স্থলবন্দরে আটকা পড়া ভারতীয় পিয়াজে পচন শুরু

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:০৮; আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:২৬

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে স্থলবন্দরগুলোতে কার্গো ট্রাকে করে আনা পিয়াজ পচতে শুরু করেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর জন্য পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করেছে। ফলে বন্দরগুলোতে বিপুল পরিমাণ পিয়াজ এসে আটকা পড়েছে। সেগুলো কোনো ছাড়পত্র পাচ্ছে না। ওদিকে ট্রাকের ওপর রোদ, বৃষ্টিতে এ পিয়াজ পচা শুরু হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন রপ্তানিকারক ও আমদানিকারকরা।

এরই মধ্যে বাংলাদেশের যেসব আমদানিকারক পিয়াজের অর্ডার দিয়েছিলেন, তাদের অর্ডার নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অপেক্ষায় আছে কমপক্ষে ১০০ কার্গো ট্রাক। এতে পিয়াজের পরিমাণ ৩০০০ টনের উপরে। এসব পিয়াজ নিয়ে ট্রাকগুলো সীমান্তে আসার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার আকস্মিক রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। ফলে সীমান্তে ট্রাকের ওপর এসব পিয়াজে পচন শুরু হয়েছে। তা থেকে পচা দুর্গন্ধ বেরুচ্ছে। এ খবর দিয়েছে ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য টেলিগ্রাফের অনলাইন সংস্করণ।

সাংবাদিক শুভাশীষ চৌধুরী এতে লিখেছেন, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পশ্চিমবঙ্গের অংশে ট্রাকবোঝাই পিয়াজ থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানো শুরু করেছে। অন্যদিকে প্রতিবেশী বাংলাদেশে এর দাম বেড়ে চলেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আকস্মিক রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তে এসব ট্রাক স্থল বন্দরে আটকে আছে। এ অবস্থায় রপ্তানিকারক এবং ফ্রেইটগুলোও লোকসানের মুখে রয়েছে। ভারতের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের পিয়াজের দাম ২০০ টাকা থেকে ১৮০ টাকার মধ্যে উঠে গেছে। রপ্তানিকারক ও ফ্রেইটের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলে এটাই ইঙ্গিত মিলেছে যে, নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আগে ১০০ কার্গো ট্রাকে ৩০০০ টন পিয়াজ আমদানির অর্ডার দিয়েছিলেন বাংলাদেশিরা।

পিয়াজ নিয়ে স্থলবন্দরে পৌঁছামাত্র ৭ই ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক মহাপরিচালক আগামী বছর ৩১শে মার্চ পর্যন্ত পিয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত জানান। ভারতে যাতে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত পিয়াজ থাকে সে জন্য এই সিদ্ধান্ত। ভারতে বর্তমানে এক কিলোগ্রাম পিয়াজের খুচরা মূল্য প্রায় ৭০ রুপি। কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয় ৮ই ডিসেম্বর।

একজন রপ্তানিকারক বলেছেন, আরও কমপক্ষে ১০০০ ট্রাক পিয়াজ সীমান্তের পথে রয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত আমাদেরকে বিভ্রান্তিতে ফেলেছে। সব স্থলবন্দরে এই নিষেধাজ্ঞা একরকম নয়। পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর পেট্রাপোলে পিয়াজভর্তি ট্রাকগুলো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার আগে অর্ডার পেয়েছিল। পরিস্থিতি উত্তর ২৪ পরগনার বশিরহাটের কাছে গজলডাঙ্গা স্থলবন্দরে ভিন্ন। সেখানে নাসিক থেকে পিয়াজবোঝাই প্রায় ৩০টি কার্গো ট্রাক ৮ই ডিসেম্বর থেকে আটকে আছে। মালদার মাহাদিপুর স্থলবন্দরের ভেতরে ৭০টি এবং বাইরে ৮০টি কার্গো ট্রাক অপেক্ষায় আছে। নাসিকভিত্তিক এক রপ্তানিকারকের এজেন্ট শনিবার গজলডাঙ্গা বন্দরে বলেন, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে উদ্বিগ্ন অবস্থায় আমরা অপেক্ষা করছি। কেন্দ্রীয় সরকার শিপমেন্টের বিষয়ে ক্লিয়ারেন্স না দিলে আমরা রপ্তানি বিল পাবো না। বড় রকমের লোকসান হবে আমাদের।

আবার কিছু রপ্তানিকারক এসব ট্রাক থেকে বস্তা ধরে নিয়ে তা স্থানীয় গোডাউনে রাখছেন স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দেয়ার জন্য। ওই এজেন্ট আরও বলেন, যদি এই শিপমেন্টের বড় অংশ পচে যাওয়া শুরু করে তাহলে যে দামই পাই, সেই দামে তা বিক্রি করে দিতে বাধ্য হবো। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলেছে, নিষেধাজ্ঞায় কেন্দ্রীয় সরকার যে তিনটি শর্ত আরোপ করেছে, তার একটিও অনুসরণ করেনি এসব শিপমেন্টের রপ্তানিকারকরা। তিনটি শর্তের ওপর পিয়াজ রপ্তানির অনুমতি আছে।

তা হলো- যদি চালানকৃত পিয়াজ বোঝাই শুরু হয়ে থাকে নোটিফিকেশন দেয়ার আগে, যদি চালান এরই মধ্যে পৌঁছে থাকে এবং বন্দরে নোঙ্গর করা অবস্থায় থাকে। পিয়াজের চালান যদি কাস্টমসের কাছে হস্তান্তর করা হয়ে থাকে অথবা নোটিফিকেশনের আগে কাস্টমস স্টেশনে পৌঁছে থাকে। কাস্টমস সহকারী কমিশনার অনীল কুমার সিং বলেন, সরকারের নির্দেশ পরিষ্কার। এসব চালান তার কোনো শর্ত পূরণ করেনি।

ওদিকে রপ্তানিকারক ও ক্লিয়ারিং এজেন্টরা বলেছেন, আকস্মিক এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশি আমদানিকারকরা সরকারের নির্দেশ কার্যকর হওয়ার আগেই তাদের অর্ডার দিয়েছেন।




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top