ঘুম থেকে তুলে

রাবি শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের মারধরের অভিযোগ

রাবি প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ২০ মে ২০২২ ০৪:৪২; আপডেট: ২০ মে ২০২২ ০৪:৪২

ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মতিহার হলের এক শিক্ষার্থীকে মধ্য রাতে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে মারধরের ঘটনার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের ৭ কর্মীর বিরুদ্ধে। বুধবার রাত ১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হলের ২য় ব্লকের ২য় তলায় ১৩৬ নং রুমে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার শিকার মো. নূর আলম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। আর অভিযুক্তরা হলেন তানভির, জোবায়ের, শাহীন, মানিক, স্বদেশ, নাবিল এবং জারিদ তারা সকলেই বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তারা অনেকেই স্থানীয় ও সকলেই ছাত্রলীগকর্মী বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে ঘটনার মুল হোতা স্বদেশ। তার রুমেই ঘটনাটি ঘটেছে। স্বদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি ও রাবি স্কুলের ছাত্রলীগের সাবেক সেক্রেটারি ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও হল সূত্রে জানা যায়, মতিহার হলের গণরুমে রুমে অবস্থান করছিলেন নূর আলম। তবে প্রভোস্টের মাধ্যমে হলের তৃতীয় ব্লকে সিট পেয়েছে। এসময় অভিযুক্তরা রাত ১ টার দিকে গণরুমে এসে তাকে ডেকে ২৩৬ নং রুমে নিয়ে তাকে বলতে থাকে তোকে আমরা সিটে তুলেছি এই সিটে তোকে বেড শেয়ার করে থাকতে হবে না হয় গণরুমেই থাকতে হবে। নূর আলম তাদের প্রস্তাব অস্বীকার করায় ৭ জন অভিযুক্তের মধ্যে তানভীর ও জোবায়ের তার ঘাড়ে কিল-ঘুষি পিঠে লাথি মারতে থাকে। মারধরের একপর্যায়ে ভুক্তভোগী অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মাথা ঘুরে পড়ে যাবে এমন অবস্থায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অভিযুক্তরা এসময় তুই যদি বিভাগের ছোট ভাই না হতি না হলে তোকে খুঁজে পাওয়া যেতো না বলে হুমকি দিতে থাকে। এসময় হল ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককেও উপেক্ষা করে তারা।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নূর আলম বলেন, আমি খুব ভয়ে ও আতঙ্ক আছি। আমাকে রাত ১ থেকে আড়াইটা পর্যন্ত মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। আমি আর নিতে পারছিনা। আমার সাথে যে অন্যায় করা হয়েছে আমি তার সুষ্ঠু বিচার চাই। আমার মতো আর কোনো শিক্ষার্থীকে এমন নির্যাতনের স্বীকার যেনো না হতে হয়। আমি আমার বরাদ্দকৃত সিটে থাকতে চাই।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত স্বদেশ বলেন, "এটা আমাদের বাংলা বিভাগের আভ্যন্তরীণ বিষয়। আমিই তাকে সিট দেয়ার জন্য প্রভোস্টের কাছে সুপারিশ করেছিলাম। সিটে উঠে বড় ভাই দের সাথে বেয়াদবি করায় আমার রুমে মীমাংসার জন্য ডেকেছিলাম। সেখানেই সে আমার সামনে বড় ভাই দের সাথে বেয়াদবি করে।"
কিন্তু এরজন্য তারা ভুক্তভোগীর শরীরে আঘাত করতে পারেন কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, "নূর আলম একটু কম বুঝে সহজ-সরল ছেলে। তাকে ব্যবহার করে কেউ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে চাইতে পারে। এখানে তানভীর, জোবায়ের সবাই তার বিভাগের বড় ভাই। তাকে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। সেটা মিথ্যা অভিযোগ।"

এ বিষয়ে হলের আবাসিক শিক্ষক সুবেন কুমার চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এই বিষয় কিছুই না। মাত্র হলে আসলাম। তবে একাধিকার কল দিয়ে হল প্রাধ্যক্ষকে পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সরকার সুজিত কুমার বলেন, র‌্যাগিংয়ের নামে নির্যাতন করা অবশ্যই অন্যায়। আমরা অভিযুক্তদের বিষয়ে তদন্ত করবো এবং যদি সত্য প্রমাণিত হয় তাহলে প্রত্যেককে চিহ্নিত করে অবশ্যই তাদের ছাত্রত্ব বাতিল হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ড.তারেক নূর বলেন,অভিযোগটি পাওয়ার সাথে সাথে আমি সংশ্লিষ্ট হল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করেছি। এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের সবাইকে ডেকে পাঠিয়েছি। আজকে বিকালের মধ্যেই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অভিযুক্তদের আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এবিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসহাবুল হক বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আমার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছে। বিষয়টি তদন্ত করতে আমি একজন সহকারী প্রক্টরকে দায়িত্ব দিয়েছি। অভিযোগ প্রমানিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top