ভারতকে দুষছে আরব বিশ্ব

মহানবীকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য

রাজ টাইমস | প্রকাশিত: ৭ জুন ২০২২ ০৪:১৬; আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৪১

ছবি: সংগৃহীত

উপসাগরীয় মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে ভারত। মহানবী (সা.)-কে নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-এর মুখপাত্রের বিরুদ্ধে ইসলামবিদ্বেষী ও বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগ ওঠার পর এই বিরোধ দেখা দিয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এখবর জানিয়েছে।

দলের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র নুপুর শর্মা, দিল্লি শাখার মিডিয়া প্রধান নবীন কুমার জিন্দালকে বরখাস্ত করেছে বিজেপি। তাদের বিতর্কিত মন্তব্য মধ্যপ্রাচ্যে ভাইরাল ও কূটনৈতিক ক্ষোভের মুখে পড়ার পর দলটি এই পদক্ষেপ নেয়।

কাতার, কুয়েত, ইরান, সৌদি আরব, ওমান, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান বিজেপি নেতার বিতর্কিত মন্তব্যকে ‘অপমানজনক’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

দশ দিন আগে ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল টাইমস নাউ ওয়ান-এ নুপুর শর্মা মুসলিম মুসল্লী ও মহানবী (সা.)-কে বিতর্কিত মন্তব্য ও বিতর্কে মুসলিম প্রতিদ্বন্দ্বীকে ব্যঙ্গ করেন। মন্তব্যটি নিয়ে বিক্ষোভের মধ্যেই জিন্দাল টুইটারে মহানবী (সা.) নিয়ে একটি টুইট করেন। পরে তিনি তা মুছে ফেললেও এটিও ক্ষোভের কারণ হয়েছে।

কাতারে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দীপক মিত্তালকে ডেকে পাঠায় কাতার। এসময় তাকে একটি সরকারি নোট হস্তান্তর করা হয়েছে। সেখানে মুহাম্মদ (সা.)-এর বিরুদ্ধে ভারতের ক্ষমতাসীন দলের দুই নেতা-নেত্রীর মন্তব্য কারণে অসন্তোষের কথা বলা হয়েছে এবং বিতর্কিত মন্তব্যের সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান ও নিন্দা প্রকাশ করা হয়েছে।

এই মন্তব্যের জন্য কাতার ভারত সরকারের কাছ থেকে জনসাধারণের উদ্দেশ্যে ক্ষমা এবং অবিলম্বে নিন্দা প্রত্যাশা করছে, এই ধরনের ইসলাম বিরোধী মন্তব্যের কারণে শাস্তি না হওয়া মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য একটি গুরুতর বিপদ এবং তা আরও কুসংস্কারের দিকে ঠেলে দিতে পারে। যা ক্রমশ সহিংসতা ও ঘৃণার চক্র তৈরি করবে। এছাড়া এই ধরণের অপমানজনক মন্তব্য ধর্মীয় বিদ্বেষের উসকানি দেবে এবং সারা বিশ্বের দুই বিলিয়নেরও বেশি মুসলমানকে ক্ষুব্ধ করবে।’

কাতারের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ললওয়াহ আল-খাতের বলেছেন, ভারতে ইসলামবিদ্বেষী আলোচনা বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছেছে।

কুয়েতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সিবি জর্জকে তলব করেছে। বিজেপি’র মুখপাত্র কর্তৃক অপমানজনক বক্তব্যের স্পষ্ট প্রত্যাখ্যান ও নিন্দা জানাতে তাকে তলব করা হয়েছিল।

ওমানের গ্র্যান্ড মুফতি আহমদ বিন হামাদ আল-খলিল ভারতের ক্ষমতাসীন দলের মুখপাত্রের বক্তব্যের কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি মহানবী (সা.)-কে নিয়ে নুপুর শর্মার বক্তব্যকে উদ্ধত এবং অশ্লীল অভদ্রতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

ভারতীয় পণ্য বর্জনের একটি আহ্বান উপসাগরীয় দেশগুলোতে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। উপসগারী দেশগুলো ভারতের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও জ্বালানী অংশীদার। বিজেপি সরকার এই বিতর্কিত মন্তব্যকে দলের ‘প্রান্তিক উপাদানের মন্তব্য’ বলে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। ভারত দাবি করেছে, এই মন্তব্যগুলো কোনোভাবেই ভারত সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলন করে না।

বিজেপি তাৎক্ষণিকভাবে দুই মুখপাত্রকে বরখাস্ত করেছে এবং বলেছে, যারা অপমানজনক মন্তব্য করেছে তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

তবে অনেক বিশ্লেষক ইঙ্গিত দিচ্ছেন, এই দুই নেতা তাদের মন্তব্যের জন্য কোনও শাস্তির মুখোমুখি হননি। উল্টো, যে সাংবাদিক এই ইসলামবিদ্বেষী মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরেছেন তাকে গ্রেফতারের জন্য বিজেপি সমর্থকরা দাবি তুলেছেন।

ভারতের ডানপন্থী নিউজ টেলিভিশন চ্যানেলে বিজেপি সমর্থকদের মুসলিমবিরোধী বক্তব্য প্রায়ই প্রকাশিত হয়। এসব ক্ষেত্রে মন্তব্যকারীদের পক্ষ থেকে ক্ষমা বা বক্তব্য প্রত্যাহারের ঘটনা খুব বিরল।

এই ঘটনায় ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির উত্তেজনা সামনে আসছে। হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপির বিরুদ্ধে দেশটির ২০ কোটি মুসলিমদের ওপর পরিকল্পিতভাবে প্রান্তিক করে তোলা ও নিপীড়নের অভিযোগ রয়েছে। ভারতের কৌশলগত বৈদেশিখ লক্ষ্য ও ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে। ভারতের গ্যাসের চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ সরবরাহ করে কাতার। প্রায় ৬.৫ মিলিয়ন ভারতীয় উপসাগরীয় মুসলিম দেশগুলোতে অবস্থান করছেন।

এমন সময় এই কূটনৈতিক বিরোধ ছড়ালো যখন ভারতের ভাইস-প্রেসিডেন্ট এম. ভেঙ্কাইয়া নাইডু দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর করতে কাতার সফরে রয়েছেন।

নুপুর শর্মা ও জিন্দালকে বরখাস্তের ঘটনায় বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। তারা এই সিদ্ধান্তকে ‘ভীরুতাপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে, হিন্দুত্ববাদী নেতা ইয়াতি নরসিংহানন্দ মুসলিমদের ‘অপরাধী’ বলছেন।

গত সপ্তাহে প্রকাশিত মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ভারতে হত্যা, হামলা ও হয়রানির কথা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ভারত সরকার এই প্রতিবেদনকে পক্ষপাতমূলক হিসেবে সমালোচনা করা হয়েছে।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top