ভারতের পরবর্তী নির্বাচনে ইস্যু হবে আদানি বিপর্যয়?

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২০:০২; আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:৩৫

গৌতম আদানি ছবি: রয়টার্স

আদানি ইস্যুতে গতকাল ভারতীয় পার্লামেন্টের উভয়কক্ষেই গতকাল দেখা দেয় বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা। শেষ পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি করা হয়। পার্লামেন্টে আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে তদন্তের দাবি তোলেন বিরোধীদলীয় জনপ্রতিনিধিরা। এ নিয়ে বিতর্ক এক পর্যায়ে রূপ নেয় তুমুল বাগবিতণ্ডায়।

এ বাগবিতণ্ডা সামনের দিনগুলোয় ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের ইস্যু হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। তাদের ভাষ্যমতে, বৈশ্বিক অর্থনীতির চলমান দুর্বিপাকের মধ্যেই ভারতের আর্থিক খাতকে নিয়ে বড় আশঙ্কা তৈরি করেছে আদানি গ্রুপের বিপর্যয়। কনগ্লোমারেটটির মালিক গৌতম আদানির সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। দেশটিতে পরবর্তী লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছর। এমন পরিস্থিতিতে বড় ধরনের রাজনৈতিক ইস্যুতে রূপ নিতে পারে আদানি গ্রুপ নিয়ে ওঠা অভিযোগ। বিষয়টি আগামী লোকসভা নির্বাচনে প্রভাব ফেলার মতো অবস্থায় পৌঁছয় কিনা, সেদিকে তীক্ষ নজর রাখছেন পর্যবেক্ষকরা।

ভারতের শীর্ষ কনগ্লোমারেট আদানি গ্রুপের টালমাটাল অবস্থায় অস্থির হয়ে উঠেছে দেশটির পুঁজিবাজার। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোও শঙ্কায় রয়েছে। দেশটির আর্থিক খাতের দিকে সতর্ক মনোযোগ রাখছেন পর্যবেক্ষকরাও। এর মধ্যেই ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি মুডি’স সতর্ক করে বলেছে, শেয়ারের দরপতন আদানি গ্রুপের মূলধন বাড়ানোর সক্ষমতায় আঘাত হানতে পারে। এ প্রতিকূল পরিস্থিতি আগামী দু-এক বছরের মধ্যে গ্রুপটির ঋণ পুনঃঅর্থায়নের ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।

আদানি গ্রুপকে ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতি গোটা ভারতের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে এমন আশঙ্কার মধ্যেই কিছু ভারতীয় রাজনীতিবিদ এ বিষয়ে ব্যাপক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষ করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে বেশি সরব। এ নিয়ে গতকাল উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভারতের পার্লামেন্টের উভয়কক্ষ। দুই কক্ষেই সংসদ সদস্যরা ঘটনা তদন্তে সংসদীয় কমিটি গঠনের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। তাদের অনেককে উচ্চৈঃস্বরে স্লোগানও দিতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাজেট অধিবেশন মুলতবি করা হয়।

ভারতের সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা যেমন এসবিআই, এলআইসির মতো প্রতিষ্ঠানের বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে আদানি গ্রুপে। এ বিষয়ে আম আদমি পার্টির নেতা সঞ্জয় সিং স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, সাধারণ মানুষ বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। কিন্তু মোদি সরকারের এ নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। এটি একটি বড় প্রতারণার ঘটনা। এটি অবশ্যই পার্লামেন্টে আলোচনা করার মতো বিষয়।

নরেন্দ্র মোদি ও গৌতম আদানির সুসম্পর্কের বিষয়টিকে এখন বেশি করে সামনে নিয়ে আসছে বিরোধী পক্ষ। বিষয়টিকে ক্ষমতাসীন বিজেপির জন্য বিব্রতকর আখ্যা দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, এমন একটি সময়ে বিষয়টি সামনে এসেছে যখন তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় যেতে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। সামনেই কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে নির্বাচন রয়েছে।

