করপোরেট সুশাসনের দুর্বলতা ও পুঁজিসংকট ঝুঁকি বাড়িয়েছে

আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও জ্বালানিসংকটে চাপে পড়েছে বাংলাদেশ : বিশ্বব্যাংক

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ৮ জুন ২০২৩ ১৪:৪৭; আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:১২

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ সরকার কয়েক মাস ধরে আমদানির ওপর বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর ফলে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমেছে। পাশাপাশি দেশে জ্বালানিসংকটও রয়েছে। খবর ইত্তেফাকের। 

এসব কারণে দেশের শিল্প উত্পাদন ও পরিষেবা এ দুই খাতে বড় ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে। করপোরেট সুশাসনের দুর্বলতা ও পুঁজির সংকট আর্থিক খাতে ঝুঁকি বাড়িয়েছে। বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক বলেছে, আন্তর্জাতিক লেনদেনের ভারসাম্য ব্যাহত হওয়া ও বিনিময় হারের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বাংলাদেশসহ নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা আমদানির ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল। এর ফলে এসব দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপক প্রভাব পড়ে। তবে এখন আন্তর্জাতিক লেনদেন ভারসাম্য পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

এ কারণে এসব দেশে আমদানি নিষেধাজ্ঞাগুলো শিথিল করা হচ্ছে। তবে উচ্চমাত্রায় খেলাপি ঋণ, পুঁজির ক্ষেত্রে দুর্বলতা ও ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের দুর্বলতার কারণে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশের আর্থিক খাতে উচ্চ ঝুঁকি রয়ে গেছে। এসব দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। বাংলাদেশে করপোরেট খাতে সুশাসনের দুর্বলতা ও পুঁজির সংকটও আর্থিক খাতে ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে। প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংকের সদস্য দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

সার্বিকভাবে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ২০২২ সালের ৩ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ২০২৩ সালে ২ দশমিক ১ শতাংশে নেমে আসবে। বিশেষ করে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর নীতি সুদ হার বৃদ্ধির ফলে বিশ্ব অর্থনীতির গতি কমে যাবে।

বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি নিয়ে আগের পূর্বাভাসই বহাল রাখা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে। এ ছাড়া আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৪ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

গত জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের জন্য একটি ঋণ কর্মসূচি অনুমোদন করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বিশ্বব্যাংক বলছে, এই ঋণ নেওয়ার পেছনে বাংলাদেশের উদ্দেশ্য হচ্ছে আন্তর্জাতিক লেনদেনে ভারসাম্য রক্ষা করা এবং আমদানি নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসা।

দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার পর কর্মসংস্থানের উন্নতি হয়েছে। তবে পরিবারের প্রকৃত উপার্জন এখনো মহামারির আগের পর্যায়ে যেতে পারেনি। সরকারি ঋণ বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া এবং আর্থসামাজিক উত্তেজনা প্রভৃতি কারণে এ অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশে আর্থিক সংকটের ঝুঁকি বাড়ছে। এসব সংকট শেষ পর্যন্ত দেশের প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে।

তবে এসব ঝুঁকি কাটিয়ে উঠতে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোতে আর্থিক নীতির কঠোরতা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিগত সুদহার বাড়িয়েছে। কিন্তু ঋণের সুদহারের ক্ষেত্রে সীমা আরোপিত থাকায় অর্থনীতিতে তার সুফল পাওয়া যায়নি।

পূর্বাভাস অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি কমে ২০২৩ সালে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ হবে। ২০২৪ সালে তা আরো কমে ৫ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে। ভারতের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও কমিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলেছে, ভারতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৩ শতাংশ হবে। এটি গত জানুয়ারিতে করা পূর্বাভাসের তুলনায় শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ কম।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top