ব্যাংকিং চ্যানেলে বেড়েছে অবৈধ লেনদেন
ডেক্স রির্পোট | প্রকাশিত: ১৬ মার্চ ২০২২ ১০:০১; আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৫ ১২:৩৬

দেশের আর্থিক খাতে সন্দেহজনক বা অবৈধ লেনদেন অস্বাভাবিক বেড়েছে। ব্যাংকসহ আর্থিক খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। সংস্থাটির তথ্যমতে, আর্থিক খাতে এক বছরেই সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ৪৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। অবৈধভাবে যত অর্থ লেনদেন হয়েছে, তার বেশিরভাগই ব্যাংকিং চ্যানেলে হয়েছে বলেও জানায় বিএফআইইউ।
ঘুষ-দুর্নীতি, অর্থ পাচার, মানব পাচার, চোরাচালানসহ অবৈধ যেকোনো লেনদেনকে সাধারণভাবে মানি লন্ডারিংয়ের আওতায় আনা হয়। এসব অবৈধ বা সন্দেহজনক লেনদেন বিএফআইইউতে রিপোর্ট করে ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এটিকে সন্দেহজনক লেনদেন প্রতিবেদন বা এসটিআর বলা হয়ে থাকে। বিষেশজ্ঞরা বলছেন, একটা সময় ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে এ সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যেতো না। ফলে অবৈধ লেনদেন বিষয়ে জানা যেতো না।
এখন যেহেতু জানা যাচ্ছে, সুতরাং যথাযথ তদন্তপূর্বক অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি মনিটরিং জোরদার করার পরামর্শ তাদের।
বিএফআইইউ’র প্রতিবেদন বলছে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেন ও সন্দেহজনক কার্যক্রম বেড়েছে ৪৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। মঙ্গলবার বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে লেনদেন তদন্তের দায়িত্বে থাকা সংস্থাটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এসটিআর ও এসএআর ছিল ৩ হাজার ৬৭৫টি। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২৮০টিতে। বিএফআইইউ’র প্রতিবেদনে গত ৫ অর্থবছরের এসটিআরের হিসাব দেয়া হয়েছে। সেখানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সন্দেহজনক রিপোর্ট হয় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে; তিন হাজার ৮৭৮টি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে তথ্য বিনিময় বেড়েছে বিএফআইইউ’র।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে তথ্য বিনিময় হয়েছিল ৪৯৮টি, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৯১টি এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭৮৭টি তথ্য বিনিময় হয়েছিল। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে তথ্য বিনিময় হয়েছিল এক হাজার ৪১৪টি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৩৪টি তথ্য বিনিময় হয় সিআইডির সঙ্গে, যা মোট তথ্য বিনিময়ের ২৪ শতাংশ। পর্যায়ক্রমে এনবিআর’র সঙ্গে ১৭৫টি, দুদকের সঙ্গে ১১৪টি, পুলিশের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে ৪৪টি এবং অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে ৭৪০টি তথ্য বিনিময় হয়।
এ বিষয়ে বিএফআইইউ’র প্রধান মাসুদ বিশ্বাস বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা ও সচেতনতা বাড়ায় রিপোর্ট বেড়েছে। তবে এটি শুধু দুর্নীতি বাড়ার কারণে হয়েছে তা নয়, এ বিষয়ক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সচেতনতা বৃদ্ধির কারণেও বেড়েছে। তিনি জানান, আমরা যেসব সন্দেজনক লেনদেন চিহ্নিত করি, তার ২৬ দশমিক এক শতাংশ তথ্য আসে গণমাধ্যম থেকে। গত ৭ই মার্চ বিএফআইইউ’র স্বতন্ত্র ওয়েবসাইট উদ্বোধন করা হয়েছে, যেখানে পরিচয় গোপন করে যে কেউ অভিযোগ করতে পারবেন। সেটাকে গুরুত্ব সহকারে দেখবে বিএফআইইউ। তিনি জানান, আমরা কানাডার বেগমপল্লী, মালয়েশিয়া এবং পিকে হালদার ইস্যু নিয়ে কাজ করেছি এবং এ বিষয়ে যথাযথ সংস্থাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, লেনদেন বিভিন্ন কারণে সন্দেহজনক হতে পারে। কেউ বিদেশ থেকে জমি ক্রয়, বাড়ি করা কিংবা বড় কোনো কাজের জন্য অর্থ পাঠালে সেটাও সন্দেহজনক মনে হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে অর্থপাচার, চোরাচালান, মাদক কারবারসহ বিভিন্ন অবৈধ কাজেও সন্দেহজনক লেনদেন হয়ে থাকতে পারে। এগুলো অবশ্যই সন্দেহের উদ্রেক করে। এটা মনিটরিং করা উচিত।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: