হারিয়ে যাবে পারিবারিক খাবার

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ৪ আগস্ট ২০২২ ১৬:৪৭; আপডেট: ৪ আগস্ট ২০২২ ১৬:৪৯

রাজটাইমস ডেস্ক

শিল্পোন্নয়নের ছোঁয়ায় একের পর কমছে কৃষি ভূমির পরিমান। জনসংখ্যা বাড়ায় বাড়ছে বসতবাড়ির পরিমাণও। ফলে অল্প জমি থেকে বেশি মানুষকে খাওয়াতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে কৃষকের স্থান দখল করে নিচ্ছে যন্ত্র। আর সেই যন্ত্রের ব্যবহারে উৎপাদন বাড়ছে। এতে পুরোদস্তুর বাণিজ্যে রূপ নিতে চলেছে কৃষি। সেক্ষেত্রে একটি গোষ্ঠীর হাতে চলে যাবে এ খাত। ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ দেশ থেকে হারিয়ে যেতে পারে পারিবারিক খামার ও কৃষি শ্রমিক। অথচ বাংলাদেশের গ্রামীণ উন্নয়নে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এ পারিবারিক খামার। তাই এ বিষয়ে এখনই আলোচনা করতে হবে। 

গতকাল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) আয়োজনে বিআইডিএস কনফারেন্স কক্ষে ‘ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স অব বেঙ্গলি ফ্যামিলি ফার্ম’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা তুলে ধরেন যুক্তরাজ্যের বাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক জিওফ উড।

উড বলেন, খাদ্যনিরাপত্তায় পারিবারিক খামার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বিশ্বায়নের ফলে কৃষিজমি ছোট হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে হারিয়ে যাচ্ছে পারিবারিক কৃষি খামার। কৃষিতে নতুন বৈচিত্র্য এসেছে। সনাতন পদ্ধতির স্থলে জায়গা করে নিয়েছে যান্ত্রিকীকরণ। বর্তমানে বিভিন্ন কারণে পারিবারিক খামার থেকে বাংলাদেশের মানুষ বেরিয়ে আসছে। গ্রামীণ অবকাঠামো ও যোগাযোযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ, গার্মেন্টস উৎপাদন, আন্তর্জাতিক অভিবাসন ও রেমিট্যান্স এবং কৃষি মজুরি বৃদ্ধিসহ নানা কারণ রয়েছে। বর্তমানে কৃষক চাষ করার পর নিজে ৪০ শতাংশেরও কম পান। আর ৪৫ শতাংশই মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে যায়।

তিনি আরো বলেন, তবে এখানে তিন ধরনের সম্ভাবনা রয়েছে ফার্মগুলো ভেঙে যাবে, বড় কমার্শিয়াল ফার্মের জন্ম হবে, সনাতনী রূপটা থাকবে না আবার কমার্শিয়ালও থাকবে না। এখানে কৃষকের জায়গাটা নেবে সার্ভিস প্রভাইডাররা। এতে কৃষক পুরোপুরি কৃষি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। জমিটা একটা গোষ্ঠী নিয়ে সিজনাল সময়ে কমার্শিয়ালভাবে চাষাবাদ করবে। এতে একটা মাস্তানিজম কাজ করবে।

বাংলাদেশের জন্য কৃষি খাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, পৃথিবীর মধ্যে ঘন বসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ। যেখানে বিশ্বায়ন ও নগরায়ণ চলছে। যে দেশে রেমিট্যান্স একটা বড় ভূমিকা পালন করে। সেখানে কৃষি খাতের ভূমিকা বাড়ছে। কারণ অল্প জমি থেকে বেশি মানুষকে খাওয়াতে হচ্ছে। ফলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কৃষকের কাজ কী সার্ভিস প্রভাইডাররা পূরণ করতে পারবে? নতুন একটা গোষ্ঠী কৃষিকাজে এলে তারা কোন মোটিভেশনালে এল, তারা কৃষি খাতকে শোষণ করার জন্য এসেছে? নাকি অন্য কিছু। এসব নিয়ে আমাদের আরো আলোচনা করতে হবে। একটা কাজের মধ্য দিয়ে সুরাহা করতে হবে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এমএ সাত্তার মন্ডল বলেন, মালিকানাকেন্দ্রিক বা পরিবারভিত্তিক যে কৃষি তা হারিয়ে যাচ্ছে। আগে দেখতাম ধনী কৃষক নিজের ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি অন্যের জন্যও ফসল ফলাতেন। একদিকে জমি খণ্ড খণ্ড হচ্ছে, অন্যদিকে এ খাতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা আসছেন। বিশেষ করে গ্রামীণ তরুণরা কৃষিজমিতে কাজ করছে।

বিআইডিএস মহাপরিচালক ড. বিনায়েক সেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এবং অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

খবরের লিঙ্ক



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top