পুঠিয়ায় মৃত্যু ঝুঁকিতে শীল-পাটা শ্রমিকরা

আরিফ সাদাত, পুঠিয়া | প্রকাশিত: ১৩ অক্টোবর ২০২০ ২৩:৪৫; আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২০ ০১:৪৫

কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা না মেনে শীল-পাটার কারখানায় কাজ করতে গিয়ে অকুপেশনাল হেল্থ ডিজিস রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন শ্রমিকরা। গত ১০ বছরে কারখানা গুলোতে কাজ করতে গিয়ে অকালে প্রাণ হারিয়েছেন ২০ জন শ্রমিক। আর রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন অন্তত ১২ জন শ্রমিক।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিবপুরহাট এলাকার জহুরুল ইসলাম নামের এক ব্যাক্তি ১৯৯৮ সালে যশোর জেলার নওপাড়া এলাকায় বেড়াতে যান। পরে তিনি সেখানে শীল-পাটা তৈরির কাজ শিখে এসে নিজ এলাকায় কারখানা স্থাপন করেন। শুরুতে তার ব্যবসায় ব্যাপক লাভজনক হওয়ায় স্থানীয় অনেকেই এই শীল-পাটা তৈরির কারখানা চালু করেন। পাথর কেটে শীল পাটা তৈরির কাজ করতে গিয়ে শ্রমিকরা চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন। যার ফলে বর্তমানে এই কাজে শ্রমিকদের আগ্রহ না থাকার কারণে এখন মাত্র তিনটি কারখানায় শীল-পাটা তৈরি করা হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শিবপুরহাট এলাকায় বর্তমানে ইসমাইল হোসেন, ইব্রাহিম ও ইয়াকুব আলী নামের তিন ব্যক্তির কারখানা চালু রয়েছে। সেখানে পাথর কেটে শীল-পাটা তৈরির কাজ করছেন প্রায় ১৫ জন শ্রমিক। এদের মধ্যে বেশীরভাগ শ্রমিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করছেন না।

তালেব আলী নামের এক শ্রমিক বলেন, বর্তমানে আমাদের কাজের আকাল চলছে। তাই পরিবারের চাহিদা মেটাতে আমাদের পাথর কাটা কাজ করতে হচ্ছে। কারখানায় কাজ করলে মালিক পক্ষ আমাদের কোনো স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম দেয় না। আর মুজুরী থেকে অনেকেই স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম কিনতেও চায় না। যার কারণে অনেক শ্রমিকদের শ্বাসকষ্ট শুরু হচ্ছে।

তবে এ বিষয়ে কারখানার মালিকরা কোনো প্রকার কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

বানেশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান গাজি সুলতান বলেন, শীল-পাটা তৈরির কাজ করতে গিয়ে এই ইউনিয়ন এলাকায় গত ১০ বছরে অন্তত ২০ জন শ্রমিক অকালে প্রাণ হারিয়েছেন। বর্তমানে ফুসফুস আক্রান্ত রোগি রয়েছে আরো ১০/১২ জন। এর মধ্যে জাগিরপাড়া গ্রামের ১২ শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া ধলাট গ্রামের ৩ জন, শিবপুরহাট ২ জন ও রঘুরামপুর গ্রামের ১ জন শ্রমিক মারা গেছেন। সর্বশেষ গত ২৯ সেপ্টেম্বর জাগিরপাড়া গ্রামের মসলেম উদ্দীনের ছেলে হাছেন আলী (২১) নামের এক যুবক শীল-পাটা কারখানায় কাজ করতে গিয়ে ফুসফুস আক্রান্ত হয়ে অকালে প্রাণ হারিয়েছেন। একমাত্র উপার্জনকারী ব্যাক্তির অকালে মৃত্যু হওয়ায় অনেক পরিবার গুলো মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

জাগিরপাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুল মালেক বলেন, কারখানার মালিকরা বেশী মুজুরী দেয়ার প্রলোভনে এলাকার অভাবী মানুষেরা পাথর কেটে শীল-পাটা তৈরির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কাজের শুরুতে শ্রমিকরা শারীরিক সমস্যার বিষয়টি বুঝতে না পারলেও ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে তাদের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এরপর অর্থাভাবে আক্রান্তরা সঠিক চিকিৎসা করাতে না পেরে মৃত্যুর দিনক্ষণ গোনা ছাড়া তাদের হাতে আর কিছুই থাকে না। কারখানা মালিক পক্ষও রোগাক্রান্তদের কোনো সহায়তা দেয় না। আমরা ইতিমধ্যে পরিষদ থেকে ওই অসহায় পরিবার গুলোকে সার্বিক সহযোগিতা করে আসছি।

এ ব্যাপারে পুঠিয়া স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নাজমা আক্তার বলেন, শ্রমিকরা স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার না করে পাথর কাটা কাজ করছে। এতে করে তারা অল্প দিনের মধ্যে অকুপেশনাল হেল্থ ডিজিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এদের মধ্যে অনেকই ফুসফুস আক্রান্ত হয়ে ক্যান্সারের মত কঠিন রোগও হতে পারে। আক্রান্তদের সঠিক সময়ে চিকিৎসা সেবা না নেয়ার কারণে অনেকেই অকালে প্রাণ হারাচ্ছেন।

কাফি/০৩



বিষয়: পুঠিয়া


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top