ইসরাইল আন্তর্জাতিক আইন ভেঙেছে মার্কিন অস্ত্র দিয়েই : যুক্তরাষ্ট্র

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ১১ মে ২০২৪ ১৩:৫৬; আপডেট: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:৪৭

- ছবি - ইন্টারনেট

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলছে, গাজা যুদ্ধের সময় কিছু কিছু ঘটনায় ইসরাইল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করেছে। এক্ষেত্রে তারা আমেরিকার সরবরাহকৃত অস্ত্র ব্যবহার করে থাকতে পারে।

যুক্তরাষ্টের পররাষ্ট্র দফতর বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের সরবারহকৃত অস্ত্রগুলো যে ইসরাইল অসঙ্গত কারণে ব্যবহার করেছে এটার মূল্যায়ন করা জরুরি।

তবে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলছে, তারা কী মাত্রায় এর ব্যবহার করেছে তার বিস্তারিত তথ্য তাদের কাছে নেই।

শুক্রবার কংগ্রেসে এই রিপোর্ট পেশ করা হয়।

হোয়াইট হাউজের এই পর্যালোচনায় উঠে এসেছে শুধু গাজা নয়, আমেরিকার সরবারহকৃত অস্ত্র ব্যবহার করে আরো অন্তত ছয়টি দেশের সাথে সংঘাতে জড়িয়েছে ইসরাইল।

গাজায় পরিচালিত ইসরাইলির কিছু অভিযানের সরাসরি সমালোচনা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে, কিন্তু তার মাধ্যমে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী সেখানে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে কিনা, তা নিয়ে সরাসরি কিছু বলা হয়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ইসরাইলকে একটা সামরিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে।

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, মার্কিন অস্ত্রের আইনি ব্যবহার মেনে চলতে ইসরাইলের কাছ থেকে আশ্বাস পাওয়া গিয়েছিল। সে কারণেই এই অস্ত্রের সরবারহ চালু রাখতে রাজি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন এই প্রতিবেদনে এটিও বলা হয় যে- হামাস ‘সামরিক উদ্দেশে বেসামরিক অবকাঠামো এবং নাগরিকদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার’ করেছে যুদ্ধের সময়। যুদ্ধ চলার সময় কোনটা বৈধ লক্ষ্যবস্তু সেটা যাচাই করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে।

তবে প্রতিবেদনে এটাও বলা হয়েছে, মার্কিন অস্ত্রের ওপর ইসরাইলের অতিমাত্রায় নির্ভরতার কারণেই হয়তো তারা বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আইএইচএল বা আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মানার চেষ্টা করেছিল।

এতে আরো বলা হয়, বেসামরিক ক্ষতি কমানোর মতো জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও সরঞ্জাম সবই ইসরাইলের রয়েছে। এ কারণেই গাজায় স্থল অভিযানে এত হতাহতের সব ঘটনায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনী সেসব সক্ষমতা ঠিক মতো ব্যবহার করছে কিনা, সেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসঙ্ঘ এবং আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো বেসামরিক ক্ষতি কমাতে ইসরাইলের প্রচেষ্টাকে অকার্যকর এবং অপর্যাপ্ত বলে বর্ণনা করেছে।

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এটাও লক্ষ করেছে যে- যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রথম মাসগুলোতে গাজায় সর্বোচ্চ মানবিক সহায়তা সর্বাধিক করতে যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রচেষ্টা ছিল তাতে পরিপূর্ণ সহযোগিতা করেনি ইসরাইল। এ কারণেই পরিস্থিতি ধীরে ধীরে খারাপের দিকে গেছে।

তবে বর্তমানে গাজায় মানবিক সহায়তা নিয়ে যাওয়া গাড়িগুলোকে ইসরাইল আটক কিংবা বাধা দিচ্ছে না বলেও উঠে এসেছে মার্কিন ওই প্রতিবেদনে।

এই প্রতিবেদন যারা প্রস্তুত করেছেন তাদের একজন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়োজিত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড স্টারফিল্ড বিবিসিকে বলেছে, গাজা যুদ্ধের প্রথম থেকেই ইসরাইলি পদক্ষেপগুলো পর্যবেক্ষণে এনেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

‘সারা বিশ্ব দেখেছে এটা অন্যসব যুদ্ধ কিংবা সংঘাতের মতো ছিল না’, যোগ করেন তিনি।

‘আমরা একদম খোলামেলাভাবে প্রতিটি বিষয়ের বিশ্বাসযোগ্য মূল্যায়ন তুলে আনার চেষ্টা করেছি এই রিপোর্টে’।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেন প্রকাশ্যে ইসরাইলের কাছ থেকে কিছু বোমা এবং আর্টিলারি শেল প্রত্যাহার করার হুমকি দেয়ার কয়েক দিন পরে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ পেয়েছে। যখন রাফায় হামাসের শেষ শক্ত ঘাটিতে দশ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে রয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেন হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে- রাফাহ অভিযান হবে ‘চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করা’, এই প্রতিবেদনটি প্রকাশের কিছুক্ষণ আগে তা নাকচ করে দিয়ে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, কেউ পাশে না থাকলেও ইসরাইল একা লড়বে’।

সোমবার থেকে ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ রাফাহ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। জাতিসঙ্ঘ বলছে, অব্যাহত বোমাবর্ষণের মধ্যে ইসরাইলি ট্যাঙ্কগুলো আরো কাছাকাছি চলে আসছে।

অভিযানের শুরুতে মিশরের কাছে রাফাহ সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ নেয় ইসরাইলি বাহিনী এবং সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। তখন থেকেই জাতিসঙ্ঘ বলে আসছিল এই সীমান্ত দিয়ে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানো বেশ বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলে হামাসের হামলার পর থেকে সংগঠনটিকে ধ্বংস করতে গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরাইল।

হামাসে হামলায় ইসরাইলে ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত ও ২৫২ জন বন্দী হয়। অন্যদিকে গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরাইলের হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় ৩৪ হাজার ৯০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

সূত্র : বিবিসি



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top