রাফায় হামলা বন্ধ করতে বিশ্ব আদালতের রায়, এরপর কী হবে?

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ২৫ মে ২০২৪ ১০:২১; আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪ ১৩:১৭

- ছবি - ইন্টারনেট

জাতিসঙ্ঘ আদালত তথা ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিজ (আইসিজে) শুক্রবার গাজার রাফা এলাকায় সামরিক অভিযান বন্ধ করতে ইসরাইলের প্রতি নির্দেশ জারি করেছে। এছাড়া গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বাড়ানোর নির্দেশও জারি করা হয়েছে। এখন কী হবে?

বিশ্বআদালতের সুস্পষ্ট রায়ের পরও ইসরাইল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বলছে, হামাসকে পরাজিত করার তাদের মিশন শেষ করার জন্য রাফায় হামলা চালানো জরুরি।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এখনো তার আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেননি। তবে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ইসরাইল অব্যাহতভঅবে আইসিজের নির্দেশ লঙ্ঘন করে যাবে।

বিশ্লেষক গুরমেন্ডি মনে করেন, এই রায়ের ফলে অন্তত ইসরাইলের মিত্ররা ইসরাইলকে অস্ত্র সরবরাহ করতে সংযত হবে। তারা এখনকার মতো ইসরাইলকে অস্ত্র সরবরাহ করতে পারবে না।

তিনি বলেন, তারা এখন রাফায় ব্যবহারের জন্য ইসরাইলে অস্ত্র বিক্রি করতে যুক্তি পাবে না। এটা আইনগতভাবে হবে অসম্ভব কাজ। ফলে আইসিজের নির্দেশের ফলে রাফায় হামলা বন্ধ না হলেও এটি ইসরাইলে অস্ত্র বিক্রি অব্যাহত রাখার ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।

আইসিজের নির্দেশ আইনগতভাবে বাধ্যবাধকতামূলক। এখন আদালতের রায় নিয়ে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা হবে। এখানেই আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য সম্মিলিত সিদ্ধান্ত হতে পারে। তবে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিতে পারে। ইসরাইলকে জাতিসঙ্ঘে সুরক্ষা দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এবারো এর ব্যতিক্রম হবে বলে মনে হয় না।

তবে এই রায় ইসরাইলের ওপর আরো কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আরো কোণঠাসা হয়ে পড়বেন।

শুক্রবার ১৫ সদস্যের বিচারক প্যানেল ১৩-২ ভোটে এই রায় দেয়। রাফায় অভিযান বন্ধের পক্ষে ভোট পড়ে ১৩টি, বিপক্ষে পড়ে ২টি। যে দুজন বিপক্ষে ভোট দেন তারা হলেন আদালতে উগান্ডার প্রতিনিধি জুলিয়া সেবুতিনদে এবং ইসরাইলের প্রতিনিধি আহারন বারাক।

গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযান বন্ধ করার আদেশ দিতে বিশ্ব আদালতের প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার আবেদনের পেক্ষাপটে শুক্রবার এই রায় দেয়া হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা অভিযোগ করেছে, গাজায় ইসরাইল 'গণহত্যা' চালাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকে (আইসিজে) অবিলম্বে রাফাসহ গাজায় হামলা বন্ধ করতে আদেশ দিয়ে অনুরোধ করে দক্ষিণ আফ্রিকা।

আইসিজের প্রধান নওয়াফ সালাম তার রায়ে বলেন, 'গণহত্যার অভিযোগ তদন্তে জাতিসঙ্ঘে যোগ্য সংস্থার যেকোনো তদন্ত কমিশন, তথ্যানুসন্ধান মিশন বা তদন্ত সংস্থার অবাধে গাজায় প্রবেশ নিশ্চিত করার জন্য ইসরাইলকে অবশ্যই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।'

তিনি আরো বলেন, গাজার ব্যাপারে আইসিজের আগের রায়ের পর ইসরাইলের গ্রহণ করা প্রাথমিক পদক্ষেপগুলো পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুরোপুরি সামাধান করা হয়নি।

আইসিজে এক মাসের মধ্যে অগ্রগতির ব্যাপারে আদালতকে অবহিত করার জন্যও ইসরাইলের প্রতি নির্দেশ জারি করে।

আদালত মানবিক সহায়তার জন্য রাফা সীমান্ত ক্রসিং খুলে দিতে ইসরাইলকে নির্দেশ দেয়।

আইজিসে রায়ে আরো জানায়, বর্তমান পরিস্থিতি গাজার জনসাধারণের অধিকারের অপূরণীয় ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আদারতের প্রধান বিচারপতি বলেন, আট লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তাদের নিরাপদে এবং মানবিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে বলে ইসরাইলের কথায় তিনি বিশ্বাস করেন না। তিনি বলেন, এর কোনো প্রমাণ নেই। আর এ কারণেই আদালত কঠিনভাবে নির্দেশ দিচ্ছে যে ইসরাইলকে অবিলম্বে রাফায় সামরিক আক্রমণ বন্ধ করতে হবে এবং সেখান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে।

এই আদালত হলো জাতিসঙ্ঘের সর্বোচ্চ সংস্থা। এই সংস্থা বিভিন্ন দেশের মধ্যকার বিবাদ শোনে। এর রায় চূড়ান্ত এবং পালন করা বাধ্যতামূলক। তবে অতীতে এই আদালতের রায় অগ্রাহ্য করা হয়েছে। আদালতের তার রায় কার্যকর করার কোনো ক্ষমতা নেই।

এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান প্রসিকিউটর সোমবার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াভ গ্যালান্ট এবং তিন হামাস নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছেন। উল্লেখ্য, আইসিসি এবং আইসিজে আলাদা সংস্থা। তবে সংস্থা দুটির কার্যালয়ই হেগে।

সূত্র : আল জাজিরা, এএফপি এবং অন্যান্য



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top