অপরিকল্পিত নগরায়ণে ডুবেছে রাজশাহী নগরী

রাজ টাইমস | প্রকাশিত: ৮ অক্টোবর ২০২৩ ১৯:৪৩; আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:৩২

ছবি: সংগৃহীত

অপরিকল্পিত নগরায়ণে ডুবছে রাজশাহী নগরী। বাছবিচারহীনভাবে নিচু ডোবা, জলাশয় ও পুকুর ভরাট ভবন তৈরি ও ফসলি জমিতে নির্বিচার আবাসন গড়ে তোলার প্রবণতায় ঘটছে বিপর্যয়। এ ছাড়া সড়কের চেয়ে ড্রেনের উচ্চতা বেশি হওয়ায় ২০ ঘণ্টার বৃষ্টিতে ডুবে যায় গোটা রাজশাহী নগরী।

প্রকট জলাবদ্ধতায় নগরীর অনেক বাড়িঘরে ঢুকেছে বৃষ্টির পানি। বৃষ্টি থামার ২৪ ঘণ্টা পার হলেও নগরীর নিম্নাঞ্চলে এখনো পানি জমে রয়েছে। নগরীর গলি সড়কগুলোতেও পানি রয়ে গেছে। অনেক ঘর থেকে এখনো নামেনি পানি।

এদিকে দুর্ভোগকবলিত নগরবাসী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ২০ বছরে নগরীর অধিকাংশ খাল, ডোবা, জলাশয় ও পুকুর ভরাট করে আবাসন এবং সড়কপথ তৈরির কারণে গত বুধ ও বৃহস্পতিবারের ভারি বর্ষণে হাঁটু-কোমরপানিতে তলিয়ে যায় নগরী। ইতোমধ্যে কোমরপানিতে নিমজ্জিত নগরীর প্রধান সড়কে নৌকা চলাচলের ছবিও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। গ্রিন সিটির মলিন বাস্তবতা নিয়ে উঠতে শুরু করেছে হাজারও প্রশ্ন।

নগরীর ভুক্তভোগী মানুষ আরও বলছেন, শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে যা চকচকে সড়ক বানিয়ে রঙিন বাতি জ্বালিয়ে চমক দিতে গিয়ে ঘটেছে অনেক বিপত্তি। অনেক ক্ষেত্রেই মানা হয়নি নিয়মনীতি। সড়ক বানানো হলেও সেই সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি হয়নি ড্রেনেজব্যবস্থা। নগরীর অধিকাংশ সড়কের পার্শ্ববতী ড্রেনগুলো সড়ক উচ্চতার চেয়ে বেশি উঁচু। ফলে সহজে নামতে পারছে না বৃষ্টির পানি। সড়কের পানি ড্রেনে যাওয়ার বদলে ড্রেন উঁচু হওয়ায় ড্রেনের পানি উপচে সড়কে পড়ছে।

আরও অভিযোগ উঠেছে, রাজশাহী সিটি করপোরেশন নগরীতে যেসব ড্রেন নির্মাণ করেছে, সেগুলো কোনো সুষ্ঠু পরিকল্পনা ছাড়াই করা হয়েছে। ছোট ড্রেনগুলোকে বড় ড্রেনের সঙ্গে ঠিকমতো সংযুক্ত করা হয়নি। সরু ও সংকীর্ণ সড়কের কোলঘেঁষে তৈরি হয়েছে বহুতল আবাসন ভবন ও দোকানপাট। এসব ভবনের পানি ড্রেন উপচে খোলা সড়ককে ভাসিয়ে দিয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওয়াসার হাতে ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজব্যবস্থা থাকার কথা থাকলেও রাজশাহীতে এখনো পয়ঃনিষ্কাশনব্যবস্থা সিটি করপোরেশনের হাতেই রয়ে গেছে।

রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী নুর ইসলাম জানান, নগরীতে তাদের ছোট-বড় ২৭৭ কিলোমিটার ড্রেন রয়েছে। আরও কিছু ড্রেন নির্মাণের কাজ চলমান আছে। কিন্তু ড্রেনগুলোর পানি নিষ্কাশন সক্ষমতা কত তার প্রাক্কলন ছাড়াই এসব ড্রেন তৈরি করা হয়েছে। কোনো ড্রেনের পানি কোন পথে নামবে সে সবও আগে ভাবা হয়নি। এসব ড্রেন নির্মাণ ও তদারকিতে এলাকাভিত্তিতে রাসিকের কাউন্সিলররাই ছিলেন ঠিকাদারের ভূমিকায়। ফলে ভারি বর্ষণের সময় এসব ড্রেন বিশেষ কাজে আসেনি। দেড় দুই ঘণ্টার মধ্যে যেখানে পানি নেমে যাওয়ার কথা সেখানে পানি নামতে সময় লেগেছে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজশাহী ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী পারভেজ মাহমুদ বলেন, ক্রমবর্ধমান নগরায়ণের ফলে সড়ক, আবাসন ও ড্রেনেজব্যবস্থাসহ পয়ঃনিষ্কাশনব্যবস্থার সামঞ্জস্য থাকা জরুরি। কিন্তু রাজশাহীতে যেখানে-সেখানে গড়ে উঠছে বহুতল আবাসন ভবন। যদিও সেখানে নেই প্রয়োজনীয় সড়ক ও ড্রেনেজব্যবস্থা। একটা বাসযোগ্য আধুনিক নগরীর ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজব্যবস্থাকে লাইফলাইন বলা হয়। প্রকৃত স্যুয়ারেজ লাইন বলতে, যা বোঝায় তা রাজশাহীতে এখনো নেই। পানি নিষ্কাশনের জন্য আছে কিছু ড্রেন। এসব ড্রেনের পানি নিষ্কাশন সক্ষমতা কম। আবার ড্রেনগুলো দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার না হওয়ার কারণে আকস্মিক বর্ষণে ডুবেছে নগরী। ড্রেনগুলো নিয়মিতভাবে পরিষ্কার করা ড্রেনেজব্যবস্থা সচল রাখার পূর্বশর্ত।

এদিকে বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরও রাজশাহী নগরীর নিম্নাঞ্চলের কিছু কিছু গলিপথে রয়ে গেছে পানি। নগরীর চাকপাড়া, মেহেরচন্ডি, কাদিরগঞ্জ, বিলশিমলা, ব্যাংক কলোনি, ছোট ও বড় বনগ্রাম, সিরোইল ও আসাম কলোনি, উপশহর, সপুরা, বাগানপাড়া, হাজরা পুকুর, বালিয়াপুকুর, মঠপুকুর, হড়গ্রাম নতুনপাড়া, কোর্ট কলেজপাড়া, ডিঙ্গাডোবা, দাসপুকুর প্রভৃতি এলাকার অনেক বাড়ি থেকে এখনো বর্ষার পানি বেরোতে পারেনি। ফলে দুর্ভোগে পড়েছে এসব এলাকার মানুষ। মহল্লা থেকে বেরিয়ে মূল সড়কে উঠতে গিয়ে তাদের হাঁটুপানি ভাঙতে হচ্ছে।

অন্যদিকে একটা ভারি বর্ষণে নগরীর বেশ কিছু নতুন তৈরি সড়কেও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে যেনতেন প্রকারে তৈরি এসব সড়কের ওপরের পিচ বৃষ্টিতে ধুয়ে গেছে। নগরীর বিমান সড়কের দায়রাপাক মোড় এলাকায় নতুন তৈরি সড়কটির কয়েক মিটার এলাকার পিচ ও কার্পেটিং উঠে খোয়া বেরিয়ে গেছে। চারলেন এই সড়কটির অনেক জায়গা দেবে গেছে ও হালকা গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কয়েকশ কোটি ব্যয়ে দুই বছর আগে সড়কটি তৈরি করা হয়।

ভদ্রা মোড় থেকে নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল চারলেন সড়কটিতেও পিচ উঠতে শুরু করেছে। নির্মাণের সময়েই এই সড়কটির মান নিয়ে এলাকার মানুষ প্রশ্ন তুলেছিলেন। গ্রেটার রোডের কাদিরগঞ্জ এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে বড় গর্ত। গোরহাঙ্গা রেলগেট থেকে নওহাটা পর্যন্ত সড়ক ছাড়াও খড়খড়ি থেকে রুয়েট পর্যন্ত সড়কের পিচ আলগা হতে শুরু করেছে।

জানা গেছে, এসব সড়কের কোনো কোনোটি মাত্র এক-দেড় বছর আগে নতুন করে তৈরি করা। এসব সড়কের একেকটি তৈরিতে ব্যয় হয়েছে কয়েকশ কোটি টাকা করে।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top