ইসলামে হাদীস সংগ্রহ

রাজ টাইমস | প্রকাশিত: ১৪ আগস্ট ২০২১ ১৯:৩৭; আপডেট: ১৪ আগস্ট ২০২১ ২০:২৯

একটি প্রাচীন হাদীস গ্রন্থ (ছবি: সংগৃহীত)

আনুষ্ঠানিক ভাবে ঠিক কখন হতে হাদীস সংগ্রহ শুরু হয় তা বলা একটু দুষ্কর। তবে একথা সত্য যে রাসুল (সাঃ)-এর জীবদ্দশা হতেই সাহাবীগণ হাদীস সংগ্রহ শুরু করেন। সেই সময় লিখন পদ্ধতির এতটা উন্নতি হয়নি, যে কারণে সাহাবীগণ হাদীস সবাই হাদীস সমূহ সংকলন করে রাখতে পারেননি। সেই সময় হাদীস সংকলনের মূল উপায় ছিল স্মৃতি শক্তি। আরবরা জাতিগত ভাবে অত্যন্ত প্রখর স্মৃতি শক্তির অধিকারী ছিলেন। তাই তাদের সংকলন পদ্ধতিও ছিল স্মৃতি নির্ভর। তবে অনেকেই কিছু কিছু হাদীস লিখে রাখতেন।
রাসুল (সাঃ)-এর সময় কোন হাদীস কোন সাহাবী নিজে তাঁর কাছ হতে শুনতে না পেলে অন্যান্য সাহাবী যারা তাঁর কাছাকাছি থাকতেন তাদের নিকট জেনে নিতেন। তাদের অসীম আগ্রহ ও জ্ঞান পিপাসাই ছিল হাদীস সংগ্রহের চালিকা শক্তি।

ঐতিহাসিকগণ হাদীস সংগ্রহের সময়কে তিনটি যুগে বিভক্ত করেছেন যেমন, সাহাবীদের যুগ, তাবেঈদের যুগ ও তাবে-তাবেঈদের যুগ। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো।

সাহাবীদের যুগ

এ সময়ের শুরু হয় রাসূল (সাঃ) জীবিত থাকা অবস্থায়। এ সময় আরবের বিভিন্ন গোত্র দূর-দুরান্ত হতে রাসূল (সাঃ)-এর দরবারে উপস্থিত হতেন ও প্রয়োজনীয় জ্ঞান সংগ্রহ করে নিজ দেশে ফিরে যেতেন। যেমন হযরত আকাবা ইবনুল হারেম তার বিয়ে সংক্রান্ত একটি মামলার রায় জানবার জন্য বহু দূর হতে মদীনায় আসেন এবং তা জেনে নিয়ে বাড়ী ফিরে যান। পরবর্তীতে সেই ফায়সালা অনুযায়ী স্ত্রীরূপে গৃহীত স্বীয় দুধ মাকে পরিত্যাগ করেন। ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় এ ধরনের অনেক ঘটনা রয়েছে। 

আসহাবে সুফ্ফার অধিবাসীগণ চব্বিশ ঘণ্টা রাসুল (সাঃ)-এর কাছাকাছি অবস্থান করে জ্ঞান লাভ করতেন। তাঁর ইন্তেকালের পর সাহাবীগণ মুসলিম জাহানের বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়েন, ফলে পরবর্তী কালে হাদীস সংগ্রহের জন্য মুসলিমগণ বিদেশ ভ্রমনের অপরিসীম কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে। এই সময় মক্কা, মদিনা, কূফা, বসরা, সিরিয়া, মিশর ইত্যাদি স্থান সমূহ হাদীস শিক্ষার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়।

বুখারী শরিফে উল্লেখ করা হয়েছে, হজরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উনাইলের নিকট হতে একটি হাদীস শ্রবণের উদ্দেশ্যে একমাস দুরত্বের পথ অতিক্রম করে গিয়েছিলেন।

হজরত মুসলিমা ইবনে মাখলাদ (রাঃ) যখন মিসরে ছিলেন তখন কিসাস সম্পর্কিত একটি হাদীস জানবার জন্য হজরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বহু কষ্ট স্বীকার করে তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে বলেন, “এই একটি হাদীস শিখবার ঐকান্তিক আগ্রহ নিয়েই আমি আপনার নিকট এসেছি এবং আমাদের একজনের মৃত্যুর পূর্বেই হাদিসটি জেনে নিতে চাই।"

