সীমিত ঋণপত্রে সংকট সৃষ্টি হতে পারে প্রযুক্তিগত পণ্যের

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০২২ ২৩:৫১; আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২২ ০০:০৭

ফাইল ছবি।

ডলার সংকটে কমিয়ে দেয়া হয়েছে বিলাসজাত পণ্যের আমদানি। ফলে ঋণপত্র খুলে কম্পিউটার, ল্যাপটপসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্যের আমদানি কমে গেছে অনেকটাই। এদিকে, আমদানি কমে যাওয়ায় প্রযুক্তিগত পণ্যের সংকট তৈরীর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। খবর প্রথম আলো।

ডলার–সংকটের কারণে চাহিদা অনুসারে ঋণপত্র খুলতে না পারায় দেশে কম্পিউটার, ল্যাপটপসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্যের আমদানি কমে গেছে। এতে বাজারে এসব পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম ও দেশে ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় এসব পণ্যের দামও বেড়ে গেছে। এতে কমেছে বিক্রি। দুইয়ে মিলে প্রযুক্তিপণ্যের বাজার নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।

ডলার–সংকটের কারণে বর্তমানে প্রযুক্তিপণ্য আমদানির বড় অঙ্কের ঋণপত্র খুলছে না ব্যাংকগুলো। ৩০–৪০ হাজার ডলারের বেশি ঋণপত্র খোলার অনুমতি পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। তবে তা–ও মিলছে অনেক অনুরোধের পর। এতে পণ্য আমদানি কমে গেছে। কম্পিউটার আমদানিকারক, পরিবেশক ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ খাতের ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে কম্পিউটার, ল্যাপটপসহ আনুষঙ্গিক উপকরণের বাজার প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার। তবে আমদানি কমে যাওয়ায় আগামী দু–তিন মাসের মধ্যে প্রযুক্তিপণ্যের বাজারে বড় ধরনের সংকট তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের।

কম্পিউটারের ব্র্যান্ড আসুসের ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. আল ফুয়াদ জানান, ‘ঋণপত্র যে খুলতে পারছি না, এমন নয়। তবে চাহিদার তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল। ঋণপত্রের অনুমতি পেতে ও ডলার ছাড় হতে দীর্ঘ সময় লাগছে। ফলে আমদানি পর্যায়ে অনেক ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রযুক্তিপণ্য আমদানিকারক একটি কোম্পানির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নতুন পণ্য আমদানি একপ্রকার বন্ধই আছে বলা চলে। আগে মাসে আমাদের ২৫–৩০টা ঋণপত্র খোলা হতো। এখন সেখানে করতে পারছি মাত্র চার–পাঁচটা। তা–ও ছোট ছোট পরিমাণে।’

ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে এখনো ল্যাপটপের মজুত আছে। তবে প্রসেসর, স্টোরেজ ডিভাইসসহ ডেস্কটপ কম্পিউটারের বিভিন্ন উপকরণ কম পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া প্রিন্টার, স্পিকার, প্রজেক্টরসহ অন্যান্য প্রযুক্তিপণ্যেরও ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

কম্পিউটার ও প্রযুক্তিপণ্যের বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান রায়ানস কম্পিউটারসের ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের ব্যবস্থাপক এস এম আরিফুজ্জামান বলেন, দু–তিন মাস আগে খোলা ঋণপত্রের পণ্য এখন দেশে আসছে। তবে দাম অনেক বেশি। আর দেড় মাস যাবৎ ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে না। এভাবে চললে মাসখানেক পর বাজারে ল্যাপটপ, কম্পিউটারসহ নানা প্রযুক্তিপণ্যের সংকট তৈরি হতে পারে।

এদিকে আনুষ্ঠানিক ঋণপত্র খুলতে না পেরে অনেকে এখন বিকল্প উপায়ে পণ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। কম্পিউটার সরবরাহকারী ও বিক্রির প্রতিষ্ঠান বাইনারি লজিকের প্রধান নির্বাহী মনসুর আহমদ চৌধুরী জানান, ইতিমধ্যে ঋণপত্র খোলা আছে, এমন ব্যক্তিদের মাধ্যমে অনেকে পণ্য আমদানির চেষ্টা করছেন। আবার কেউ কেউ স্থানীয় বাজার থেকে পণ্য কিনে গ্রাহক ধরে রাখছেন।

আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম ও দেশে ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় বেড়ে গেছে প্রযুক্তিপণ্যের আমদানি ব্যয়। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের বাজেটে প্রযুক্তিপণ্য আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এতে কম্পিউটার, ল্যাপটপসহ প্রযুক্তিপণ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। জুলাইয়ের পর আনা সব পণ্যে ৩০ শতাংশের বেশি দাম বেড়েছে। বর্তমানে যেসব আমদানি ঋণপত্র খোলা হচ্ছে, সেসব পণ্যের দাম আরও বাড়বে হবে বলে জানিয়েছেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিসিএস কম্পিউটার সিটিতে গতকাল শনিবার ল্যাপটপ কিনতে যান স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম। ল্যাপটপ কিনতে যে বাজেট ধরেছিলেন নাজমুল, বাজারে দাম তার চেয়ে অন্তত ১০ হাজার টাকা বেশি। পরে কয়েক দোকান ঘুরে কম দামি একটি ল্যাপটপ কেনেন তিনি।

নাজমুলের মতো অনেকেই এখন প্রযুক্তিপণ্য কেনায় বাজেট কাটছাঁট করছেন। ফলে বিক্রি কমেছে দোকানগুলোয়। বিসিএস কম্পিউটার সিটিতে ১৫৬টি কম্পিউটার ও ল্যাপটপের দোকান রয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত ৪ মাসে ৩০–৩৫ শতাংশ বিক্রি কমে গেছে।

সাধারণ গ্রাহকের পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পে প্রযুক্তিপণ্য কেনা একরকম বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি করপোরেট গ্রাহকেরাও কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছেন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনটির লিঙ্ক



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top