হিনডেনবার্গের প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই কথা ওঠে, আদানির বিপুল সম্পদ অর্জনের পেছনে নরেন্দ্র মোদির হাত রয়েছে। এ নিয়ে বিরোধীদের বক্তব্য হলো নরেন্দ্র মোদি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, সে সময়ই উত্থান ঘটে আদানির।


তবে এ অভিযোগকে সরাসরি অস্বীকার করছেন গৌতম আদানি। এ বিষয়ে তার বক্তব্য হলো নরেন্দ্র মোদি আর তিনি একই রাজ্যের বলে খুব সহজেই বিরোধীরা এ যুক্তিটি দাঁড় করাচ্ছে। কিন্তু এর কোনো সত্যতা নেই। তার সাফল্যের পেছনে একক কোনো নেতৃত্বের সম্পর্ক নেই।

বিশ্লেষকরা বলছেন, গৌতম আদানির এ ঘটনা নরেন্দ্র মোদিকে এক ধরনের অ্যাসিড টেস্টের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে মোদি বারবারই দুর্নীতিমুক্ত ভারত গড়ার কথা বলছেন। আর সেখানে তার নাকের ডগায় বসে দুর্নীতি করে গিয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় গ্রুপগুলোর একটি। ঠিক যে সময় ভারত নানাভাবে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে চাইছে, চীনকে ছাড়িয়ে যেতে নানা ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে ঠিক সে সময় এ ঘটনা মোদি সরকারের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে। আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে ওঠা জালিয়াতির অভিযোগ ভারতের বাজারে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য আস্থার সংকট সৃষ্টি করবে। তাই সরকার কীভাবে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে, সেদিকেও তাকিয়ে রয়েছেন এখন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা।

গত ২৪ জানুয়ারির আগ পর্যন্ত আদানি গ্রুপের মালিক গৌতম আদানি ছিলেন ভারতের সর্বোচ্চ ধনী, বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় ৩ নম্বরে ছিল তার নাম। সেদিন আদানির সম্পদ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ। সেখানে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে ‘করপোরেট জগতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজির’ অভিযোগ আনা হয়। সেখানে বলা হয়, ট্যাক্স হ্যাভেন ব্যবহারের পাশাপাশি শেয়ারের দাম বাড়াতে নিয়মের বাইরে গিয়ে কাজ করেছে আদানির কোম্পানি। বাজারে শেয়ারের দামের মূল্যায়ন বেশি করে দেখানো হয়েছে।

যদিও এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে তা প্রত্যাখ্যান করে আদানি গ্রুপ। কিন্তু ততক্ষণে টলে গেছে তাদের সাম্রাজ্য। পুঁজিবাজারে শুরু হয়ে যায় গ্রুপের কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরে পতন। সবশেষ এক সপ্তাহে আদানি গ্রুপ খুইয়েছে ১০ হাজার কোটি ডলারের বেশি সম্পদ। কমেছে গৌতম আদানির সম্পদের পরিমাণও। এরই মধ্যে ভারতের ব্যাংক ও আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আদানি গ্রুপের মোট ঋণের হিসাব চেয়ে পাঠিয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।

আশির দশকে মুম্বাইয়ে হীরা ব্যবসায়ী হিসেবে যাত্রা করেন প্রথম প্রজন্মের উদ্যোক্তা গৌতম আদানি। কিছুদিন গুজরাটে ভাইয়ের প্লাস্টিক ব্যবসাও দেখভাল করেছেন স্কুলছুট এ ধনকুবের। ১৯৮৮ সালে কৃষিপণ্য নিয়ে আদানি এন্টারপ্রাইজেস শুরু করেন তিনি। পরবর্তী দুই দশকে বন্দর, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ, বিমানবন্দর পরিচালনা, ডাটা সেন্টার ও ডিজিটাল পরিষেবায় প্রবেশ করেন।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top