আহত তিন শতাধিক শিক্ষার্থী

স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় উত্তাল রাবি ক্যাম্পাস

রাবি প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ১২ মার্চ ২০২৩ ২৩:০৭; আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৫ ০২:০৬

ছবি: সংগৃহিত

বাসের সিটে বসাকে কেন্দ্র করে ড্রাইভারের সাথে কথা কাটাকাটি ও স্থানীয়দের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচ ক্যাম্পাস প্রতিনিধিসহ প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। সংঘর্ষের দ্বিতীয় দিনেও উত্তপ্ত রয়েছে ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কোনো সমাধান দিতে পারেনি বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন।

শনিবার এ সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি আছে শতাধিক শিক্ষার্থী। একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

রাত ১১টার দিকে স্থানীয়দের দোকান ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করলে গুরুতর আহত হয় ১৫ শিক্ষার্থী।

রোববার সকাল থেকে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করলেও বেলা গড়ার সাথে সাথে উত্তপ্ত হতে থাকে ক্যাম্পাস। পূর্বপরিকল্পিত ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ১০টায় বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে আন্দোলন করতে থাকে শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি জানায়। এখানে প্রায় ১ ঘন্টা বিক্ষোভ শেষে ক্যাম্পাসের প্রধান সড়কগুলোতে মিছিল করে উপাচার্য বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয় তারা।

সেখানে উপাচার্য উপস্থিত হলেই শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে। এসময় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে বিনোদপুর (সংঘর্ষের ঘটনাস্থল) গিয়ে তাদের সাথে মানববন্ধন করার দাবি জানালে উপাচার্য এতে সম্মত না হয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের সাবাস বাংলাদেশ মাঠে বসতে রাজি হয়। কিন্তু বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তা মানতে নারাজ। তখনই শিক্ষার্থীরা তাঁকে অবরুদ্ধ করে আন্দোলন করতে থাকে।

সেখানে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ও প্রক্টরকে পদত্যাগের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ ও স্লোগান চলমান রাখে। প্রায় দুই ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকার পর রাবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রটোকলে উপাচার্য নিজ বাসভবনে যেতে সক্ষম হয়। এরপর থেকে আন্দোলন স্থমিত হয়ে যায়। ছাত্রলীগের এহেন কর্মকাণ্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, আমাদের দাবিগুলোর তোয়াক্কা না করেই ছাত্রলীগ প্রটোকল দিয়ে উপাচার্যকে বাসভবনে পৌঁছে দিলো। আমাদের মাঝেই দুইটা গ্রুপ হয়ে গেল! তার মানে তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর রক্ত বৃথা করে দিল ছাত্রলীগ।

একই সময়ে বিশ^বিদ্যালয় প্রধান ফটকে অবস্থান নেন শতাধিক শিক্ষার্থী। এসময় তারা ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক গাছ, কাঠ ও টায়ার জ্বালিয়ে অবরুদ্ধ করে। তাদের বিপরীত পাশে অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা।

এর আগে, গতকাল সন্ধ্যা ৬ টা থেকে স্থানীয়দের সাথে সংঘর্ষ শুরু হলে রাত ১০ টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে অনিবার্য কারণ দেখিয়ে ২ দিনের জন্য বিশ^বিদ্যালয়ের সকল ক্লাস-পরিক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত জানায় রাবি উপাচার্য।

উল্লেখ্য, বগুড়া থেকে ‘মোহাম্মদ’ নামের একটি বাসে রাজশাহী আসছিলেন বিশ^বিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আলামিন আকাশ। তিনি রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর অনুসারি। বাসে আসনে বসাকে কেন্দ্র করে তাঁর সঙ্গে বাসের চালক শরিফুল ও চালকের সহকারী রিপনের কথা কাটাকাটি হয়। পরে বাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর ফটকে পৌঁছালে রিপনের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর আবার বাগবিতণ্ডা হয়।

এ সময় স্থানীয় এক দোকানদার এসে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এ সময় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে ওই দোকানদারের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এক জোট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। তখন শিক্ষার্থীরাও তাদের পাল্টা ধাওয়া করেন।



বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top