হজরত ফুজালা ইবনে উবাইদ (রাঃ)-এর নিকট মিসরে একজন দূরবর্তী স্থান হতে উপস্থিত হয়ে বলেন' "আমি শুধু সাক্ষাৎ লাভের জন্য আসিনি। আমি ও আপনি একত্রে রাসুল (সাঃ) এর নিকট একত্রে একটি হাদীস শুনেছিলাম। সম্ভবতঃ তা আপনার ভালো ভাবে স্মরণ আছে এবং তাই ভালো ভাবে শুনবার জন্য আপনার নিকট এসেছি।"

হজরত মুয়াবিয়ার শাসন আমলে হজরত আবু আইয়ুব আনসারী (রাঃ) শুধুমাত্র একটি হাদীস শোনার উদ্দেশ্যে মদিনা হতে মিসরের নিভৃত পল্লীতে অবস্থানকারী হজরত আকাবা ইবনে আমের জুহানী (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হন। হাদীসটি শুনে তিনি এত দ্রুত মদিনার উদ্দেশ্যে রওনা হন যে তৎকালীন মিসরের শাসনকর্তা ইবনে মাখলাদ উপঢৌকন দেওয়ার আয়োজন করেও দিতে পারেননি।

কুরআনের কোন আয়াতের ব্যাখ্যা বা তাৎপর্যের ব্যাপারেও সাহাবীগণ দূরদেশে সফর করতেন। হজরত আবু দরদা (রাঃ) বলেন, “কুরআনের কোন আয়াত আমার নিকট দুর্বোধ্য মনে হলে এর ব্যাখ্যার জন্য যদি মক্কা হতে পাঁচ রাত্রি দূরে অবস্থিত এক ব্যাক্তির নিকট যেতে হতো তবুও আমি সেখানে যেতাম।”

সাহাবায়ে কেরাম দূরে অবস্থিত একজন আরেকজন নিকট হতে পত্রালাপের মাধ্যমেও রাসুলের হাদীস জানতে ও সংগ্রহ করতে চেষ্টা করতেন হজরত মুয়াবিয়া দামেশক হতে হজরত মুগীরার (রাঃ) নিকট কুফা নগরে এক পত্র প্রেরণ করেছিলেন। তাতে লিখেছিলেন আপনি রাসুলের নিকট যা কিছু শুনতে পেয়েছেন তা আমাকে লিখে পাঠান। তখন মুগীরা (রাঃ) তা লিখে পাঠান।

খুলাফায়ে রাশেদুন নিজ নিজ খেলাফত আমলে খিলাফতের দায়িত্ব পালন হিসাবে বিভিন্ন স্থানের দায়িত্বশীল লোকদের নিকট প্রয়োজনীয় হাদীস লিখে পাঠাতেন।

সাহাবায়ে কিরাম প্রয়োজনের সময় একজন অপরজনকে নিজ হতেই রাসুল (সাঃ) - এর হাদীস লিখে পাঠাতেন। সাহাবাগণ এক জন অন্যজনের নিকট হতে হাদীস জিজ্ঞাসা করে তার সত্যতা যাচাই করে নিতেন।

সাহাবায়ে কিরাম যে হাদীসের জন্য বিদেশ সফর করতেন এবং তা অর্জনের জন্য যে পরিমান কষ্ট স্বিকার করতে প্রস্তুত ছিলেন তার প্রমান হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর উক্তি হতে উপলব্ধি করা যায়। তিনি বলেন, আমার কাছে যখন অপর কোন ব্যক্তির বর্ণিত হাদীস পৌছিত তখন যদি তর নিকট লোক পাঠিয়ে ডেকে আনতে চাইতাম তবে তা আমি সহজেই করতে পারতাম। কিন্তু আমি তা না করে নিজেই তার কাছে যেতাম ও তার ঘরের সামনে শুয়ে পড়তাম। সে যখন ঘর হরতে বের হত তখন সে আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করত।

ইবনে আব্বাসের এ বর্ণনা হতে বুঝা যায় হাদীস সংগ্রহের ব্যাপারে তাঁরা কতটা যত্নবান ও শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। কোন হাদীস লোকমুখে শুনে সন্তুষ্ট না থেকে নিজ কানে শুনে তা গ্রহন করতেন। (চলবে)

আবু সুফিয়ান



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top