দুর্ভোগের ঘানি টানছেন নগরবাসী

রাজশাহীতে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা

বিশেষ প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ২৫ মার্চ ২০২৩ ২৩:০৮; আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৩ ২৩:০৮

ফাইল ছবি

রাজশাহীতে কাটছে না নিত্যপণ্যের বাজারের অস্থিরতা। রমজানকে ঘিরে এখানকার বাজারে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিসপত্রের দাম। মাছ, মাংস ও মুরগির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কাঁচা সবজির দামও। একই পণ্য সকাল ও বিকেলে বিক্রির দামেও দেখা যাচ্ছে তুমুল ফারাক। এতে করে দুর্ভোগের ঘানি টানতে হচ্ছে নগরবাসীকে। কিন্তু বাজার মনিটরিং-এর জন্য গত দুইদিন ধরে রাজশাহীতে কাউকেই দেখা যায়নি।

বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে কেউ কিনেছেন ছোলা, মুড়ি, খেজুর। আবার কেউ কিনেছেন সবজি, মাছ, মুরগি, ডিম। কারও হাতে মাংস, আলু আর মসলা। এরমধ্যে কাঁচাবাজারগুলোতে উপচে পড়া ভিড় থাকলেও হাসি নেই ক্রেতা-বিক্রেতা কারও মুখেই। ক্রেতারা বলছেন, বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম চাইছে। রমজানের বাজার তাই বাধ্য হয়ে কিনতে হচ্ছে। আর বিক্রেতাদের দাবি, বেশি দামে পণ্য কিনতে হয়েছে, তাই বিক্রি করতে হচ্ছে বাড়তি দামে। এতে ক্রেতা অনেক কমে গেছে।

বাজার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সারাদেশের ন্যায় রাজশাহীতেও কাটছে না নিত্যপণ্যের বাজারের অস্থিরতা। বেশ টালমাটাল নিত্যপণ্যের বাজারে কমছেই না চাল, ডাল, ভোজ্য তেল, মাছ-মাংসের দাম। উল্টো নতুন করেযেন বাড়তে শুরু করেছে কাঁচা সবজির দাম। বিক্রেতা ও মজুতদারের উদ্ভুত আচরণে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতারা। রাজশাহী নগরীর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, তুলনামূলক সব বাজারেই ক্রেতা উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি। রোজার আগে থেকেই উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়, মাছ-মাংসের দোকানগুলোতে বেচা-বিক্রি বেশি হওয়ায় দোকানিরাও খুশি। তবে দাম অতিরিক্ত হওয়ায় খুব বেশি লাভ করতে পারছেন না বলে দাবি খুচরা বিক্রেতাদের।

বাজারের মুরগির দোকান ঘুরে দেখা যায়, কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বেড়ে যায় ব্রয়লার মুরগির দাম। বৃহস্পতিবার সকালে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বিকেলের পর থেকেই ১০ টাকা বাড়ানো হয় ব্রয়লারের দাম। এছাড়াও প্রতি কেজি দেশি মুরগি সাড়ে ৫’শ থেকে ৬’শ টাকা, সোনালী মুরগি ৩’শ-৩’শ ২০ টাকা, সাদা লেয়ার ৪’শ, লাল লেয়ার ৪’শ ৫০ টাকা, পাতিহাঁস ৪২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর আগের মতোই গরুর মাংস ৭০০ টাকা ও খাসির মাংস ১১’শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। তবে প্রতি হালি সাদা ডিম ৪০ টাকা, লাল ডিম ৪৪ টাকা ও হাঁসের ডিম ৬০ টাকায় ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে।

এদিকে মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, কয়েক দিনের ব্যবধানে আবারও প্রতি কেজিতে জাত ভেদে ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে প্রায় সব রকম মাছের দাম। আকার ভেদে প্রতি কেজি রুই ৩’শ টাকা থেকে ৪’শ ৫০ টাকা, মৃগেল ৩’শ টাকা, পুটি মাছ ৬’শ টাকা, রুপচাঁদা ১২’শ টাকা, পাঙ্গাস ২’শ ৫০ টাকা, সিলভার ২’শ ৫০ টাকা, পাবদা ৬’শ টাকা, আইড় মাছ ৮’শ টাকা, কাতলা ৩৫০ টাকা থেকে ৬’শ টাকা, ইলিশ ৮’শ থেকে ১৪’শ, কৈ ৪’শ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ টাকা, চিংড়ি ৮’শ টাকা থেকে ১২’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে চালের বাজারে দেখা যায়, নতুন করে দাম বাড়েনি বললেই চলে। বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৭৫ টাকা, জিরাশাল ৭০ টাকা, আটাশ ৭০ টাকা, চিনিগুড়া ১৪৫ টাকা, কালোজিরা ১২৫ টাকা, কাটারিভোগ ৯০ টাকা, বাসমতি ৮৫ টাকা, স্বর্ণা ৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া সবজির মধ্যেও প্রায় প্রতিটিরই দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। এমনকি সকালের দামের সঙ্গে মিল থাকছে না বিকেলের দামে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকালে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া বেগুন একই দোকানে কিনতে হয়েছে ৬০ কিংবা ৭০ টাকায়। এছাড়াও শসা ৮০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, আলু ২০ টাকা, পটল ৭০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, টমেটো ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, লাউ ৪০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, কলা প্রতি হালি ২০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, সজনা ১২০ টাকা ও লেবু প্রতি হালি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচের দাম। আগের মতোই প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪০ টাকা ও কাঁচা মরিচ ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়াও জাতভেদে প্রতি কেজি রসুন ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা ও আদা ১২০ টাকা থেকে ১৩০ টাকায় পাওয়া গেছে। শাকের মধ্যে পুইশাক ৩০ টাকা, লাল শাক ২৫ টাকা ও সবুজ শাক ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রতিবছর রমজান এলেই জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী সারা বছর অপেক্ষায় থাকে এ মাসের জন্য। এ সময় সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থা ব্যবসায়ীদের নিয়ে সভা-বৈঠক করে নানা নির্দেশনা দিলেও শেষ পর্যন্ত তা বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনো কাজে দেয় না। সরকারের পক্ষ থেকে মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা তা মানেন না।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top