এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর ২০২৩ ২২:৪৯; আপডেট: ১৬ মে ২০২৪ ০৬:১৫

ছবি: ফাইল

দেশের ব্যাংক খাতে গত এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২২ হাজার ১ কোটি টাকা। গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা।

এ হিসেবে গত এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। বিভিন্ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিসংখ্যান নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। প্রতি তিন মাস অন্তর এ প্রতিবেদন তৈরি করে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন। কিন্তু ওই ঋণ আর ফেরত দিচ্ছেন না। নানা কৌশলে বছরের পর আটকে রাখছে। আবার কিছু ব্যাংকের পরিচালকরা ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে নিজ ব্যাংক ও অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন। কিন্তু ওই অর্থও ফেরত দিচ্ছেন না। এমনও ব্যাংক রয়েছে, পরিচালকরা ঋণ নিয়েছেন, আসল তো দূরের কথা, বছর শেষে মুনাফাও ফেরত দিচ্ছেন না।

এর ফলে পুঁজ্ঞিভূত খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। যদিও এ হিসাবে খেলাপি ঋণের হিসাবে আসছে না। আবার কিছু ঋণ খেলাপি রয়েছেন, ঋণ নিয়ে বছরের পর বছর আটকে রাখছেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলাও নিষ্পত্তি হচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে, একমাত্র অর্থঋণ আদালতেই এ ধরনের মামলায় আটকে আছে ব্যাংকের এক লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। যদিও এ হিসাব গত জুনের। সেপ্টেম্বরে তা আরো বেড়ে গেছে। অর্থঋণ আদালতে মামলাধীন খেলাপি ঋণের একটি বড় অংশই অবলোপন করা হয়েছে। যা খেলাপি ঋণের হিসাবে আসে না।

এর বাইরে প্রতি বছরই নামমাত্র ডাউন পেমেন্টে নিয়ে বড় অংকের ঋণ নবায়ন করা হয়। সবমিলিয়েই কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে প্রতিবেদন তৈরি করে প্রকৃত খেলাপি ঋণ অনেক বেশি।

আজ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেয়া এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

শতকরা হারের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ সরকারি ব্যাংকগুলোর। সেপ্টেম্বর শেষে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৬৫ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা, যা তাদের মোট ঋণের ২১ দশমিক ৭০ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে ১২ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬০ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা। এক বছরে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে।

বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৫৭ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮১ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা। যা তাদের মোট ঋণের ৭.০৪ শতাংশ।

গত বছর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৬ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। এ হিসেবে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা।

গত বছরে বিদেশী ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল যেখানে ২ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। আর বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ২২৭ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা।

এদিকে ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ মুনাফা করছে তা দিয়ে কিছু ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারছে না। ফলে সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতি পড়েছে ২৫ হাজার ২৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর ১২ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ব্যাংকের ১৩ হাজার ৫৩ কোটি টাকা।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top