পোশাক শিল্পে পাঁচ বছরে উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৪০ শতাংশ

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২ আগস্ট ২০২২ ২৩:২১; আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৫ ২০:৪৪

রাজটাইমস ডেস্ক

দেশে সৃষ্ট নানামুখী অর্থনৈতিক মন্দায় পোশাক শিল্পের অবনয়নের পরিস্থিতি তুলে ধরে অর্থ বিভাগকে চিঠি দিয়েছে বিজিএমইএ। চিঠিতে তারা তুলে ধরে, শিল্পের কাঁচামাল সংগ্রহ, কনটেইনার ভাড়া, ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে গত পাঁচ বছরে পোশাক খাতের সামগ্রিক উৎপাদন খরচ ৪০ শতাংশ বেড়েছে। খবর বণিক বার্তা

সম্প্রতি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে এ খরচ আরো বাড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতির কারণে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাকের চাহিদা কমেছে। এতে আগের তুলনায় কমেছে ক্রয়াদেশ। এমন পরিস্থিতিতেই তৈরি পোশাক শিল্প খাতে চলতি অর্থবছরে উৎসে কর গত অর্থবছরের তুলনায় দ্বিগুণ করা হয়েছে, যা খাতটির ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে। তাই উৎসে কর দশমিক ৫ শতাংশ করাসহ দীর্ঘমেয়াদি নীতিসহায়তা চান পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা।

এ সহায়তা চেয়ে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে চিঠি লিখেছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গিয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, ‘কভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় পরিবর্তন’ শিরোনামে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে উন্নয়ন সমুন্নত রাখতে সহায়ক হবে।তাছাড়া কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশসহ বিশেষ খাতে আলাদাভাবে বরাদ্দ রাখা সরকারের উন্নত বাংলাদেশ গঠনের অভিপ্রায়কে প্রতিফলিত করে।’

এবারের বাজেটে পোশাক শিল্পকে উৎসাহিত করার জন্য আগের বছরের মতো হ্রাসকৃত করপোরেট ট্যাক্স হার বহাল রাখা হয়েছে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, একই সঙ্গে ব্যবসা সহজীকরণে ভ্যাট আইন ও কর আইনে অনেকগুলো সংশোধন করা হয়েছে, যা রফতানি বাড়াতে সহায়ক হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।তবে বাজেটে উৎসে করহার দশমিক ৫ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে। তবে পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের দাবি, এ কর আগের মতোই দশমিক ৫ শতাংশ করতে হবে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ করনীতি হারগুলো হঠাৎ পরিবর্তন হলে ব্যবসায় মধ্যমেয়াদি থেকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন বাধাগ্রস্ত হয়।

উৎসে কর বৃদ্ধির ফলে বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে পোশাক শিল্পের জন্য অত্যন্ত দুরূহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন এ খাতসংশ্লিষ্টরা। বিজিএমইএ বলছে, যখন পোশাক শিল্প মহামারীর ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ঠিক সে সময় এ করহার বাড়ানো কোনোভাবেই সঠিক নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে উৎসে কর বৃদ্ধি পোশাক শিল্পের টিকে থাকার সংগ্রাম আরো কঠিন করে তুলবে।

চিঠিতে আরো বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে একদিকে যেমন জ্বালানি তেলসহ খাদ্য ও নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে, অন্যদিকে ইউরোপসহ বিশ্বের বেশকিছু দেশের অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। ইউরোপ ও আমেরিকায় মূল্যস্ফীতি তীব্র আকার ধারণ করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশগুলো সুদহার বাড়াচ্ছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের চাহিদা কমছে, আগামীতে আরো কমার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বিজিএমইএ জানিয়েছে, গত পাঁচ বছরে পোশাক খাতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৪০ শতাংশ। এর পেছনে নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে শিল্পের কাঁচামাল সংগ্রহ, কনটেইনার ভাড়া, ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণ। আবার সম্প্রতি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে উৎপাদন খরচ আরো বৃদ্ধির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী ডলারের অবস্থান শক্তিশালী হচ্ছে। ডলারের বিপরীতে মান হারাচ্ছে ইউরো। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ ইউরো ও ডলারের মূল্য সমান পর্যায়ে চলে আসতে পারে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের মূল্যে।

এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তৈরি পোশাক রফতানিতে প্রযোজ্য উৎসে কর আগামী পাঁচ বছর দশমিক ৫ শতাংশ কার্যকর রাখতে অনুরোধ জানিয়েছে বিজিএমইএ। পাশাপাশি এ খাতের জন্য বিদ্যমান প্রণোদনাগুলোও আরো পাঁচ বছর অব্যাহত রাখার অনুরোধ করা হয়েছে। সংগঠনটি বলছে, শিল্প টিকে থাকলে রাজস্ব আসবে, নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে রফতানি বাড়াতে পারলে করহার না বাড়িয়েও রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব হবে।

তবে বিজিএমইএর চিঠির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি অর্থ বিভাগ। এ বিষয়ে বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, উৎসে কর কমানো বা বাড়ানোর বিষয়ে কাজ করে জাতীয় রাজস্ব (এনবিআর)। এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এসএম মান্নান (কচি) বণিক বার্তাকে বলেন, বৈশ্বিক মহামারীতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পোশাক খাত। এরপর সংক্রমণ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে প্রচুর ক্রয়াদেশ আসতে শুরু করে। ফলে পোশাক খাত ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা অর্জন করে। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি প্রচুর বেড়ে যায়। এ কারণে ওইসব দেশের মানুষ পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছে। তাই ক্রয়াদেশও কমতে শুরু করেছে, যা ভবিষ্যতে আরো কঠিন আকার ধারণ করার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া উৎপাদন খরচ ব্যাপক হারে বেড়ে গিয়েছে। এসব পরিস্থিতিতে উৎসে কর কমানোসহ অন্যান্য নীতিসহায়তা দীর্ঘমেয়াদে প্রদান করে সরকার এ সংকটকালে পোশাক খাতকে টিকে থাকতে সহায়তা করবে বলে আশা করছি।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী তৈরি পোশাকের ওপর ভর করে দেশের ইতিহাসে বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রফতানি আয় অর্জিত হয়েছে। এ সময়ে ৫ হাজার ২০৮ কোটি ২৬ লাখ ৬৬ হাজার মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি। মোট রফতানির ৮১ দশমিক ৮১ শতাংশ এসেছে তৈরি পোশাকপণ্য থেকে। পণ্যটির রফতানির অর্থমূল্য ছিল ৪ হাজার ২৬১ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার। ২০২০-২১-এর তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে তৈরি পোশাকের রফতানি আয় বেড়েছে ৩৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূল্যস্ফীতির কারণে বাংলাদেশের পোশাকের আমদানিকারক দেশগুলোয় ভোক্তা চাহিদা স্বাভাবিকভাবেই কমবে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে বিদেশী ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেন কোনো ধরনের অনিশ্চয়তার ইঙ্গিত না পায়, সেটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তার জন্য শিল্প-কারখানায় গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং কাঁচামাল আমদানির জন্য পর্যাপ্ত ডলার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

বণিক বার্তার খবরের লিংক

 



বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top