টিআইর প্রতিবেদন

দুর্নীতি সূচকে দুই ধাপ অবনতি বাংলাদেশের

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারী ২০২৪ ১১:১৫; আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২৫ ২০:০৯

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থানের অবনতি হয়েছে। এবার বাংলাদেশের অবস্থান হয়েছে ১০তম, যা গতবার ছিল ১২তম। জার্মানির বার্লিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির ধারণাসূচক (সিপিআই) প্রতিবেদন ২০২৩-এ এমন চিত্র উঠে এসেছে।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) কার্যালয়ে বার্লিনের সঙ্গে একযোগে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। ২০০১ সাল থেকে বাংলাদেশের দুর্নীতির চিত্র এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হচ্ছে। এতে দেখা গেছে, ১০০ স্কোরের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ২৪, যা গতবারের চেয়ে এক পয়েন্ট কম। গত বছর বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৫।

টিআই বলেছে, বাংলাদেশের স্কোর ২০২২-এর তুলনায় ০-১০০ স্কেলে এক পয়েন্ট কমে ২৪ এবং নিম্নক্রম ও ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী অবস্থানের দুই ধাপ অবনতি হয়ে ১৮০টি দেশের মধ্যে যথাক্রমে ১০ম ও ১৪৯তম।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের অবস্থান হতাশাজনক। এবার বাংলাদেশের স্কোর ও অবস্থানের অবনমন প্রমাণ করে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবিক অর্থে কার্যকর প্রয়োগ হয়নি। আইনের প্রয়োগ ও কাঠামোগত দুর্বলতায় বাংলাদেশের আরও অবনতি হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে ভুটান গত বছরের ৬৮ স্কোর ধরে রাখলেও এ অঞ্চলের পাঁচটি দেশ এবার ২০২২-এর তুলনায় কম স্কোর করেছে। আর বাকি দুটি দেশের স্কোর কিছুটা বেড়েছে। এর মধ্যে আফগানিস্তানের ৪ পয়েন্ট, শ্রীলঙ্কার ২ পয়েন্ট এবং বাংলাদেশ, মালদ্বীপ ও ভারতের স্কোর ১ পয়েন্ট করে কমেছে। আর পাকিস্তানের ২ পয়েন্ট ও নেপালের ১ পয়েন্ট স্কোর বেড়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র ভুটান ছাড়া বাকি সাতটি দেশই সূচকের গড় স্কোর ৪৩-এর কম পেয়েছে। অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ার জনসাধারণ সার্বিকভাবে অতীব উদ্বেগজনক দুর্নীতির মধ্যে জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।

সূচকে ১০০ স্কোরের মধ্যে ৯০ পেয়ে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে তালিকার শীর্ষে আছে ডেনমার্ক। ৮৭ পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ফিনল্যান্ড। আর সবচেয়ে দুর্নীতি বেশি হচ্ছে সোমালিয়ায়। তাদের স্কোর মাত্র ১১। ১৩ পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া ও ভেনেজুয়েলা। ১৬ স্কোর পেয়ে তৃতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে ইয়েমেন।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতি ও অবিচার পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। দুর্নীতি অন্যায়ের জন্ম দেয় এবং নাগরিক ও অন্যায় দুর্নীতির দুষ্টচক্র তৈরি করে। সিপিআইর তথ্য প্রমাণ করে যেসব দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা রয়েছে, রাজনৈতিক অধিকার সুরক্ষিত, সেসব দেশের কার্যকর দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের সম্ভাবনা বেশি।

বাংলাদেশের নিম্ন অবস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত কয়েক বছর সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ঘোষিত ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার সবচেয়ে’ আলোচিত মেয়াদ ছিল। কিন্তু এই মেয়াদে এ ঘোষণাকে চর্চায় রূপ দেওয়ার সুনির্দিষ্ট কৌশল-নির্ভর কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়নি; উপরন্তু এই মেয়াদে দুর্নীতির ব্যাপকতা ঘনীভূত ও বিস্তৃত হয়েছে। দুর্নীতির ঘটনা সামনে এলেও প্রতিরোধ ও প্রতিকারে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমনে কার্যকর দৃষ্টান্ত শাস্তি নিশ্চিতে কার্যকারিতা দেখাতে পারেনি। রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও আর্থিকসহ বিভিন্নভাবে অর্জিত ক্ষমতার অবস্থানকে অপব্যবহারের মাধ্যমে সম্পদ বিকাশের লাইসেন্স হিসেবে ব্যবহারের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়ে স্বাভাবিকতায় রূপান্তর করা হয়েছে। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাব ব্যাপকতর হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল, টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, পরিচালক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) শেখ মনজুর-ই-আলম, সমন্বয়ক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top