শীর্ষ সরবরাহকারী দেশগুলোয় ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজার

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১ জানুয়ারী ২০২৩ ২১:৩১; আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৪ ০৫:০০

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কলকাতার একটি চালকলে কাজ করছেন শ্রমিক ছবি : রয়টার্স

চলতি সপ্তাহে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে এশিয়ার চালের বাজারে। শীর্ষ সরবরাহকারী দেশগুলো আগের সপ্তাহের তুলনায় বেশি দামেই পণ্যটি রফতানি করেছে। আমদানিকারক দেশগুলোয় ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা এবং বৈরী আবহাওয়ায় উৎপাদন ঘাটতি দাম বাড়াতে সহায়তা করছে। পাশ পাশি চীনের লকডাউনসহ অন্যান্য বিধিনিষেধ শিথিল করে নেয়ার বিষয়টিও এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে। খবর বিজনেস রেকর্ডার।

ভারত বিশ্বের শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশ। চলতি সপ্তাহে দেশটিতে ৫ শতাংশ ভাঙা সেদ্ধ চাল টনপ্রতি ৩৭৫-৩৮২ ডলারে বিক্রি হয়েছে। গত সপ্তাহে যা ছিল ৩৭৪-৩৮০ ডলার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে নতুন চাল উঠেছে। স্থানীয় বাজারে বাড়তে শুরু করেছে সরবরাহ। এ কারণে দাম বেশি বাড়েনি।

ভারতের চাল রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট বি ভি কৃষ্ণ রাও বলেন, রফতানি বাজারে বর্তমানে সাদা চালের চেয়ে সেদ্ধ চালের চাহিদা বেশি। এছাড়া প্রতিযোগিতার বাজারে বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে ভারতীয় চালের বাজারদর।

৩০ নভেম্বর ভাঙা চালসহ অর্গানিক নন-বাসমতি চালের ওপর থেকে রফতানি নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিয়েছে ভারত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রফতানি নীতিতে আনা পরিবর্তন সফলতা মুখ দেখেছে। এরই মধ্যে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। পাশাপাশি দামও স্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। আর এ কারণেই নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।

তিন মাস ধরে এসব চাল রফতানি বন্ধ ছিল। এর ফলে প্রধান প্রধান আমদানিকারক দেশগুলো বিপাকে পড়ে যায়। ফের রফতানি শুরুর ঘোষণা আসায় আমদানিকারক দেশগুলোয় স্বস্তি ফিরেছে। শস্যটির রফতানি মূল্যও কমে এসেছে।

আন্তর্জাতিক চাল বাণিজ্যে ৪০ শতাংশ বাজার হিস্যাই ভারতের। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশটি সব মিলিয়ে ২ কোটি ১২ লাখ ৩০ হাজার টন চাল রফতানি করে। এর আগের অর্থবছর রফতানির পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৭৭ লাখ ৮০ হাজার টন। কভিড-১৯ মহামারী শুরুর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশটি রফতানি করেছিল ৯৫ লাখ ১০ হাজার টন। অর্থাৎ গত অর্থবছর চাল রফতানি মহামারীপূর্ব পর্যায় ছাড়িয়ে গিয়েছিল, কিন্তু এ বছর পণ্যটি রফতানিতে মন্দার মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশটি।

অন্যদিকে ভিয়েতনামের ৫ শতাংশ ভাঙা চাল ফ্রি অন বোর্ড চুক্তিতে রফতানি হচ্ছে টনপ্রতি ৪৫৮ ডলারে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ের পর এটিই সর্বোচ্চ দাম। এক সপ্তাহ আগেও দেশটি প্রতি টন চাল ৪৪৮-৪৫৩ ডলারে রফতানি করেছিল।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, চীন করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে নেয়া বিধিনিষেধ শিথিলের উদ্যোগ নিয়েছে। ঘোষণা দেয়া হয়েছে কোয়ারেন্টিন উঠিয়ে নেয়ারও। এ কারণে সুবিধা পাবে ভিয়েতনামের ব্যবসায়ীরা। চীনে বেশ ভালো পরিমাণ চাল রফতানির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

২০২২ সালে ভিয়েতনামের চাল রফতানি ৭২ লাখ ২০ হাজার টনে পৌঁছানোর প্রাক্কলন করা হয়েছে। ২০২১ সালের তুলনায় রফতানি ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়তে পারে। দেশটির সরকারি একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। গত মাসে দেশটি ৫ লাখ ৫০ হাজার টন চাল রফতানি করেছে। আয় এসেছে ২৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

এদিকে থাইল্যান্ড প্রতি টন ৫ শতাংশ ভাঙা চাল রফতানি করছে ৪৫২-৪৬৫ ডলারে। চলতি বছরের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। গত সপ্তাহে দেশটি ৪৫২-৪৬০ ডলার মূল্যে চাল রফতানি করেছিল। মূলত দেশটির মুদ্রার বিনিময় মূল্য বৃদ্ধির কারণে শস্যটির বাজারদর ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে।

ব্যাংককভিত্তিক ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাপ্তাহিক ও নববর্ষের ছুটির কারণে কৃষক ও মিল পর্যায়ে বেচাকেনা কিছুটা কম। এ কারণে দাম বাড়লেও সেটির মাত্রা ছিল সীমিত। নতুন চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে বলেও জানিয়েছেন তারা।

দেশটির চালের রফতানি মূল্য কয়েক সপ্তাহ ধরেই ঊর্ধ্বমুখী। সামনের দিনগুলোয় দাম আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে চালকলগুলোয় শস্যটির মজুদ বাড়াচ্ছে। নতুন বছরে রফতানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি আসতে পারে। বর্তমানে দেশটি ইন্দোনেশিয়ায় সবচেয়ে বেশি চাল রফতানি করছে।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top