এনবিআর আওতাধীন সৃষ্টি হচ্ছে নতুন ৬ হাজার ১৯৬ পদ

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০২২ ২১:১৫; আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:৪৭

ছবি: সংগৃহিত

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন শুল্ক ও ভ্যাট বিভাগে সৃষ্টি হতে যাচ্ছে নতুন ৬ হাজার ১৯৬টি পদ। এরই মধ্যে অনুমোদন দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। খবর বণিক বার্তার।

এর মধ্যে রয়েছে ক্যাডার পদে ৪৩৫ ও অন্যান্য পদে ৫ হাজার ৭৬১টি। এছাড়া সংস্কার, পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের পদক্ষেপ হিসেবে দেশে নতুন করে গঠন হতে যাচ্ছে চারটি কাস্টম হাউজ। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় হবে দুটি—বে-কাস্টম হাউজ ও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ আইসিডি। বাকি দুটির একটি কক্সবাজারে মাতারবাড়ী কাস্টম হাউজ ও অন্যটি সাতক্ষীরায় ভোমরা কাস্টম হাউজ।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, কাস্টমসের পাশাপাশি নতুন ধারণায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে গঠিত হবে দুটি ইকোনমিক জোন কমিশনারেট। পাশাপাশি গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, কক্সবাজার ও বরিশালে পাঁচটি নতুন ভ্যাট কমিশনারেট স্থাপনের প্রস্তাবও অনুমোদন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আমদানি হওয়া পণ্যের রাসায়নিক পরীক্ষা নিশ্চিত করতে কাস্টমস কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠা করা হবে ঢাকার তেজগাঁওয়ে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিশ্চিত হওয়ায় পুরো প্রক্রিয়াটি এখন অর্থ মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনিক সংস্কারসংক্রান্ত সচিব কমিটি হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে।

অবশ্য দেশে রাজস্ব আহরণের গতি ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শুল্ক ও ভ্যাট বিভাগের অনুকূলে সংস্কার, পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণে মোট ১১ হাজার ৯২১টি পদ সৃজনের প্রস্তাব দিয়েছিল এনবিআর। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১০ হাজার ২৩৪টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪৯৩টি ও তৃতীয় পর্যায়ে ১ হাজার ১৯৪টি ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের অনুরোধ করা হয়।

এনবিআর সদস্য ড. আব্দুল মান্নান শিকদার এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘শুল্ক ও ভ্যাট অনুবিভাগের সংস্কার, পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণে রাজস্ব খাতে প্রায় ১২ হাজার পদ সৃজনের প্রস্তাব করেছিলাম আমরা। তবে এটা কমিয়ে প্রায় অর্ধেক অনুমোদন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।’

রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এমডিজি ও এসডিজির লক্ষ্যমাত্রায় অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আহরণের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। রাজস্ব আহরণ যে গতিতে এগিয়েছে এনবিআরের মাঠ অফিসের সংখ্যা ও সক্ষমতা মোটেও সে অনুযায়ী বাড়ানো হয়নি। সাধারণত ১০-১২ বছরে একবার উল্লেখযোগ্য সংস্কার, পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হয়। দীর্ঘ সময় পরে শুল্ক ও ভ্যাট বিভাগের অনুকূলে ছয় হাজার পদ সৃজন একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কতটা ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে সেটিও পর্যালোচনায় আনা ইচিত। এনবিআরের শুল্ক ও ভ্যাট বিভাগে বর্তমানে অনুমোদিত জনবলের অর্ধেকসংখ্যক কর্মরত। আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে সরকারের রাজস্ব সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পণ্য যাচাইকরণ। পণ্যের কায়িক পরীক্ষা (ফিজিক্যাল এক্সামিনেশন) সম্পর্কিত একটি স্থায়ী আদেশে বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া চালানের অনধিক ১০ শতাংশ কায়িক পরীক্ষা করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে পরীক্ষার জন্য চালান নির্বাচনে কম্পিউটারের সাহায্যে দৈবচয়ন (র্যানডম সিলেকশন) পদ্ধতি অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এ নির্দেশনাও পুরোপুরি অনুসরণ করা হচ্ছে না শুধু প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তার পদায়ন না হওয়ায়। এভাবে প্রয়োজনীয় কর্মকর্তার অনুপস্থিতির কারণে এক প্রতিষ্ঠানের বিআইএন (ব্যবসা শনাক্তকরণ নম্বর) ব্যবহার করে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান চালান খালাস করে নেয়ার ঘটনা ঘটে চলেছে। আবার রফতানির ক্ষেত্রে পণ্য রফতানি না করেই রফতানি দেখিয়ে নগদ সহায়তার টাকা উঠিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র। কম হারের কিংবা নগদ সহায়তার আওতাবহির্ভূত পণ্য রফতানি করে বেশি হারের পণ্য দেখাচ্ছেন কেউ কেউ। আবার একই পণ্য কম রফতানি করে বেশি দেখিয়েও নগদ সহায়তার অর্থ লোপাট হচ্ছে। অথচ প্রতি বছর বাজেটের আকার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলেও সে তুলনায় নিয়োগ হয় না প্রয়োজনীয় জনবল। ফলে রাজস্ব ফাঁকি রোধ করে উপযুক্ত রাজস্ব আহরণ কার্যক্রম সম্ভব হয় না। এ তথ্য কাস্টমসের নিজস্ব পর্যবেক্ষণেই উঠে এসেছে বারবার।


সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরে ঘটে যাওয়া একটি বড় রাজস্ব ফাঁকির ঘটনায় অভিযুক্ত হওয়ার পর রাজস্ব কর্মকর্তা (আরও) জয়নব বেগম একটি লিখিত বক্তব্য দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে। এতে তিনি উল্লেখ করেন, সিইপিজেডে আমার কর্মকালে শুল্কায়ন শাখায় প্রতিদিন প্রায় ৬০০-৭০০টি বিল অব এন্ট্রির শুল্কায়ন এবং রি-রাউট করতে হতো। সেক্ষেত্রে প্রতিটি বিল অব এন্ট্রির সঙ্গে সংযুক্ত দলিলাদির সত্যতা নিশ্চিত করা মাত্র একজন রাজস্ব কর্মকর্তার পক্ষে প্রায় অসম্ভব। দৈনন্দিন কাজের অংশ হিসেবে প্রতিদিন প্রায় ৭০০ বিল অব এন্ট্রি দ্রুততার সঙ্গে শুল্কায়ন সম্পন্ন করতে গিয়ে মানুষ হিসেবে ভুল হওয়াই স্বাভাবিক। মূলত দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে কিংবা অস্বাভাবিক কিছু পরিলক্ষিত হলে শুধু সেক্ষেত্রে রাজস্ব কর্মকর্তা পুনরায় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পণ্যের দলিলাদির পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। এছাড়া পিক টাইমে রিরোটিংয়ের জন্য একসঙ্গে প্রায় ৩০-৩৫ জন লোক সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করাটাও মানসিক চাপ তৈরি করে।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, এনবিআরের অনুবিভাগগুলোতে সংস্কার ও পুনর্গঠনে বহু আগেই নজর দেয়া দরকার ছিল। বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পদ নিশ্চিত করে আধুনিক, যুগোপযোগী, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর রাজস্ব প্রশাসন তৈরির কোনো বিকল্প নেই। ২০৪১ সালের রূপকল্প অর্জনে টেকসই রাজস্ববান্ধব প্রশাসন বড় ভূমিকা রাখতে পারে।


এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, নতুনভাবে গঠিত হতে যাওয়া দপ্তরগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামে বে-কাস্টম হাউজের জন্য ২২৭টি পদ (এর মধ্যে ক্যাডার সার্ভিসের ২০ পদ), কাস্টম হাউজ আইসিডিতে ১৮০ পদ (ক্যাডার ২০), কক্সবাজারে মাতারবাড়ী কাস্টম হাউজ প্রতিষ্ঠা করে ১৮৭ পদ (ক্যাডার ১৯), চট্টগ্রাম ইকোনমিক জোন কমিশনারেটে ১৬০ (ক্যাডার ১৬), কক্সবাজার কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে ১৭১ পদ (ক্যাডার ১০), গাজীপুর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে ৩৫০, নারায়ণগঞ্জ কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে ৩২৩ পদ (ক্যাডার ১১), সাতক্ষীরায় ভোমরা কাস্টম হাউজ প্রতিষ্ঠা করে ৭৯ পদ (ক্যাডার ৯), ময়মনসিংহ কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে ২০৬ পদ (ক্যাডার ৮), বরিশাল কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে ২৭৭ পদ (ক্যাডার ১২), কাস্টমস কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগার কমিশনারেটে ৮৯ (ক্যাডার ১) ও ঢাকা ইকোনমিক জোন কমিশনারেটে ১৬০ (ক্যাডার ১৬) পদ সৃজন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পেয়েছে এনবিআর।

এছাড়া অবশিষ্ট ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদের নিয়োগের অনুমোদন হয়েছে বর্তমানে কার্যক্রমে থাকা ঢাকা কাস্টম হাউজে ২৯৩টি, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে ১৪০, আইসিডি কমলাপুর কাস্টমসে ৫৪, পানগাঁও কাস্টমস ৫০, বেনাপোল কাস্টমস ৪৪, মোংলা কাস্টমস ৬০, ঢাকা কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে (পূর্ব) ২৩৮, ঢাকা কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে (পশ্চিম) ২০৮, ঢাকা কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে (উত্তর) ৩৬২, ঢাকা কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে (দক্ষিণ) ৩০৬, সিলেট কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে ১৮৫, রংপুর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে ৯৫, চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে ১৪৮, কুমিল্লা কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে ১০৫, খুলনা কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে ১৩৯, রাজশাহী কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে ১২৮, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরে ৩৭০, বৃহৎ করদাতা ইউনিটে ৫১, চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটে ৮৬, নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরে (মূল্য সংযোজন) ২৮৮, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট (আপিল) কমিশনারেট ঢাকা-১ এ ২৩, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট (আপিল) কমিশনারেট ঢাকা-২-এ ২৩, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট (আপিল) কমিশনারেট খুলনায় ২২, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট (আপিল) কমিশনারেট চট্টগ্রামে ২৪, শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যর্পণ পরিদপ্তরে ৩৬, শুল্ক মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনারেটে ১৪০ এবং কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমি চট্টগ্রামের জন্য ১৮ পদে।

বণিক বার্তার প্রতিবেদনটির লিঙ্ক



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top