যুদ্ধবিরতির পরে হামাসের ভবিষ্যৎ কী?
রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:০৬; আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:৪১

যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ফের টহল দেওয়া শুরু করেছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। আর হামাসের এভাবে গাজার নিরাপত্তায় মনোনিবেশ করা ছিল ইসরাইলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গ্যাং ও সহযোগীদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা যে, তারাই এখনো যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনি উপত্যকাটি নিয়ন্ত্রণ করছে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজার জন্য ২০-পদক্ষেপের পরিকল্পনায় উল্লেখ আছে, গাজায় হামাসের কোনো সামরিক বা রাজনৈতিক ভূমিকা থাকবে না।
মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক লেখক ও দুই বইয়ের লেখক আজ্জাম তামিমি মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘হামাস পরাজিত হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত ইসরাইলকে হামাসের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে হয়েছে। আর নেতানিয়াহু হামাসকে ধ্বংস করার মূল লক্ষ্য অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছেন।’
তামিমি আরও বলেন, ‘তাহলে তারা কীভাবে আশা করতে পারে হামাস শেষ হয়ে যাবে? যেখানে হামাস পরাজিত হয়নি।’
নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ
যুদ্ধবিরতির পর হামাস গাজার সেসব অঞ্চলে নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে, যেসব এলাকা থেকে ইসরাইল সেনা সরিয়ে নিয়েছে।
প্রতিরোধ গোষ্ঠীটি ‘গ্যাং, ত্রাণ লুটপাটকারী ও ইসরাইলের সহযোগীদের’ বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে।
কয়েক দিনের মধ্যে হামাস বহু মানুষকে গ্রেফতার করেছে এবং কিছু মানুষ সংঘর্ষে নিহত হয়েছে। এছাড়া ইসরাইলকে সহযোগিতার অভিযোগে অন্তত ৮ জনকে জনসমক্ষে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
ফিলিস্তিনি বিশ্লেষক মুহাম্মাদ শেহাদা বলেছেন, হামাসের এসব কার্যক্রম একাধিক উদ্দেশ্য পূরণ করেছে। এগুলো হলো—
গাজার অর্থনীতি বিঘ্নিত করা গ্যাংকে নিয়ন্ত্রণে আনা, অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এবং অস্ত্রের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ফেরত পাওয়া।
শেহাদার মতে, ‘হামাসের দ্রুত নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা দেখিয়েছে, ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদেরকে সরানো সহজ হবে না।’
আজ্জাম তামিমি বলেন, ‘হামাসই একমাত্র শক্তি, যাকে গাজার মানুষ আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য বিশ্বাস করে।’
অস্ত্র নিয়ে প্রশ্ন
হামাস বহুদিন ধরেই বলছে, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের অস্ত্র হস্তান্তর করবে না।
হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাসেম নাইম বলেছেন, ‘কেউ আমাদের অধিকার কেড়ে নিতে পারবে না।’
হামাসের আরেক কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজ্জাল বলেছেন, ‘অস্ত্র হস্তান্তরের প্রকৃতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘আপনি যে অস্ত্রত্যাগের কথা বলছেন, তা কী বোঝায়? অস্ত্র কার কাছে হস্তান্তর করা হবে?’
এর আগে আরব কূটনৈতিকরা মিডল ইস্ট আইকে জানিয়েছেন, ‘মধ্যস্থকারীরা হামাসের সঙ্গে আলোচনা করছে যাতে অস্ত্রগুলো আরব শান্তিরক্ষীদের হাতে হস্তান্তর করা যায়।’
রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ
ফিলিস্তিনি এ গোষ্ঠী জানিয়েছে, শুধু গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের শর্তে তারা যুদ্ধ বন্ধ করবে।
গাজার হামাস নেতা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ‘যদি প্রয়োজন হয়, তারা আরও দীর্ঘ সময় যুদ্ধ চালানোর জন্য প্রস্তুত।’
চলতি বছরের শুরুর দিকে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, হামাস দখলকৃত পশ্চিম তীর এবং গাজার কিছু সমর্থন হারিয়েছে। ‘ তবে সমর্থন হারানোর পরও তাদের জনপ্রিয়তা প্রতিদ্বন্দ্বী ফাতাহ’র চেয়ে বেশি।
বেশিরভাগ ফিলিস্তিনি হামাসের অস্ত্রত্যাগের বিষয়টির বিরোধিতা করে এবং অনেকেই এখনও সশস্ত্র প্রতিরোধের ওপর বিশ্বাস রয়েছে।
শেহাদা বলেন, ‘হামাস হলো একটি সরকার, একটি রাজনৈতিক দল, একটি সশস্ত্র প্রতিরোধ দল, এবং একটি নাগরিক সমাজের অংশ। মানুষ হামাসের একটি রূপকে সমর্থন করতে পারে, অন্য রূপকে নাও সমর্থন করতে পারে। ’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘হামাস একদিকে জনপ্রিয়, অন্যদিকে অজনপ্রিয়ও।’
কিছু মানুষ, এমনকি হামাসের নিজেদের সদস্যরাও ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের আকস্মিক হামলা, যুদ্ধ পরিচালনা, আলোচনায় পারফরম্যান্স এবং ফিলিস্তিনি পুনর্মিলন আলোচনা নিয়ে সমালোচনা করেছেন।
‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং হামাস: অ্যান্ড হোয়াই দ্যাট ম্যাটারস’ বইয়ের সহ-লেখক হেলেনা কোব্যান বলেন, ‘হামাসের আলোচকরা ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনার শুধুমাত্র প্রথম ছয়টি মূল পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করেছে। বাকি ১৪টি পয়েন্টের বিষয়ে তারা কিছু বলেনি, কেউ কল্পনা করতে পারবে না যে, ভবিষ্যতে গাজার শাসনে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না।’
কোব্যান উল্লেখ করেছেন, ‘ইসরাইল কেবল হামাস যোদ্ধাদের নয়, বরং গাজার ভিতরে ও বাইরে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যক্তিত্বদেরও লক্ষ্য করে যুদ্ধ করেছে।’
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: