্নীতির জন্য ১০ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছিল। হাইকোর্ট চূড়ান্ত রায় স্থগিত করলে দুই মাস পরে তিনি মুক্তি পান।

জুলাই ২০১৯: পিএমএল-এন-এর শহিদ খাকান আব্বাসি জানুয়ারী ২০১৭-মে ২০১৮ পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯ জুলাই, ১২-সদস্যের একটি ঘঅই টিম তাকে বহু বিলিয়ন রুপির আমদানি চুক্তি প্রদানের সময় দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছিল। তিনি সেইসময়ে পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রী ছিলেন। তাকে জামিন দেওয়া হয়েছিল এবং ২৭ ফেব্রুয়ারী,২০২০ তে আদিয়ালা জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।

২০২০ সাল

সেপ্টেম্বর ২০২০: পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, শেহবাজ শরীফকে ২৮ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়েছিল যখন লাহোর হাইকোর্ট এনএবি মানি লন্ডারিং মামলায় তার জামিন প্রত্যাখ্যান করেছিল। প্রায় সাত মাস পর তিনি লাখপত কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান।

মার্চ ২০২৩

পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ চেয়ারম্যান এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের জন্য দুটি পৃথক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল যখন তিনি একজন বিচারককে হুমকি দেয়া এবং তোশাখানা উপহার সংক্রান্ত মামলার কার্যক্রম এড়িয়ে যান। তার গ্রেপ্তারি ঠেকাতে জামান পার্কে খানের বাসার বাইরে জড়ো হয়েছিল দলীয় সমর্থকরা। নিরাপত্তা কর্মীরা বিক্ষোভকারীদের উপর কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপের সাথে বিক্ষোভ সহিংসতায় পরিণত হয়।

মে ২০২৩: আল কাদির ইউনিভার্সিটি ট্রাস্ট সম্পর্কিত একটি মামলায় দুর্নীতির অভিযোগে ৯ মে ইমরান খানকে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের প্রাঙ্গণ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সূত্র : ডন



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top