টাকার সঙ্কট গভীর হচ্ছে ব্যাংক খাতে

এক দিনে ২৯ হাজার কোটি টাকা ধার দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৬:২৯; আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৪৯

ছবি: সংগৃহীত

নীতি সুদহার বাড়িয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বেড়ে যায় ব্যাংক ঋণের সুদহার। উদ্দেশ্য ছিল ব্যাংকিং খাতে তারল্যের চাপ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। কিন্তু এসব পদক্ষেপে নগদ টাকার সঙ্কট কোনোভাবেই কাটানো যাচ্ছে না। বরং দিন দিন তা গভীর হচ্ছে। আর এ সঙ্কট মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রতিনিয়তই টাকার জোগান দিয়ে আসছে।

গতকাল এক দিনে রেকর্ড প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা ধার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে এত পরিমাণ টাকা আর কখনো ধার দেয়া হয়নি। একই সাথে এক ব্যাংক আরেক ব্যাংক থেকে (কলমানি মার্কেট থেকে) ধার নিয়েছে তিন হাজার কোটি টাকা। সবমিলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্য ব্যাংক থেকে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলো এক দিনে ধার নিয়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা।

এ দিকে টাকার সঙ্কটের পাশাপাশি কমে যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদও। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত এক মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে ১১২ কোটি ডলার। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ ছিল দুই হাজার ৫৭ কোটি ডলার। (২৭ মার্চ) তা কমে নেমেছে এক হাজার ৯৪৫ কোটি ডলারে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, মূলত কয়েকটি কারণে ব্যাংকগুলোতে টাকার সঙ্কট প্রকট হচ্ছে। প্রথমত, রেড জোন ও ইয়োলো জোনে থাকা ব্যাংকগুলোর তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর কিছু কিছু ব্যাংক থেকে টাকা প্রত্যাহারের হার বেড়ে গেছে। এমনিতেই এক ধরনের ব্যবসায়ী এসব ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে আর ফেরত দিচ্ছেন না। এতে ব্যাংকগুলোর কমে গেছে নগদ আদায়। এ পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলো উচ্চ সুদে আমানত নিয়ে তাদের দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ করতে ছিল। কিন্তু এর ওপর হঠাৎ করে রেড ও ইয়োলো জোনে থাকা ব্যাংকগুলোর তালিকা প্রকাশ হওয়ায় তাদের বিদ্যমান আমানত থেকেও উত্তোলনের হার বেড়ে গেছে।

একটি সরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল জানিয়েছেন, তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর তার ব্যাংক থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকার আমানত প্রত্যাহার হয়ে গেছে। সরকারি ব্যাংক বলে সরকারি প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য ডিপোজিট আসায় তারা রক্ষা পাচ্ছেন। কিন্তু কিছু বেসরকারি ব্যাংক আছে তাদের তো কিছুই করার নেই। এ কারণে ওই সব ব্যাংকের তারল্য সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। যার প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক ব্যাংক খাতে।

তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলোর টাকার সঙ্কট মূলত: প্রধান তিনটি কারণে। প্রথমটি হলো, ইতোমধ্যে যেসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছে তার বড় একটি অংশ ফেরত আসছে না। এতে খেলাপি ঋণ ব্যাপকভিত্তিতে বেড়ে গেছে। আর এ খেলাপি ঋণ কমাতে ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে।

দ্বিতীয় কারণ হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকার জোগানের পাশাপাশি সরকারি কেনকাটার তহবিল জোগান দেয়ার জন্য রিজার্ভ থেকে প্রতিনিয়তই সরকারি ব্যাংকগুলোকে বৈদেশিক মুদ্রার জোগান দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার কেনা হচ্ছে টাকার বিপরীতে। এতে ব্যাংকের টাকা চলে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে।

তৃতীয় কারণ হলো, এক শ্রেণীর ব্যাংক বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংকগুলোর আগে যেখানে অলস টাকা থাকতো। এখন কিছু ব্যাংকের টাকার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সব মিলেই বাজারে তারল্য সঙ্কট বেড়ে গেছে। এ সঙ্কট মেটানোর জন্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তহবিল যোগান দেয়া হচ্ছে।

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত ২৭ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিভিন্ন উপকরণ বন্ধক রেখে ২৮ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা ধার করেছে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে এক দিন মেয়াদি রেপো সহায়তার আওতায় ৪টি ব্যাংক ৪০৬ কোটি টাকা, ২৩টি ব্যাংক ও তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৭ দিন মেয়াদি রেপোর মাধ্যমে ৯ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা ধার করেছে। ১টি ব্যাংক ২৮ দিন মেয়াদি রেপোর মাধ্যমে তিন হাজার ৫৬ কোটি টাকা ধার করেছে। সরকারের ঋণ দিতে বাধ্য এমন ১৩ ব্যাংক ১০ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা ধার করেছে। এভাবে টাকার সঙ্কটে থাকা ব্যাংকগুলো গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মোট ধার করেছে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা। এ জন্য ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সুদ দিতে হবে সর্বোচ্চ সোয়া আট শতাংশ।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, টাকার সঙ্কট বেড়ে যাওয়ায় কলমানি মার্কেট থেকেও উচ্চ সুদে ধার করতে হচ্ছে। ২৭ মার্চ টাকার সঙ্কটে থাকা ব্যাংকগুলো ধার করেছে তিন হাজার কোটি টাকা। এজন্য গড় সুদ দিতে হয়েছে ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ।

এ দিকে প্রতি মাসেই বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। রফতানি আয় ও রেমিট্যান্সের মাধ্যমে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসছে, বিপরীতে ব্যয় হচ্ছে তার চেয়ে বেশি। আর এ কারণেই বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ ছিল দুই হাজার ৫৭ কোটি ডলার। গত ২৭ মার্চ তা কমে নেমেছে এক হাজার ৯৪৫ কোটি ডলারে। এ হিসেবে ২৭ দিনে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে ১১২ কোটি ডলার।




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top