পাঁচ বছরের বেশি বিচারাধীন ৬ লাখ মামলা

কমছে না মামলাজট সমস্যা

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৫:৫৩; আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৬:০০

ফাইল ছবি

দেশের বিচারাঙ্গনে কমছে না মামলাজট সমস্যা। এ সমস্যা নিরসনে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হলেও তা তেমন কাজে দিচ্ছে না। দেশে বর্তমানে বিচারাধীন মামলা প্রায় ৩৭ লাখ। এর মধ্যে দেওয়ানি ১৫ লাখ আর ফৌজদারি ২১ লাখ। এগুলোর মধ্যে ৫ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন প্রায় ৬ লাখ মামলা। ১৩ হাজার মামলা উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত আছে।

মামলাজট সমস্যার পেছনে রয়েছে বিশেষ কিছু কারণ। বিচারক স্বল্পতা, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা ও ব্যবস্থাপনা ত্রুটিই এর অন্যতম কারণ। এ জট নিরসনে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, তবে তা কোনো কাজে আসছে না। এ নিয়ে বাড়ছে বিচার প্রার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও হতাশা।

এ সমস্যা নিরসনে দ্রুত নিষ্পত্তির হার বাড়ানোর তাগিদ আইন বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, বর্তমান অবস্থায় জট কমাতে হলে মামলা নিষ্পত্তির হার বাড়াতে হবে। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের নিতে হবে মহাপরিকল্পনা।

মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করার লক্ষ্যে এমন বিচারক সংখ্যা বাড়ানোর লক্ষ্যে গত ১০ বছরে সহকারী জজ পদে সারা দেশে প্রায় ১১শ’ বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতগুলোতে পর্যাপ্ত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা পদায়ন করা হয়েছে। এছাড়া ১২তম জুডিশিয়াল সার্ভিস নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে সহকারী জজ নিয়োগের কার্যক্রমও শেষ হয়েছে। বর্তমানে সারা দেশে অধস্তন আদালতে প্রায় দুই হাজার বিচারক রয়েছেন। এরপরও মামলাজট কমছে না।

এ সমস্যা সমাধানে নিজের কিছু পরিকল্পনা রয়েছে জানান আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। তিনি বলেন, মামলাজট নিয়ে আমার কিছু পরিকল্পনা আছে, সেগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে চাই। আমি প্রধান বিচারপতিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বসব। ২০২১ সালের জানুয়ারির মধ্যে একটা কর্মপন্থা বের করব- কিভাবে এ জট নিরসন করা যায়।

হয়রানি মূলক মামলার কারণেই এই সংখ্যা বেশী বলে জানান মন্ত্রী। তিনি ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি’ পন্থায় আদালতের বাইরে অনেক মামলা নিষ্পত্তি করার তাগিদ দিয়ে বলেন, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য অনেকেই আদালতে মামলা করেন। এ বিষয়ে মানুষদের নিরুৎসাহিত করতে হবে, অযথা যেন কেউ মামলা না করতে পারেন।

দেশে ফৌজদারি ও দেওয়ানী মামলাগুলোর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সারা দেশে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৬ লাখ ৮৪ হাজার ৭২৮টি। এর মধ্যে দেওয়ানি মামলা ১৪ লাখ ৭৮ হাজার ৮২৭ এবং ফৌজদারি ২১ লাখ ৬ হাজার ৬৯২টি। বাকিগুলো অন্যান্য মামলা। এসব মামলার মধ্যে ৫ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন রয়েছে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৭১৮টি দেওয়ানি এবং ২ লাখ ৩৬ হাজার ১১৬টি ফৌজদারি মামলা। এগুলোর মধ্যে উচ্চ আদালতে স্থগিত আছে ১৩ হাজার ৬০৭টি দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা। এর আগে ২০১৮ সালের জনুয়ারি পর্যন্ত ৫ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন ছিল ৩ লাখ ৪ হাজার ৫৫৯টি দেওয়ানি এবং ২ লাখ ৪৩ হাজার ৪৫৫টি ফৌজদারি মামলা। আর ওই সময় উচ্চ আদালতে স্থগিত মামলার সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ২৯০টি। এতে দেখা যায়, এক বছরে এমন মামলার সংখ্যা বেড়েছে।

বিদ্যমান ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনার পরামর্শ দিয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন বর্তমান অবস্থায় জট কমাতে হলে মামলা নিষ্পত্তির হার বাড়াতে হবে। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের নিতে হবে মহাপরিকল্পনা। তিনি বলেন, মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা কমার পেছনে বেশকিছু কারণ রয়েছে। যেমন- অনেক মামলার ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিচার শেষ না হওয়ার আগেই বিচারককে অন্যত্র বদলি করা হয়। এক্ষেত্রে নতুন বিচারক এসে মামলাটি বুঝতে সময় লাগে। অনেক মামলা আছে নতুন করে শুনানি করা হয়। এছাড়া মামলায় সাক্ষী না আসার কারণে অনেক সময় মামলা এগোতে পারে না। সময়মতো সাক্ষীকে উপস্থাপন না করায় বিচার সম্পন্ন হতে সময় লাগছে। ফলে মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাইলে বিচারক ও তাদের সহায়ক লোকবল বাড়াতে হবে, এর আগে

কম সময় মামলা মুলতবি করার পরামর্শ ও দেন এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। তিনি আরও বলেন, আদালতের বাইরে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে মামলাজট কমিয়ে আনা সম্ভব। এ লক্ষ্যে আইনও সংশোধন করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে মামলা নিষ্পত্তিতে বছরের পর বছর লাগছে। রায় যখন মেলে, তখন প্রাসঙ্গিকতাই থাকে না।

ভূয়া বা মিথ্যা মামলা কমানোর বিকল্প নেই বলে জানান সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, সরকারের শাসন ব্যবস্থায় মিথ্যা মামলার সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু বিচারকের সংখ্যা বাড়ছে না। খবর-যুগান্তর

  • এসএইচ

 



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top