ন্যায্য অধিকার প্রাপ্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

আ’লীগের রোষানলে পতিত শাহ্ মখদুম মেডিকেল কলেজের সংকট নিরসনের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৭ আগস্ট ২০২৪ ১৮:৩০; আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০২৪ ০০:২২

সংগ্রহীত

আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পতিত রাজশাহীর শাহ্ মখদুম মেডিকেল কলেজের সংকট নিরসনের দাবি জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে আওয়ামী দুঃশাসনের জড়িত সংশ্লিষ্ট পদস্থ ব্যক্তিবর্গ যারা দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তাদের উপযুক্ত বিচার দাবি করা হয়।

গতকাল শনিবার সকালে রাজশাহী নগরীর খড়খড়িতে অবস্থিত শাহ্ মখদুম মেডিকেল কলেজ কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এবিষয়ে বক্তব্য দেন কলেজের উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মনিরুজ্জামান স্বাধীন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, স্থানীয় মানুষের সহজলভ্য মানসম্মত চিকিৎসাসেবা, দেশের স্বাস্থ্য-শিক্ষা সম্প্রসারণ, দেশী-বিদেশী চিকিৎসক তৈরির লক্ষ্যে শাহ্ মখদুম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ২০০৭ সালের ২১ জুলাই প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা শুরু করে। ২০১০ সালে এমবিবিএস ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির আবেদন করলেও স্থানীয় তৎকালীন এমপি ও রাজনৈতিক নেতাদের বাধার কারেণে কলেজটি তখন অনুমোদন প্রাপ্ত হয়নি। নানামুখি বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে ২০১৩ সালে ৫০ আসন বিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ অনুমোদন পায়। ২০১৪ সালে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির মধ্যে দিয়ে কার্যক্রম শুরু হলেও তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনগড়া অজুহাত দেখিয়ে কলেজটির কার্যক্রম সাময়িক স্থাগিত করেন। বহু কাঠখড়ি পুড়িয়ে ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে এটি পূনরায় নিয়মিত কলেজের মর্যাদা পায়। অতঃপর রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় সম্পূর্ণ বে-আইনিভাবে এই কলেজকে অধিভুক্তির নামে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করে। এক পর্যায়ে অধিভুক্তি স্থগিত করে। আবার দেন-দরবারের মধ্যে অধিভুক্তি পূর্নবহাল করলেও রাবি প্রবিধি আইন ২০১৫ লংঘন করে আরেকটি বেসরকারী মেডিকেল কলেজ (বারিন্দ মেডিকেল কলেজ) এ পরপর দুইবার এই কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে পরীক্ষা দিতে বাধ্য করে। বহুমাত্রিক আবেদন নিবেদন সত্তে¡ও শাহ্মখদুম মেডিকেল কলেজ আইনত এর প্রাপ্য পরীক্ষা কেন্দ্র অনুমোদন না দিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে পরীক্ষা দিতে বাধ্য করে।

এভাবে প্রতিনিয়ত বৈষমের শিকার হয়ে নির্যাতিত কলেজটি ৭ম ব্যাচ পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চলামান থাকা অবস্থায় ২০২০ সালের ২ নভেম্বর করোনা মহামারির মধ্যে কোনোপ্রকার শোকজ বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ছাড়াই এবং আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে তৎকালীন ২৩০ জন ছাত্র-ছাত্রীকে পাশর্^বর্তী বারিন্দ মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে মাইগ্রেশন করে এবং ২০২১ সাল থেকে ছাত্র-ছাত্রীভর্তি বন্ধ করে। এবিষয়ে একটি রিট মামলার আদেশে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি বন্ধের আদেশটিকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করলে ২০২১ ও ২০২২ সালে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হয়। কিন্তু রাজশাহী মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় ২০২১ ও ২০২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তিকৃত ছাত্র-ছাত্রীদের রেজিস্ট্রেশনও পুরাতন কয়েকজন ছাত্রকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে বাধা দেয়। ফলে ভর্তিকৃত ছাত্র-ছাত্রী তথা কলেজ অপূরণীয় ক্ষতির মধ্যে পড়ে। অতঃপর ২০২৩ সালের ১৮৪৭নং আপিল মামলায় ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির নির্দেশ দিলেও স্বাস্থ্য-শিক্ষা বিভাগের সচিব, ডিজি ও রাজশাহী মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসির অতি রাজনৈতিক পক্ষপাতদূষ্ট আচরণের কারণে সর্বোচ্চ আদালতের এই আদেশও বাস্তবায়ন করেনি। এমনকি আদালত অবমাননার মামলা করেও রায় মানানো যায়নি। উপরন্ত সংক্ষুদ্ধ ছাত্র-ছাত্রীদের প্ররোচিত করে কলেজ কর্তৃপক্ষের নামে ২১টি মামলা করানো হয়।

সাংবাদিক সম্মেলনে আরো বলা হয়, কলেজ প্রতিষ্ঠার আইন অনুসারে সকল শর্ত প্রায় পূর্ণ থাকা সত্তে¡ও আওয়ামী দুঃসাশনের সুযোগে দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে দায়িত্ব পালনকারী অর্থলোভী, সুবিধালোভী, কুচক্রী কর্মকর্তাদের অনৈতিক আকাংখার কাছে মাথানত না করায় কলেজ কর্তৃপক্ষের উপর নির্যাতন অব্যাহত ছিল। এই কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিষদকে ‘জামায়াত-বিএনপির পৃষ্ঠপোষক’ ট্যাগ দিয়ে সম্ভাবনাময় এই প্রতিষ্ঠানকে আনুমানিক দুশ’ কোটি টাকার ক্ষতি করা হয়। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথকে সংকুচিত করা হয়।

সর্বোপরি উদ্যোক্তাদের প্রতি বৈষম্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির পথকে রুদ্ধ এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে প্রায় ৫০০ মানুষের কর্মসংস্থান নষ্ট করে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি করা হয়। সর্বশেষ, গত ২৯ মে আপিল বিভাগের আরেকটি রায় প্রাপ্তি এবং সম্প্রতি ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে ২য় স্বাধীনতা প্রাপ্তির পরও ঐ কর্মকর্তাগং কলেজের প্রাপ্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে নানা অজুহাতে গড়িমসি করছে। এখন কলেজ কর্তৃপক্ষের মূল দাবি: আপিল বিভাগের রায়ের আলোকে ২০২১ ও ২০২২ শিক্ষা বর্ষের ভর্তিকৃত ছাত্র-ছাত্রীদের রেজিস্ট্র্রেশন প্রাপ্তি, চলতি সেশনসহ পরবর্তী সেশনে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির সুযোগ, দোষী ব্যাক্তিদের আইনের আলোকে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তÍমূলক শাস্তিসহ ক্ষতিপূরণ আদায়।



বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top