রমজানে পণ্যমূল্য বাড়ালে জেলে দেয়ার হুমকি এফবিসিসিআই’র

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:৩৪; আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:১১

ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন রোজায় যেসব অসৎ ব্যবসায়ী অনৈতিকভাবে বাজারে সংকট তৈরি করে পণ্যমূল্য বাড়াবে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণে সরকারের সঙ্গে কাজ করবে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। এতে কাজ না হলে অসাধু ব্যবসায়ীদের জেলে পাঠাতে সহযোগিতা করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।

গতকাল এফবিসিসিআই’র মতিঝিল কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় সংগঠনের নেতারা একথা জানান। আসন্ন রোজায় নিত্যপণ্যে সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘যারা অনৈতিকভাবে বাজারে সংকট তৈরি করবে আমরা তাদের সঙ্গে নেই। ব্যবসায়ীদের কেউ অসাধু বলুক, সিন্ডিকেট করা হচ্ছে এমন কোনো কথা উঠুক, তা আমরা শুনতে চাই না। আমরা চাই ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করুক। কোনো সমস্যা হলে সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে। কিন্তু আমাদের কোনো বদনাম হোক তা চাই না।’

‘আমরা ব্যবসায়ীদের কথা শুনেছি। এলসি খোলা নিয়ে জটিলতা আছে। এটা নিয়ে আমরা কথা বলছি। প্রয়োজনে আরও কথা বলবো।

মন্ত্রণালয়ের ব্যাপারে কথা উঠেছে। কিন্তু আমি মনে করি এটার আগে যেসব মন্ত্রণালয় বাজারের সঙ্গে সম্পর্কিত তাদের মধ্যে সমন্বয় হওয়াটা বেশি জরুরি।’

সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, ‘কাজ না হলে অসাধু ব্যবসায়ীদের জেলে পাঠাতে সহযোগিতা করবে এফবিসিসিআই।’

বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তার অজুহাতে খোলা তেল বাজার থেকে একেবারে উঠিয়ে দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। অথচ এই ব্যবসার সঙ্গে অনেক মানুষ জড়িত।’ ভোজ্য তেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোতে তদারকি বাড়ালে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ভোজ্য তেল মিল মালিকদের সংগঠনের সভাপতি ও সিটি গ্রুপের পরামর্শক অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, ‘সরকার আমাদের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে। তবে ডিসেম্বরের মধ্যে সব কোম্পানি এটা পারবে বলে মনে হয় না। খোলা তেলের ব্যাপারে যে অভিযোগ সবচেয়ে বেশি তা হলো- এই তেলে ভিটামিন ‘এ’ থাকে কিনা। আমাদের কাছে মনে হয় খোলা তেলেও ভিটামিন ‘এ’ নিশ্চিত করা সম্ভব। তবে এ ব্যাপারে সরকার আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দেবে সেভাবে চলবো।’ ডলার সংকটের সময়ে ভোগ্যপণ্যের জন্য আলাদা করে ডলার সংরক্ষণ করা ও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ রেস্তরাঁ মালিক ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, ‘রমজানের আগে মুরগির দাম একটু একটু বাড়ানো হচ্ছে। এলপিজি আমদানিতে সমস্যা হচ্ছে। অথচ রেস্তরাঁ খাতে প্রচুর এলপিজির প্রয়োজন। বাজারে কোনো পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করলে সভা করতে কর?তে লোপাট করা শেষ হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। আর কোনো আমলা দিয়ে নীতি নির্ধারণ করা যাবে না। ব্যবসায়ীরা নীতি নির্ধারণ করবে। তাহলে বাজারে কোনো সমস্যা থাকবে না।’

বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি বিকাশ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘বুট ও অ্যাংকর ডালের দাম বাড়ছে। এ খাতের ছোট আমদানিকারকেরা এখন আর টিকে নেই। সব বড় আমদানিকারকদের হাতে। সুতরাং, এখনই এই বাজারে নজরদারি বাড়াতে হবে।’

তাজা ফল আমদানিকারকদের সংগঠনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘রমজানে খেজুর গুরুত্বপূর্ণ। তিউনিসিয়া-আলজেরিয়া থেকে হিমায়িত কন্টেইনারে খেজুর আনতে গেলে দুই মাস সময় লাগে। কিন্তু খেজুরের শুল্ক কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে। এমনো হয়েছে আমি গিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে আসার পরে শুল্কায়ন আরও বাড়ানো হয়েছে।’

বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার বলেন, ‘বিভিন্ন বাজারের অনেক ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য নন। তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসা যাচ্ছে না।’ তবে কাঁচাবাজারে কোনো সিন্ডিকেট নেই বলে জোরালো দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নরুল কবির বলেন, ‘গত এক মাস হলো লবণের উৎপাদন শুরু হয়েছে। আবহাওয়াজনিত কারণে উৎপাদনে একটু সমস্যা হলেও এক মাসের মতো লবণের মজুত আছে। আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হলে লবণের উৎপাদন ভালো হবে।’

মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বশির উদ্দিন বলেন, ‘মিল মালিকেরা সরবরাহ ঠিক রাখলে আসন্ন রমজানে বড় কোনো সংকট হবে না। মিল মালিকেরা যেন কোনো সংকটের কথা বলে সরবরাহ কমিয়ে না দেন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘যেসব পণ্য যে মন্ত্রণালয়ের অধীনে তারা সরকারকে বোঝায় যে, উৎপাদনে তারা স্বয়ংসম্পূর্ণ। এটা করতে গিয়ে অনেক সময় ভুল তথ্য দেয়া হয়। এজন্য আমরা ভোগ্যপণ্য নিয়ে একটা মন্ত্রণালয় চাই। একেক জন একেক দিকে না গিয়ে আমরা একটা জায়গায় কথা বলতে চাই। সমস্যার সমাধান চাই।’

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের উপ-পরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আজকের সভায় ব্যবসায়ীরা বেশ ইতিবাচক কথা বলেছেন। তাতে আমাদের কাজ সহজ হয়ে গেল।’ ব্যবসায়ীরা ইতিবাচক মানসিকতায় থাকলে বাজারে কোনো বড় সংকট হবে না বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের নীতি-নৈতিকতা নিয়ে ব্যবসা করতে হবে। তাহলে আমাদের আর অভিযানের প্রয়োজন পড়বে না।’




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top