পুঠিয়ায় অতিরিক্ত সেচ ভাড়ায় অসহায় বোরো চাষীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, পুঠিয়া | প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারী ২০২১ ০১:২৭; আপডেট: ২৯ জানুয়ারী ২০২১ ০১:২৭

রাজশাহীর পুঠিয়ায় সেচপাম্প মালিক ও বিএমডিএর গভীর নলকুপের ফাঁদে অসহায় হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বোরো চাষীরা। নলকুপ গুলোর ব্যবস্থাপনা কমিটির লোকজন প্রতিবছর তাদের ইচ্ছেমত সেচ ভাড়া নির্ধারণ করছেন। নানা অযুহাতে প্রতি বিঘা জমির জন্য কৃষকদের নিকট থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করে ভাগ-বাটোয়ারা করছেন তারা। চাষীরা জানান সমিতির দূর্নীতির বিরুদ্ধে বিএমডিএর আঞ্চলিক অফিস, সেচ কমিটিসহ বিভিন্ন দপ্তরে অবহিত করেও তার কোনো প্রকার সুফল পাচ্ছেন না।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়ন পরিষদের অধিনে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর ফসলী জমি রয়েছে। আর জমি গুলোতে ফসল উৎপাদনে সেচ সহায়ক হিসাবে বরেন্দ্র বহুমূখী কর্তৃপক্ষের গভীর নলকুপ রয়েছে ১৫০টি, ব্যক্তি মালিকানায় ৪১ টি ও অগভীর সেচপাম্প রয়েছে আরো প্রায় ৭শতাধিক। এ বছর প্রাথমিক ভাবে প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫০০ হেক্টোর বেশী।

অনুসন্ধানে জানাগেছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অবহেলা ও সেচ কমিটির উদাসিনতায় ফসলী জমির সুনির্দিষ্ট সেচ ভাড়া আজও নির্ধারিত হয়নি। ফলে চাষিরা বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের জন্য প্রিপেইড কার্ড বা ঘন্টা অনুযায়ী পানি পাচ্ছেন। অথচ বোরো ধানের ক্ষেত্রে সেচ নিতে হচ্ছে প্রতি বিঘায় ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা চুক্তিতে।

জিউপাড়া এলাকার কৃষক মতিউর রহমান বলেন, আমাদের এখানে এবার বোরো ধানের এক বিঘা জমিতে সেচ ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৫০০ টাকা। যা গত বছর ছিল ১ হাজার ৮০০ টাকা। গত দুই বছর পূর্বে যা ছিল মাত্র এক হাজার টাকা। প্রতিবছর সেচ কর্তৃপক্ষ নানা অযুহাতে আমাদের নিকট থেকে দ্বিগুন-তিনগুন পরিমান হারে টাকা আদায় করছেন। এবার ধান চাষে লেবার, পানি ভাড়া, সার-ওষুেধ অতিরিক্ত ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অনেক বোরো চাষী লোকসানের আশঙ্কা করছেন।

কাঠালবাড়িয়া এলাকার গভীর নলকুপ সমিতির সভাপতি শাহাদত আলী বলেন, এবার আমাদের এরিয়ার অনেক কম জমিতে বোরো ধান রোপন করা হয়েছে। সে কারণে সেচ ভাড়া একটু বেশী হয়েছে। সে ক্ষেত্রে এবার প্রতি বিঘায় ২ হাজার ৯০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পুঠিয়া জোনের সহকারী প্রকৌশলী আল মামুনুর রশীদ বলেন, এক বিঘা জমিতে ধান রোপন থেকে উৎপাদন পর্যন্ত সর্বচ্চ ১০ ঘন্টা পানি লাগতে পারে। আমার জানা মতে গভীর নলকুপের পানি সরবরাহের জন্য প্রতিঘন্টা ১২০ টাকা খরচ হয়। আর কোনো নলকুপের রক্ষনাবেক্ষন বাবদ ব্যয়কৃত অর্থ কৃষক পরিশোধ না করলে সে ক্ষেত্রে প্রতি ঘন্টায় ১৭০ টাকা হতে পারে। মাঝে মধ্যে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি শোনা যায়। আমরা অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তবে ব্যাক্তি মালিকানাধিন কিছু গভীর-অগভীর নলকুপের সেচ ভাড়ার বিষয়টি আমাদের জানা নেই।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্মকর্তা শামসুনাহার ভূইয়া অতিরিক্ত সেচের ভাড়া আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, সেচ ভাড়ার বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা এই উপজেলায় নেই। তবে আগামি উপজেলা সমন্নয় কমিটির মিটিংএ সেচ ভাড়া আদায়ের বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ বলেন, সেচের ভাড়া অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে এমন কোনো অভিযোগ এখনো পাইনি। আর বোরো জমিতে সেচ সংক্রান্ত কোনো নীতিমালা আছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এনএস



বিষয়: পুঠিয়া


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top