দক্ষিণের ৪ পৌরসভায় নির্বাচন
বিএনপির দুর্বল প্রার্থী অস্বস্তিতে আ’লীগ
রাজটাইমস ডেক্স | প্রকাশিত: ১ ডিসেম্বর ২০২০ ১৪:০৩; আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৫ ০৬:৫৪

দক্ষিণের ৪ পৌরসভার প্রায় সবক’টিতেই অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। কারণ শক্ত নেতাদের কেউই প্রার্থী হতে আগ্রহী নয়। বিষয়টি আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জন্য সুবিধাজনক হওয়ার কথা থাকলেও ঠিক উল্টোটা ঘটছে এই পৌরসভাগুলোতে। এরই মধ্যে ২ পৌরসভায় মনোনয়নবঞ্চিতরা প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। অন্য দুটিতে বিএনপিকে আওয়ামী লীগের ভেতর থেকে মদদ জোগানোর অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে এই চার পৌরসভায় ভোট নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে।
জানা যায়, বর্তমান মেয়রদেরই আবার মনোনয়ন দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় আ. বারেক মোল্লা, বরগুনার বেতাগীতে গোলাম কবির, বরিশালের বাকেরগঞ্জে লোকমান হোসেন ডাকুয়া এবং উজিরপুরে গিয়াসউদ্দিন ব্যাপারী দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। আর বিএনপি থেকে কুয়াকাটায় আজিজ মুসল্লি, বেতাগীতে হুমায়ুন কবির, বাকেরগঞ্জে মনিরুজ্জামান মনির এবং উজিরপুরে শহিদুল ইসলাম খান মনোনয়ন পেয়েছেন। আপাতদৃষ্টিতে বিএনপি এই নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বলে মনে হলেও ভেতরের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। নির্বাচনে বিএনপি যাদের মনোনয়ন দিয়েছে ভোটের মাঠে তাদের তেমন একটা অবস্থান নেই। তারপরও হিসাব-নিকাশের যোগ-বিয়োগে এরাই এখন হয়ে উঠেছেন শক্তিশালী প্রার্থী।
বেতাগী পৌরসভায় সোমবার মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বর্তমান মেয়র গোলাম কবির। এখানে ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মহসিন। দলের ভেতরে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মহসিনের ভোটে নামার বিষয়টিকে বিএনপি’র চাল হিসেবে দেখছেন গোলাম কবির। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ভোট ভাগ করার জন্য মূলত টাকা-পয়সা দিয়ে তাকে দাঁড় করিয়েছে বিএনপি। তাছাড়া পরিচয়ে যুবলীগ হলেও আওয়ামী লীগ থেকে প্রায় ২-৩ বছর ধরে বিচ্ছিন্ন মহসিন। সে নির্বাচন করলে দলের ভোট ভাগ হবে এবং জিতে যাবে বিএনপি এটাই প্রতিপক্ষের টার্গেট। যদিও এতে কোনো লাভ হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে শতকরা ৭০ ভাগ ভোট পেয়ে জয়ী হবে নৌকা।’ গোলাম কবিরের এই বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে হাসান মহসিন বলেন, ‘এখানে রাজনীতি থেকে সবকিছুতে দলের ভেতরে একনায়কত্ব চালু করেছেন গোলাম কবির। তৃণমূলের সমর্থনে ভোট না করে নিজের ইচ্ছেমতো তালিকা পাঠিয়েছেন। আমাকে ওই সভায় দাওয়াত পর্যন্ত দেয়া হয়নি। আওয়ামী লীগকে নিজের সম্পত্তি বানিয়েছেন তিনি। এই অচলায়তন ভাঙতে নির্বাচন করছি।’ বিএনপি’র টাকায় নির্বাচন করার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পরাজয় নিশ্চিত জেনে এখন আবোলতাবোল বকছেন তিনি।’
কুয়াকাটায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান মেয়র বারেক মোল্লা। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আনোয়ার হাওলাদার। বিগত মেয়র নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন। সে সময় আনোয়ার ছিলেন জাতীয় পার্টির নেতা। ওই নির্বাচনে ৭শ’র কিছু বেশি ভোট পান তিনি। এর কিছুদিন পর সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের সময়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন তিনি। মনোনয়নপত্র দাখিল করা আনোয়ার হাওলাদার বলেন, ‘গতবারের নির্বাচনেই আমার জয় নিশ্চিত ছিল। কিন্তু ভোট কারচুপি করে আমাকে হারানো হয়েছে। তারপরও আমি দ্বিতীয় হয়েছি। এবার আমার নাম কেন্দ্রেই পাঠানো হয়নি। বর্তমান মেয়রের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে পৌরবাসী অতিষ্ঠ। সাধারণ মানুষের আগ্রহেই আমি প্রার্থী হয়েছি।’ এখানে বিএনপি’র মনোনয়নে মেয়র পদে দাঁড়িয়েছেন পৌর বিএনপি’র আহ্বায়ক আজিজ মুসল্লি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই বলছেন, বারেক মুসল্লিকে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বারেক মোল্লা। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আনোয়ার হাওলাদার জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে আসায় তার কেবল আওয়ামী লীগই নয়, জাতীয় পার্টিরও কিছু ভোট রয়েছে। পুরোপুরি আওয়ামী লীগ না হওয়ায় বিএনপি’র ভেতরেও ভোট আছে আনোয়ারের।
এখানে নির্বাচনে ধানের শীষ থাকলে আনোয়ারের ভোট কমবে হিসাব করেই আজিজ মুসল্লিকে অর্থসহ সব রকম সহায়তা দিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন বারেক মোল্লা। বিএনপি’র প্রার্থী অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বারেক মোল্লা বলেন, ‘আনোয়ার হাওলাদার কবে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে তা তো আমি নিজেই জানি না। তাছাড়া সে যদি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হয় তাহলে তো আওয়ামী লীগের ভোট পাবে। সেক্ষেত্রে বিএনপি’র প্রার্থীকে দাঁড় করিয়ে রেখে আমার কি লাভ? এসবই আসলে অপপ্রচার। এখানে নৌকা জিতবে ইনশাআল্লাহ।’
বরিশালের বাকেরগঞ্জ ও উজিরপুর পৌরসভার পরিস্থিতি অবশ্য বেতাগী কিংবা কুয়াকাটার মতো নয়। উজিরপুরে বিএনপি’র প্রার্থী পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম খান এলাকায় জনপ্রিয় হলেও অর্থনৈতিকভাবে খুব শক্তিশালী নন। এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে না পাওয়াদের একজন নেপথ্যে সহযোগিতা দিচ্ছেন তাকে। ক্ষমতাসীন দলের মেয়র প্রার্থী গিয়াসউদ্দিন ব্যাপারীকে হারাতেই এই সহযোগিতা বলে ধারণা সবার। গিয়াসউদ্দিন অবশ্য যে কোনো পরিস্থিতিতেই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
বাকেরগঞ্জে বিএনপি’র মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা মনিরুজ্জামান মনিরের ভরসা দলীয় প্রতীক। প্রথম পর্যায়ে বরিশাল অঞ্চলের যে ক’টি পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে সেগুলোর বিবেচনায় বাকেরগঞ্জেই কেবল বেশ খানিকটা ভালো অবস্থানে আছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী। বিএনপি’র শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত নাসির জমাদ্দার ভোটের লড়াই থেকে সরে যাওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে যিনি এখানে বিএনপি’র প্রার্থী তিনি ভোটের লড়াইয়ে কতটুকু টিকবেন তা বলা মুশকিল।
পৌর নির্বাচনে বিএনপি’র অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রার্থীরা কেন মনোনয়ন পেলেন জানতে যোগাযোগ করা হলে দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে ভোটের লড়াই নিয়ে আগ্রহ থাকে সবার। আপনিই বলুন, দেশে কি সুষ্ঠু কিংবা নিরপেক্ষ ভোট হচ্ছে? ভোট ডাকাতি আর আগের রাতে বাক্স ভরা নির্বাচনে এখন কারোরই আগ্রহ নেই। তারপরও আমরা প্রার্থী দিচ্ছি এ কারণে যে, জনগণ যাতে দেখতে পারে যে, এখন নির্বাচনের নামে দেশে কি হচ্ছে। নির্বাচনের সঠিক পরিবেশ ফিরে এলে দেখবেন শক্ত প্রার্থীদের কেউ আর ভোট থেকে পিছু হটবেন না। জেনেশুনে কে হারতে চায় বলুন?’
সূত্র: দৈনিক যুগন্তর
বিষয়: পৌরসভা নির্বাচন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: