দেশে আড়াই কোটি কিডনি রোগীর জন্য চিকিৎসক মাত্র ৩০০ জন

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ১৪ মার্চ ২০২৪ ১৯:৫৯; আপডেট: ৫ মে ২০২৪ ০৩:৩২

ছবি: সংগৃহীত

দেশে কিডনি রোগী বৃদ্ধির হার ভবিষ্যতে মহামারী আকার ধারণ করতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। এ সময় দেশে কিডনি চিকিৎসকের অপ্রতুলতার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা আনুমানিক আড়াই কোটি। এর বিপরীতে চিকিৎসক রয়েছে মাত্র ৩০০ জন।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে বিশ্ব কিডনি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, বাংলাদেশে কম-বেশি কিডনি রোগীর সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ। এদের মধ্যে আকস্মিক কিডনি রোগীর সংখ্যা প্রতিবছর ২৫ থেকে ৩০ হাজার। দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগীর (সিকেডি) সংখ্যা ৩৫ থেকে ৪০ হাজার। বাংলাদেশে কিডনি রোগের চিকিৎসক রয়েছে ৩০০ জন। বর্তমান বিশ্বে কিডনি রোগের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে ১০ বছর পূর্বে কিডনি রোগীর সংখ্যা ছিল ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি আর বর্তমানে এর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ কোটি। বৃদ্ধির হার এতই ব্যাপক যে অদূর ভবিষ্যতে এটা মহামারি আকার ধারণ করতে পারে।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ২টি কিডনির প্রতিটিতে প্রায় ১০-১২ লাখ ছাকনি রয়েছে। মানুষ জন্মগ্রহণ করার ৬ সপ্তাহের মধ্যেই কিডনীর ছাকনি বা ফিল্টার মেমব্রেন পুরোপুরি তৈরি হয়ে যায়। অর্থাৎ কিডনি পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারে এবং প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ২০০ লিটার রক্ত পরিশোধিত করে। এই পরিশোধিত রক্তের মধ্যে ১-৩ লিটার শরীরের বর্জ্য পদার্থ প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেওয়া হয়। সুতরাং কোনো কারণবশত যদি এ ধরনের ফিল্টার বাঁধাপ্রাপ্ত হয় তখন আকস্মিক বা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ হতে পারে। কিডনির কার্যকারিতা যাচাই করার জন্য রক্তে ক্রিয়েটিনিন নামক জৈব পদার্থ পরিমাপ করা হয়। যার মাধ্যমে কিডনি কতটুকু কাজ করছে তা বোঝা যায়। একজন সুস্থ পুরুষ লোকের শরীরে ক্রিয়েটিনিন সাধারণভাবে ১.১ মি.গ্রা. ১ শতাংশ হিসেবে এবং মহিলার ১.০ মি.গ্রা. ১ শতাংশ হিসাবে স্বাভাবিক ধরা হয়। যদি এই ক্রিয়েটিনিন স্বাভাবিকের উপরে ৩ মাস বা ততোধিক স্থায়ী থাকে তখন তাকে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগী হিসাবে শনাক্ত করা হয়।

রক্তে ক্রিয়েটিনিন ছাড়াও প্রস্রাবে নির্দিষ্ট মাত্রার অধিক প্রোটিন বা এলবুমিন থাকলে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ আছে বলে ধরা হয়। বাংলাদেশে এক সমীক্ষায় (৩ হাজার প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের উপর) দেখা গেছে যে, প্রায় শতকরা ১৮ ভাগ মানুষ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ১১ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ায় ১৬ শতাংশ এবং আইসল্যান্ডে ১০ শাতাংশ মানুষ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত।

ডায়ালাইসিস ও কিডনি প্রতিস্থাপন বিষয়ে আলোচকরা বলেন, বর্তমান বিশ্বে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করে একজন রোগী ৫ থেকে ১৫ বছর এবং সফল কিডনি সংযোজনের মাধ্যমে ১০-১৫ বছর স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারে। নিয়মিত ডায়ালাইসিস বলতে সপ্তাহে ৩ বার ৪ ঘণ্টা করে হেমোডায়ালাইসিস মেশিনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা বোঝায়। ঠিক তেমনি নিকট আত্মীয়ের কিডনি নিয়ে কিডনি প্রতিস্থাপনকে কিডনি সংযোজন বুঝানো হয়। অবশ্য উন্নত বিশ্বে মৃত ব্যক্তির কিডনি নিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিডনি সংযোজন করা হয়ে থাকে। নিকট আত্মীয় বলতে মা-বাবা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়েকে বুঝায়। অবশ্য স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে কিডনি সংযোজনের কোনো বাধা নেই।

এছাড়া কন্টিনিউয়াস এমুলেটরি পেরিটনিয়াল ডায়ালাইসিস এক ধরনের ডায়ালাইসিস যাতে রোগীর পেটের ভিতরে স্থায়ীভাবে একটি ক্যাথেটার সংযোজনের মাধ্যমে পেরিটনিয়াল ফ্লুইড ব্যবহার করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে ইহা হেমোডায়ালাইসিস এর চেয়ে অধিকতর সুবিধাজনক, যেমন বাসায় বসে করা যায়। যাদের হেমোডায়ালাইসিস দেওয়া সম্ভব নয়, তাদের জন্য এটি একটি উৎকৃষ্ট পদ্ধতি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের দেশে সিএপিডর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলছে বলেও জানান আলোচকরা।

এ অবস্থায় কিডনি রোগ প্রতিরোধ করতে হলে ওজন নিয়ন্ত্রণ, ধূমপান পরিহার ও নিয়মিত ব্যায়াম, নিয়ন্ত্রিত প্রোটিনযুক্ত খাবার, ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, রক্তে চর্বির মাত্রা নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top