প্রভাবশালীদের চাপ আর কর্মকর্তাদের দূর্নীতির কারণে ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর ২০২২ ০০:৩৭; আপডেট: ১৯ মে ২০২৪ ১৭:০৩

ছবি: সংগৃহিত

নানা কারণে ঢাকার ভূমি শ্রেণীর পরিবর্তন হয়েছে।পরিবর্তনের ক্ষেত্রে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা, অদূরদর্শী পরিকল্পনা ও সরকারের ঘনিষ্ঠ ভূমিদস্যুরা বড় দায়ী উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। খবর বণিক বার্তার। 

তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠিত আবাসন ব্যবসায়ী তথা ভূমিদস্যুদের হাত ধরেই ঢাকার শ্রেণী পরিবর্তন হয়েছে। এক্ষেত্রে রাজউকের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তারা প্রধানত দায়ী। রাজউকের নিজস্ব কোনো প্ল্যান ছিল না বলেই কাণ্ডজ্ঞানহীনের মতো যখন খুশি তখন ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন করে ফেলেছে। রাজউকের উচিত ছিল শুধু ঢাকার জমির পরিমাণ না বাড়িয়ে ছোট ছোট কেন্দ্রীয় শহর গড়ে তোলা। তাহলে কৃষিভূমি ও জলাভূমি এভাবে গিলে ফেলা সম্ভব হতো না।

ভূমির শ্রেণী পরিবর্তনের ক্ষেত্রে রাজউক কোনো যাচাই-বাছাই করেনি। ফলে অপরিকল্পিত শ্রেণী পরিবর্তন ঢাকার নগরজীবনের বোঝা হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল হুদা। পরিকল্পিত ও টেকনিক্যালি যাচাই-বাছাই করে ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন করা উচিত ছিল বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

নগরায়ণের স্বার্থে স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই একটি ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন হয়। এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও প্রাণবৈচিত্র্য বজায় রাখায়ও গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে সেটি হয়নি বলে স্বীকার করেছেন রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ ও সর্বশেষ ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, একটা সময় ঢাকার পরিধি ছিল ৩২০ একর। এখন এটা হয়েছে ১ হাজার ৫২৮ একর। শহর বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই কৃষিজমি ও জলাশয় কমে আসবে। তবে অপরিকল্পিত ভূমি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের পাশাপাশি সরকারেরও চাহিদা ছিল। এখন আমরা যে বিশদ নগর পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি সেখানে ওয়াটারবডি ও কৃষিজমি সংরক্ষণের প্রস্তাব করেছি। ঢাকাকে বাঁচাতে হলে, বাসযোগ্য করতে হলে ওয়াটার ডি ও কৃষিজমি সংরক্ষণের বিকল্প নেই।

ভূমির অপরিকল্পিত শ্রেণী পরিবর্তনের কারণে নগরবাসী সীমাহীন ভোগান্তি পোহাচ্ছে। জলজট ও তাপপ্রবাহ এমনকি ডেঙ্গুর মতো সমস্যাগুলোর পেছনেও ভূমির শ্রেণী পরিবর্তনই বড় কারণ বলে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকার ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন অবৈজ্ঞানিক ও অপরিকল্পিতভাবে হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাসেম। তিনি বলেন, কৃষিভূমি বা জলাধারের শ্রেণী পরিবর্তন করে আবাসিক করা আসলে একটি অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। ঢাকার যেখানে কৃষিভূমিতে আবাসন করা হয়েছে সেখানেই দুর্যোগ স্থায়ী আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে জলাবদ্ধতা, তাপপ্রবাহ, ডেঙ্গু—এগুলো ওয়াটারবডির শ্রেণী পরিবর্তনের কারণেই হচ্ছে।

ঢাকার ভূমির শ্রেণী পরিবর্তনে প্রভাবশালীদের বাধা দেয়ার ক্ষেত্রে ওয়াটার মডেলিং বড় ভূমিকা রাখত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভূমির শ্রেণী পরিবর্তনের চাপ সবসময়ই থাকে। আমাদের যদি একটি ওয়াটার মডেলিং থাকত, তাহলে প্রেসার গ্রুপকে আমরা বোঝাতে পারতাম, এ কৃষিভূমি বা জলাশয়ে আবাসন করা আর দুর্যোগের সঙ্গে বসবাস করা একই কথা। কিন্তু আমাদের কাছে সে ধরনের কোনো মডেল বা হাউড্রোলজিক্যাল অ্যানালাইসিস প্রতিবেদন ছিল না। ফলে প্রেসার গ্রুপকে অন্তত ভবিষ্যতের সমস্যার কথা হাতেকলমে বোঝানো সম্ভব হয়নি।

ঢাকার অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আজ আমরা সময় ও অর্থ ব্যয় করে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলে অভিযান পরিচালনা করছি। কিন্তু এখানে যদি শুরুতেই খালি জায়গা পেতাম তাহলে আমরা সরাসরি উন্নয়নকাজ শুরু করতে পারতাম। দখল উচ্ছেদের জন্য বসে থাকতে হতো না।’

অপরিকল্পিতভাবে শ্রেণী পরিবর্তন করে অবকাঠামো নির্মাণ ও পরবর্তী সময়ে তা ভেঙে ফেলার বিষয়টি দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন নগর গবেষণা কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ শহরে একটা সময় ধান চাষ হতো, মাছ ধরা যেত, খাল ছিল, সুন্দর নদী ছিল, বাঁচার পরিবেশ ছিল। এসব হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শহরটির বাসযোগ্যতাও হারিয়ে গিয়েছে। এক্ষেত্রে আবাসন ব্যবসায়ীদের দায়ই সবচেয়ে বেশি। বিষয়টি সরকার ও নগরবিদদের গুরুত্ব দিয়ে ভাবা দরকার।

নিউজের লিঙ্ক



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top