চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ৬৮১০ কোটি টাকা

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৫ আগস্ট ২০২২ ১৭:৪২; আপডেট: ১৯ মে ২০২৪ ১৭:৩০

ফাইল ছবি

ব্যাংকখ্যাতের ঋণ খেলাপী। একের পর এক ছাড় দেয়ার পরও এই সমস্যা থেকে উত্তরণ করা যাচ্ছে না। এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মাঝে। খবর শেয়ার বিজের।

কারণ এসব ব্যাংকের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও নানা কেলেঙ্কারির মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের টাকা ফেরত আসছে না। চলতি বছরের জুন শেষে চতুর্থ প্রজন্মের ৯ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৮১০ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চতুর্থ প্রজন্মরে ব্যাংকগুলো ৯ বছরেরও অনিয়ম-দুর্নীতি আর বিভিন্ন ঋণ কেলেঙ্কারিতে বেড় হতে পারে না। নানা অব্যবস্থাপনায় নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে নিজেদের ইচ্ছামতো চালানো হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। দিনদিন বাড়ছে খেলাপি ঋণের বোঝা। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা ব্যাংকপাড়ায় বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তাই এখনই এসব ব্যাংকের জন্য কঠোর অবস্থানে যেতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।

জানা যায়, চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলো অধিংকাশই পুঁজিবাজারের তালিকার বাইরে। গত ৯ বছরে মাত্র তিনটি ব্যাংক পুঁজিবারের তালিকাভুক্ত হতে পেরেছে। তথ্য মতে, ২০১৩ সালে ৯টি নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব ব্যাংকের মধ্যে দেশীয় উদ্যোক্তাদের মালিকানায় ছয়টি এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের মালিকানায় অনুমোদন পায় তিনটি ব্যাংক।

দেশীয় উদ্যোক্তাদের পরিচালনায় অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকগুলো হলোÑ মধুমতি, মিডল্যান্ড, ইউনিয়ন, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স, মেঘনা ও পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক)। আর প্রবাসীদের মালিকানায় অনুমোদন পায় এনআরবি ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক (পূর্বনাম: এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক লিমিটেড) ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে ৯টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। যা তিন মাস আগে ছিল ৫ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। অথাঁৎ তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। তিন মাসে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির হার ২৮ দশমিক ৬১ শতাংশ।

তথ্যে দেখা যায়, মধুমতি ব্যাংকের চলতি বছরের জুন শেষে খেলাপি ঋণের অঙ্ক বেড়ে ১৮০ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। তিন মাস আগে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের অঙ্ক ছিল ৫৮ কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি বেড়েছে ১২২ কোটি টাকা। হিসাব অনুযায়ী বিতরণকৃত মোট ঋণের ৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ খেলাপি।

মিডল্যাণ্ড ব্যাংকের জুন শেষে খেলাপি বেড়ে ১৬২ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। তিন মাস আগে ব্যাংকের খেলাপি ছিল ৫৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি বেড়েছে ১০৫ কোটি টাকা। মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় সাড়ে তিন শতাংশ খেলাপি।

ইউনিয়ন ব্যাংকের বর্তমান খেলাপির পরিমাণ ৭১২ কোটি টাকা। তিন মাস আগে ছিল ৩৫০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৬১ কোটি ৪ লাখ টাকা। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

এছাড়া সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের বর্তমান খেলাপি ৪১৮ কোটি টাকা। তিন মাস আগে এ ব্যাংকটির খেলাপি ছিল ২৪৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি বেড়েছে ১৭২ কোটি টাকা। ব্যাংকটির বর্তমান খেলাপি ঋণের হার ৫ দশমিক ৯১ শতাংশ।

হালাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে মেঘনা ব্যাংকের খেলাপি দাঁড়িয়েছে ২৪১ কোটি টাকা। তিন মাস আগে ব্যাংকটির খেলাপি ছিল ২১৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি বেড়েছে ২৪ কোটি টাকা। বর্তমান ব্যাংকটির বিতরণকৃত মোট ঋণের ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। এছাড়া পদ্মা ব্যাংকের জুন শেষে খেলাপি ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। তিন মাস আগে ব্যাংকটির খেলাপি ছিল ৩ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, জুন শেষে এনআরবি ব্যাংকের মোট খেলাপির অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ২১৪ কোটি টাকা। তিন মাস আগে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ১০১ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ খেলাপি।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৩২৯ কোটি টাকা। তিন মাসে আগে ব্যাংকটির খেলাপি ছিল ১৭৩ কোটি টাকা। এছাড়া বর্তমানে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের খেলাপি ৬০০ কোটি টাকা। তিন মাসে খেলাপি ছিল ১৮৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪১৩ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুন শেষে দেশে বিতরণ করা মোট ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮.৯৬ শতাংশ। তিন মাস আগে মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। সে হিসাবে ৩ মাসে খেলাপি বেড়েছে ১১ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। ২০২১ সালের জুন প্রান্তিক শেষে খেলাপি ছিল ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৬ হাজার ৫২ কোটি টাকা। দেশের ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, এসব ব্যাংকের যখন অনুমোদন দেয়া হয়, তখন বলা হয়েছে এতগুলো ব্যাংকের প্রয়োজন রয়েছে কি না। আর থাকলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য নতুন কোনো সেবা বা ইনোভেটিভ প্রোডাক্ট আনতে পারে তাদের দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দিয়েছে তো রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের। তাই তারাও এখন সেটার একটা সুবিধা নিচ্ছে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে চাপিয়ে দেয়ার কারণে এসব ব্যাংকের পরিচালনা সুষ্ঠু না। আর যারা ব্যবস্থাপনায় আছে তারাও ঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না। এসব ব্যাংকের অনুমোদনের সময়ই গলদ ছিল। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত এসব ব্যাংকগুলোকে শক্ত হাতে মনিটরিং করা। তাহলে যদি উন্নিত হয়। আর না হলে এসব ব্যাংকে ভালো কোনো ব্যাংকের সঙ্গে দিয়ে দেয়া উচিত হবে। যদি ওইসব ব্যাংক ইন্টারেস্টেড হয়।

মূল খবরের লিঙ্ক

 



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top