রাজশাহীতে দেশীয় অস্ত্রসহ নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কিশোর গ্যাং ভীত নগরবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:০৯; আপডেট: ২ মে ২০২৪ ১৮:৫২

ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী মহানগরীতে তৈরি হয়েছে নতুন আতঙ্ক। শিক্ষানগরী এখন কিশোর গ্যাংয়ের ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকছে। সন্ধ্যা হলেই পাড়া-মহল্লায় তারা বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছে। পাশাপাশি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদেরও তারা করছে উত্ত্যক্তসহ যৌন হয়রানি। এর মধ্যে ৭ জনের একটি গ্রুপকে আটক করেছে পুলিশ।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের এক তথ্যমতে, বছর দুয়েক আগে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট নগরীর পাঁচ শতাধিক কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যের ডাটাবেজ তৈরি করে। কিন্তু পুলিশের যথাযথ নজরদারির অভাবে কিশোর গ্যাংয়ের নতুন নতুন গ্রুপ তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে এরা ভোরবেলা ও সন্ধ্যা রাতের পর ধেকেই বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠে। সন্ধ্যা হলেই এসব কিশোর দলবেঁধে মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে সড়কে নেমে পড়ে।

বিভিন্ন সড়কে মোটরসাইকেল রেসের পাশাপাশি নারীদের শাড়ি-ওড়না ধরে টান দেয়। এমন কি যৌন হয়রানির মতো ঘটনা ঘটায়। সুযোগ পেলেই তারা ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে। সম্প্রতি নগরীর শাহ মখদুম থানার গাংপাড়া এলাকায় অস্ত্র উঁচিয়ে নৃত্য করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, বাদ্যের তালে তালে চাইনিজ কুড়াল, ধারাল ছুরি, রাম-দা ও অন্য দেশীয় অস্ত্র উঁচিয়ে কিছু কিশোর নৃত্য করছে। মঙ্গলবার রাতে এই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার শুরু হয়। এরপরই পুলিশ তাদের চিহ্নিত করতে মাঠে নামে।

মঙ্গলবার রাতভর অভিযানে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে সাত কিশোরকে গ্রেফতার করে আরএমপির শাহমখদুম থানা পুলিশ। এরা সবাই নগরীর শাহমখদুম থানা এলাকার বাসিন্দা। এর আগে চলতি বছরের ২ মে চন্দ্রিমা থানার ছোট বনগ্রাম পশ্চিম পাড়া এলাকায় এই গ্রুপের হামলায় ৪ জন যুবক গুরুতর আহত হয়। সিয়াম নামে এক কিশোরের সঙ্গে টেন স্টার গ্রুপের প্রধান প্রেম নামের এক কিশোরের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে তর্কবিতর্ক হয়।

এর জের ধরে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে সিয়াম আকাশ, সোহান ও মাহিমকে কোপায়। এদের বিরুদ্ধে চন্দ্রিমা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর দিনের বেলায় নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় ছিনতাইকারীদের আঘাতে মাথায় গুরুতর আঘাত পান রাজশাহী কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র নিশাদ আকরাম রিংকু। ১৬ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে গত ৩ অক্টোবর তিনি মারা যান। চলতি বছরের ৭ এপ্রিল ছিনতাই করে পালানোর সময় অনিক (১৯) নামের এক কিশোর নগরীর ডাবতলা এলাকায় মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়।

এ ঘটনায় তার আরেক সহযোগী মারুফ হোসেন (১৮) মারাত্মক আহত হয়। গত ২৯ অক্টোবর রাতে রাজশাহী রেলস্টেশন এলাকায় সশস্ত্র ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন দুই কলেজছাত্র কৌশিক ও অভিজিৎ। ছিনতাইকারীদের ধারাল অস্ত্রের আঘাতে তারা দুজনই হাসপাতালে ভর্তি হন। কৌশিকের বুকে ৫০টি এবং অভিজিতের বুকে ৩০টি সেলাই দিতে হয়েছে।

এছাড়াও এই বয়সেই তাদের বেশির ভাগই মাদকাসক্ত। রাত ১১টার পর বিভিন্ন সড়ক ও মোড়ে মোড়ে ওঁত পেতে থাকে। সুযোগ পেলেই তারা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ছিনতাই করে। ভোরে ঢাকা থেকে ট্রেনে বা বাসে আসা যাত্রীরাই ছিনতাইচক্রের প্রধান টার্গেট। এ সময়টাই ছিনতাইকারী দৌরাত্ম্য মারাত্মকভাবে বেড়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর গ্যাংয়ের উত্থান ঘটে বলে স্বীকার করেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন কর্মকর্তা। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দেড় বছর আগে কিশোর গ্যাংয়ের প্রায় ৫০০ সদস্যের ডিজিটাল ডাটাবেইজ তৈরি করা হয়েছিল। তবে এখন এই সংখ্যা অন্তত ৬৫০। বিভিন্ন এলাকায় নতুন নতুন গ্রুপ তৈরি হচ্ছে। তবে তাদের ওপর পুলিশের কড়া নজরদারিও রয়েছে। কোনো অপরাধ করে কেউই পার পাবে না। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ারও কিছু নেই।’



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top