অভিযানে মেলেনি কোন কিছু

পুলিশ হেফাজতে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা

বিশেষ প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ৩ নভেম্বর ২০২৩ ২৩:৫৩; আপডেট: ৪ নভেম্বর ২০২৩ ০০:৫৩

সংগ্রহীত

রাজশাহীর বিশিষ্ট প্রসূতী ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফাতেমা সিদ্দিকা পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে রাজশাহী নগরীর বড়বনগ্রাম এলাকার তার নিজ বাসভবন থেকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। এ বিষয়ে আরএমপির মুখপাত্র ও নগর বিশেষ শাখার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জামিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ডা. ফাতেমার সিদ্দিকাকে আটক করা হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’  পরিবারের সদস্যরা বলেন, মূলত ব্যক্তিগতভাবে তাকে এবং তার পরিবারকে হয়রানীর জন্যই একটি মহল এঘটনা ঘটিয়েছে।

আজ শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) বিশেষ শাখা (ডিবি) ও শাহ মখদুম থানা-পুলিশের একটি যৌথদল বিশিষ্ট প্রসূতী ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফাতেমা সিদ্দিকার বাড়িতে প্রবেশ করে। পরে পুলিশ বাড়িতে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও বিভিন্ন রুমে তল্লাশী চালায়। এসময় পবিত্র কুরআনসহ বিভিন্ন ইসলামী বইপত্র ছাড়া কোন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী বা রাষ্ট্র বিরোধী কোন কিছুর উপস্থিতি না পেয়ে সন্ধ্যায় ফাতেমা সিদ্দিকাকে পুলিশের গাড়িতে করে থানায় নেয়া হয়। এদিকে অভিযানের অংশ নেয়া পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে কোন কথা না বলেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। তবে পুলিশের একটি সূত্র বলছে, চিকিৎসক ফাতেমা সিদ্দিকার বাড়িতে জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা গোপন বৈঠক করছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানের সময় বাড়ির সদস্য ছাড়া বাইরের কাউকে পাওয়া যায়নি। এমন বাড়ি থেকে সন্দেহজনক কোনকিছু জব্দও করা হয়নি। নিরাপত্তা ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফাতেমা সিদ্দিকাকে থানায় নেয়া হয়।

উত্তরবঙ্গে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে যে কয়জন চিকিৎসক রয়েছেন তাদের মধ্যে ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা অন্যতম একজন চিকিৎসক। তিনি নগরীর লক্ষ্মীপুরে মাদারল্যান্ড ইনফার্টিলিটি সেন্টার নামের একটি বেসরকারী হাসপাতালের কর্ণধার। হাসপাতালের সূত্র জানায়, একটি মহল ডাক্তার ফাতেমা সিদ্দিকার পেশাগত কাজে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ৪ এপ্রিল তার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার সময় হাতেনাতে রাজশাহীর উপ-কর কমিশনার মহিবুল ইসলাম ভুঁইয়াকে গ্রেপ্তার করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এঘটনায় মহিবুল ইসলাম ভুঁইয়া এখনো কারাগারে রয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কর্মকর্তা এবং পরিবারের সদস্যরা বলেন, মহিবুল ইসলাম ভুঁইয়া একজন সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন। এহেন পরিনতিতে ডা. ফাতেমা সিদ্দিকাকে হয়রানী ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য একটি পক্ষ সবসময় তৎপর রয়েছে। যার কারণে পুলিশকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তার বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অথচ ডা. ফাতেমা সিদ্দিকার বাড়ী থেকে সন্দেহজনক কোনকিছু জব্দ বা কোন ব্যক্তিকে আটক করা হয়নি। মূলত ব্যক্তিগতভাবে তাকে এবং তার পরিবারকে হয়রানীর জন্যই একটি মহল এঘটনা ঘটিয়েছে।

এদিকে নাম প্রকাশ না করে এক ডাক্তার বলেন, গত ২৯ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আরএমপির চন্দ্রিমা থানার কৃষ্টগঞ্জ বাজারের পল্লি চিকিৎসক এরশাদ আলী দুলালকে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। রাত ৯টার দিকে নগরীর সিটিহাট এলাকায় রাস্তার পাশে তার রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়। এরপর রাত পৌনে ১২টার দিকে চেম্বার শেষ করে ফেরার পথে নগরীর বর্নালী খুন হন যৌন ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গোলাম কাজেম আলী আহমদ। একরাতেই দুই চিকিৎসক খুনের ঘটনার এখনও কোনো রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। দুই খুনের ঘটনায় মামলা হলেও আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা নিয়ে অন্ধকারে রয়েছে পুলিশ। ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের ডা. কাজেমের খুনিদের ধরতে কর্মসূচি দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)। কর্মসূচি অনুযায়ী শনিবার ও আগামী রোববার বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করবেন চিকিৎসকেরা।

বিএমএ রাজশাহীর সভাপতি ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দুই দিন একঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করা হবে। এরপরও তদন্তের অগ্রগতি না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি আসতে পারে।’ এমন অবস্থায় প্রসূতী ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফাতেমা সিদ্দিকা কে যদি অন্যায়ভাবে গ্রেফতার বা হয়রানী করা হয় তবে ডাক্তারদের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজের পাশাপাশি নগরীর চিকিৎসা সেবায় বড় ধরণের বিশৃংঙ্খলার সৃষ্টি আশঙ্কা হতে পারে বলে মতামত ব্যক্ত করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ডাক্তার।

হাসপাতালের সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ চিকিৎসক ফাতেমা সিদ্দিকা কে যদি অন্যায়ভাবে গ্রেফতার বা হয়রানী করা হয় তবে এর বিরুপ প্রভাব রোগীদের মধ্যে পড়বে এবং তারাই বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে ফাতেমা সিদ্দিকার কাছে রোগীরা চিকিৎসা সেবা গ্রহন করেন। এরমধ্যে ‘ইনফার্টিলিটি’ এবং অপারেশনের জটিল রোগী রয়েছেন। এসব রোগীদের পরিকল্পিক ভাবে সময়মতো চিকিৎসা গ্রহন করতে হয়। সময়মতো চিকিৎসা না হলে রোগীদেরও বড় ধরণের শারিরীক ক্ষতির আশঙ্কা রয়ে যায়।

এদিকে রাতের শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা পুলিশ হেফাজতে ছিলেন বলে জানা গেছে। 



বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top