বিগো হাতিয়ে নিল ১০৮ কোটি টাকা

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ৬ অক্টোবর ২০২২ ০০:১৭; আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৪ ১২:৪৫

ফাইল ছবি

প্রতারণার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ১০৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চীনভিত্তিক ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ বিগো টেকনোলজি লিমিটেড। খবর টিবিএসের।

দেড় বছরে প্রতারণার মাধ্যমে এই টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। পাচারের উদ্দেশ্যে এ অর্থ সংগ্রহে প্রতিষ্ঠানটিকে সহযোগিতা করেছে মুনসুন হোল্ডিং লিমিটেড। মূলত মুনসুন হোল্ডিংয়ের নামে নেয়া পেমেন্ট গেটওয়ে সূর্য পের সাহায্য নিয়ে বিপুল এ অর্থ আত্মসাৎ করে বিগো টেকনোলজি। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে। পরে এ ঘটনায় মামলা করেছে সংস্থাটি।

২০১৯ সালের ২ অক্টোবর আরজেসিঅ্যান্ডএফের নিবন্ধন নিয়ে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে বিগো টেকনোলজি। মেমোরেন্ডামে প্রতিষ্ঠানটিকে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, রফতানি, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ও গেম ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মিডিয়া স্ট্রিমিং এবং কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। অনুমোদন পাওয়ার পর বিগো (বাংলা) টেকনোলজি লিমিটেড রাজধানীর গুলশানে কার্যালয় স্থাপন করে নিজেদের কার্যক্রম শুরু করে।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা দিলেও তারা মূলত লাইভ চ্যাট ও ভিডিও চ্যাটভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে। কিছুদিন পরই প্রতিষ্ঠানটি ভার্চুয়াল ডায়মন্ড ও বিনস বিক্রির মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের অর্থ হাতিয়ে নিতে শুরু করে। এরপর শুরু হয় ভিগো ও লাইকির অ্যাপস ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ। এক্ষেত্রে এমএফএস, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের পর সবশেষে সূর্য পে নামের পেমেন্ট গেটওয়ে সার্ভিস ব্যবহার করা হয়। সব মিলিয়ে দেড় বছরে তারা হাতিয়ে নেয় ১০৮ কোটি টাকা।

রাজধানীর পল্টন থানার পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি মামলার তদন্তে নেমে অর্থ আত্মসাৎ ও পরবর্তী সময়ে সেই অর্থ সিঙ্গাপুরে সরিয়ে নেয়ার তথ্য পায় পুলিশ। পরে মামলাটি তদন্ত শুরু করে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি)। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পরিকল্পিতভাবে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ তুলে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপুলিশ পরিদর্শক সোহেল রানা।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় দায়ের হওয়া মামলাটিতে তিন ব্যক্তি ও দুটি প্রতিষ্ঠানকে আসামি করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো বিগো (বাংলা) লিমিটেড ও মুনসুন হোল্ডিং লিমিটেড। তিন ব্যক্তি হলেন বিগো বাংলা লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইয়ো জি, ডায়মন্ড ও বিনস রিসেইলার এসএম নাজমুল হক এবং হোস্ট রিক্রুটার মো. আরিফ হোসেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত ভার্চুয়াল ডায়মন্ড ও বিনস বিক্রির বিপরীতে অ্যাপসটির বাংলাদেশী ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ১ কোটি ২৬ লাখ ৮০ হাজার ৮০৬ টাকা সংগ্রহ করা হয়। এ অর্থ জমা হয় একটি বেসরকারি ব্যাংকের গাজীপুর শাখার হিসাবে, যা বর্তমানে আদালতের নির্দেশে অবরুদ্ধ রাখা হয়েছে। ওই ব্যাংক হিসেবে স্থিতি রয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৪৭০ টাকা। বাকি ১ কোটি ২৫ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৬ টাকা বিনস রিসেলার নাজমুল হক দেন চীনা নাগরিক ইয়ো জিকে। একই সময়ের মধ্যে আরো দুটি বেসরকারি ব্যাংকের হিসাবের মাধ্যমে বিগো বাংলা লিমিটেড ৪৩ কোটি ৫০ লাখ ৫০ হাজার ৭৬ টাকা সংগ্রহ করে। এছাড়া ডায়মন্ড ও বিনস রিসেলার এসএম নাজমুল হকের ১২টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৪৭ কোটি ৮ লাখ ১০ হাজার ৮১২ টাকা সংগ্রহ করে বিগো বাংলা।

প্রতিষ্ঠানটিকে সূর্য পে তাদের গেটওয়ে সেবা সরবরাহ করেছে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক সোহেল রানা। তিনি বলেন, ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে পেমেন্ট গেটওয়ে সুবিধাও নেয় বিগো বাংলা লিমিটেড। এক্ষেত্রে তাদের সূর্য পে নামের সূর্যমুখী লিমিটেডের পেমেন্ট গেটওয়ে পাইয়ে দেয় দেশী প্রতিষ্ঠান মুনসুন হোল্ডিং লিমিটেড। তারা মূলত নিজেদের নামে পেমেন্ট গেটওয়ে সার্ভিস নিয়ে সেটি বিগো বাংলা লিমিটেডকে ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়। পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়ার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারে সহযোগী হয়ে উঠেছে মুনসুন হোল্ডিং লিমিটেড।

তবে অর্থ পাচারের জন্য পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করতে দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সূর্য পের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফিদা হক। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, একজন ক্লায়েন্টকে গেটওয়ে সেবা সরবরাহের আগে মূলত তার ব্যবসার ধরন, টিআইএন ও ভ্যাট নিবন্ধনের কাগজপত্র যাচাই করে দেখা হয়। আমাদের এক হাজারের বেশি গ্রাহক রয়েছেন। তারা প্রতিদিন আমাদের গেটওয়ের মাধ্যমে লেনদেন করে থাকেন। এর মধ্যে কেউ যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কোনো লেনদেন করে থাকেন, সেটা আমাদের পক্ষে শনাক্ত করা খুব কঠিন বিষয়।

নিউজের লিঙ্ক



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top