পাতাল রেলের নির্মাণকাজ উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী

আন্দোলন-সংগ্রাম করে কেউ কিছু করতে পারবে না

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৯:০২; আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:২২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা - ছবি - ইউএনবি

কেউ আন্দোলন-সংগ্রাম করে কিছুই করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘আজকে যতই আন্দোলন-সংগ্রাম করুক, যতক্ষণ জনগণ সঙ্গে থাকবে তাদের কল্যাণে আমরা কাজ করে যাব।

এখানে কেউ কিছু করতে পারবে না। এ বিশ্বাস আপনারা রাখতে পারেন।’ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গতকাল ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-১-এর নির্মাণকাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভাপতি এ কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার সারা দেশে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে আসে, দেশের মানুষের উন্নতি হয়। আওয়ামী লীগ সারা দেশে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। একদিনে ১০০টা সেতু, ১০০টা সড়ক উদ্বোধন; এটা বোধ হয় কখনো কেউ করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই কিন্তু তা সম্ভব হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ ২০১৪-তে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে, ২০০৮-তে দিয়েছে। ২০০৮-এর নির্বাচনটা যদি ধরেন, সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেছিল কিন্তু কয়টা সিট পেয়েছিল? ৩০০ সিটের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট অধিকাংশ সিট পায়। বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ২৯টি, আর একটি পরে উপনির্বাচনে এসেছিল। মাত্র ৩০টি সিট ২০০৮-এর নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট পেয়েছিল। আমরা যে এত বছর কাজ করলাম, মানুষের উপকার করলাম, যার ফলে মানুষ আমাদের ভোট দিচ্ছে। জনগণের আস্থা-বিশ্বাস আমরা পাচ্ছি। আমাদের কাজের মধ্য দিয়ে জনগণের মন জয় করেই আমরা ভোট পাচ্ছি। বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জে যে নির্বাচন হয়ে গেল সেখানে নৌকা মার্কায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুই প্রার্থী ছিল আর বগুড়ায় এক প্রার্থী। ঠাকুরগাঁওয়ে দিয়েছিলাম মেনন সাহেবকে, সেখানে জাতীয় পার্টি জিতেছে। আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী ছিল না। বগুড়ার কাহালু নন্দীগ্রামেও আমরা জাসদকে দিয়েছিলাম। জাসদও সেখানে জয়লাভ করেছে আর সদরে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেছে। নৌকা আজকে বগুড়ায় জয়লাভ করেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জেও জয়লাভ করেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচন—আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম যে সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আজকে আমি মনে করি, আমাদের যে প্রতিশ্রুতি আমরা একে একে তা রক্ষা করি। ২০০৮-এর নির্বাচনে প্রতিশ্রুতি ছিল ২০২১-এর মধ্যে রূপকল্প-২১ বাস্তবায়ন করব। সেটা বাস্তবায়ন করেছি আর নির্বাচনী ইশতেহার সেটাও আজকে আমরা বাস্তবায়ন করেছি। ওই ইশতেহারে ছিল ঢাকা শহরকে যানজটমুক্ত করার জন্য আমরা মেট্রোরেল নির্মাণ করব। আওয়ামী লীগ কথা দিলে কথা রাখে, আমরা সেই কথা রেখেছি।’

দেশবাসীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আপনাদের সাহস-সহযোগিতায় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। এ সেতু নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র ছিল। আমাদের ওপর দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল। আমরা জনগণের সেবক, সেবা করতে এসেছি। জনগণের ভাগ্য তৈরি করতে এসেছি। তাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে আসিনি। আমরা জনগণকে দিতে এসেছি। কাজেই এখানে দুর্নীতির প্রশ্ন ওঠে না।’

বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ৫ শতাংশ বাড়াই, ইংল্যান্ড বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করেছে ১৫০ ভাগ। শীতের সময় ওখানকার মানুষের হিটার জ্বালিয়ে থাকতে হবে। পুরো পরিবার নিয়ে একটা ঘরের মধ্যে কোনো রকমে হিটার জ্বালিয়ে তারা থাকে। আমাদের এখনো সেই দুরবস্থা আসেনি। তবে যা আছে, আমরা যদি হিসাব করে না চলি তাহলে বিপদ আসার সম্ভাবনা। সেজন্য সবাইকে হিসাব করে চলার অনুরোধ জানাচ্ছি। আমরা আছি, আপনাদের যেন কোনো সমস্যা না হয় দেখব। কিন্তু সঙ্গে আপনাদের সবার সহযোগিতাও দরকার।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা করেছে। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে হবে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ। ২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান করে দিয়েছি, যাতে এ ব-দ্বীপটা জলবায়ুর অভিঘাত থেকে রক্ষা পায়। এ দেশের মানুষ যেন উন্নত জীবন নিয়ে বাঁচতে পারে। আমরা বাংলাদেশকে নিয়ে এগিয়ে যাব। বাংলাদেশের এ অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি আর কেউ থামাতে পারবে না।’

এদিকে দেশের প্রথম পাতাল রেলপথ নির্মাণের মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। এ বিষয়ে সংস্থাটির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে জাপানের টোকিও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। ডিএমটিসিএলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সরকার প্রথমবারের মতো বিমানবন্দর-কমলাপুর এবং পূর্বাচল-নতুন বাজার-রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জ রুটের মধ্যে ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার পাতাল ও উড়াল এমআরটি লাইন-১ নির্মাণ করবে। এর প্রথম অংশটি বিমানবন্দর রুট (বিমানবন্দর-কমলাপুর), যাতে ১২টি স্টেশনসহ ১৯ দশমিক ৮৭২ কিলোমিটার হবে পাতাল রেল। দ্বিতীয় অংশ ১১ দশমিক ৩৬৯ কিলোমিটার পূর্বাচল রুট (নতুন বাজার থেকে রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জ ডিপো) হবে উড়াল। এ পথের নয়টি স্টেশনের মধ্যে সাতটি উড়ালে হবে এবং বিমানবন্দর রুটের অংশ হিসেবে নতুন বাজার ও নর্দ্দা স্টেশন পাতাল অংশে থাকবে। নতুন বাজার স্টেশনে এমআরটি লাইন-৫সহ (নর্দার্ন রুট) আন্তঃপরিবর্তন করার সুবিধা থাকবে, যেখান থেকে যাত্রীরা নেমে পূর্বাচল বা পূর্বাচল রুট থেকে বিমানবন্দর রুটে যাওয়ার সুযোগ পাবে।

এমআরটি লাইন-১ পাতাল স্টেশন হবে চারতলাবিশিষ্ট। টিকিট কাউন্টার এবং অন্য সুবিধাদি থাকবে প্রথম বেজমেন্ট লেভেলে। প্লাটফর্মটি হবে দ্বিতীয় তলায়। উড়াল স্টেশনের টিকিট কাউন্টার ও প্লাটফর্ম হবে চতুর্থ তলায়। উড়াল ও পাতাল উভয় স্টেশনেই লিফট, সিঁড়ি ও এসকেলেটর থাকবে।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top