মোংলা বন্দর ব্যবহারেও নামমাত্র ট্রান্সশিপমেন্ট ফি!

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৭ আগস্ট ২০২২ ১৮:৫৪; আপডেট: ২৭ আগস্ট ২০২২ ২০:১৯

ছবি: সংগৃহিত

দেশের দুই সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারে করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় পণ্য সরবরাহে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হয়েছিল ২০১৮ সালের অক্টোবরে। মহামারী করোনাসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় তেমন অগ্রগতি হয় নি। ভারত চাইছে দ্রুত পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষ করে বন্দর ব্যবহার শুরু করতে। এজন্য গত ৮ আগস্ট মোংলা বন্দর দিয়ে পরীক্ষামূলক দুই কনটেইনার পণ্য গেছে ভারতে। তবে এজন্য নামমাত্র ফি দিতে হয়েছে দেশটিকে। খবর শেয়ার বিজের।

চুক্তি অনুযায়ী, ভারতীয় পণ্য চট্টগ্রাম বা মোংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সাত ধরনের মাশুল আদায় করবে। এর মধ্যে প্রতি মেট্রিক টনের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট ফি ২০ টাকা, নিরাপত্তা মাশুল ১০০ টাকা, এসকর্ট মাশুল ৫০ টাকা এবং অন্যান্য প্রশাসনিক মাশুল ১০০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি টন পণ্যে মাশুল মাত্র ২৭০ টাকা। এছাড়া প্রতি চালানের ডকুমেন্ট প্রসেসিং ফি ৩০ টাকা, প্রতিটি কনটেইনার স্ক্যানিং ফি ২৫৪ টাকা এবং বিধি অনুযায়ী ইলেকট্রিক সিল ও লক মাশুল প্রযোজ্য হবে।

সাধারণত ২০ ফুটের কনটেইনারে সর্বোচ্চ ২৫ মেট্রিক টন পণ্য পরিবহন করা যায়। এ হিসাবে চট্টগ্রাম বা মোংলা বন্দর ব্যবহারে প্রতি কনটেইনারে ফি পড়বে সর্বোচ্চ সাত হাজার চার টাকা। এর সঙ্গে প্রতি চালানের ডকুমেন্ট প্রসেসিং ফি ৩০ টাকা দিতে হবে ভারতকে। আর বিধিমালা অনুযায়ী, ইলেকট্রনিক সিল ও লক লাগানোর চার্জ হিসেবে প্রথম ৪৮ ঘণ্টার জন্য ৭০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৪৮ ঘণ্টা অতিক্রম করলে বাড়তি প্রতি ঘণ্টার জন্য ৫০ টাকা হারে চার্জ আরোপ করা হবে। তবে বাংলাদেশের জন্য সড়ক ব্যবহারের জন্য এখনও কোনো চার্জ নির্ধারণ করা হয়নি।

প্রসঙ্গত, গত ৮ আগস্ট ট্রান্সশিপমেন্টের পণ্য পরিবহনের চুক্তির আওতায় ভারতের পণ্য নিয়ে মোংলা সমুদ্রবন্দরে এসে পৌঁছে এমভি রিশাদ রায়হান নামের কার্গো জাহাজ। এতে ভারতের দুটি কনটেইনার ছিল, যার একটিতে ১৬ দশমিক ৩৮ মেট্রিক টন লোহার পাইপ এবং অন্যটিতে ৮ দশমিক ৫ মেট্রিক টন প্রিফোম ছিল। এর মধ্যে পাইপবাহী কনটেইনারটি তামাবিল হয়ে মেঘালয় যায়। আর প্রিফোমবাহী কনটেইনারটি যায় বিবিরবাজার (কুমিল্লা) দিয়ে আসামে।

জানতে চাইলে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, মোংলা বন্দরের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।

এদিকে ৩০ আগস্ট ২৫ টন টিএমটি বার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসছে ট্রান্সশিপমেন্টের আরেকটি চালান।

সূত্রমতে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বাংলাদেশ-ভারত ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৬৯ সালের কাস্টমস আইনের অধীনে ২০১০ সালে একটি বিধিমালা প্রণয়ন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ‘ট্রান্সশিপমেন্ট ও ট্রানজিট পণ্যের কাস্টমস ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০১০’ শীর্ষক ওই বিধিমালায় ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট ফি নির্ধারণ করে দেয়া হয়।

বিধিমালায় বলা হয়, সড়ক বা রেলপথে প্রতি টিইইউ (২০ ফুটের) কনটেইনারের ক্ষেত্রে ১০ হাজার টাকা ট্রান্সশিপমেন্ট বা ট্রানজিট ফি প্রযোজ্য হবে। সড়কপথে কাভার্ড ভ্যান বা কাভার্ড ট্রাকে পণ্য পরিবহনে প্রতি টনে ট্রান্সশিপমেন্ট বা ট্রানজিট ফি হবে এক হাজার টাকা। আর নন-কনটেইনার জাহাজ বা রেলপথে পরিবহনের জন্য প্রতি টন বাল্ক পণ্যে ট্রান্সশিপমেন্ট বা ট্রানজিট ফি হবে এক হাজার টাকা। এছাড়া ট্রান্সশিপমেন্ট বা ট্রানজিট পণ্যের জন্য বিমা কাভারেজ বাধ্যতামূলক বলা হয়। আর কনটেইনার স্ক্যানিং চার্জ শুল্ক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত হবে।

যদিও সে বছর ভারতের পিআইডব্লিউটিটির (প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড) অধীনে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে চলাচলের ক্ষেত্রে দুটি জাহাজে ট্রান্সশিপমেন্ট ফি প্রদানে আপত্তি জানায় ভারত। এতে ট্রান্সশিপমেন্ট ফি আদায় স্থগিত করা হয়। আর পরের বছর বিধিমালাটি বাতিল করা হয়।

পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সালে পিআইডব্লিউটিটির আওতায় আশুগঞ্জ নৌবন্দর ব্যবহার শুরু করে ভারত। এতে জাহাজে আসা পণ্য বন্দর থেকে আখাউড়া দিয়ে সড়কপথে ভারতে যায় পণ্যবাহী ট্রাক। সে বছর প্রতি মেট্রিক টনে মাত্র ১৩০ টাকা মাশুল নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে প্রতি মেট্রিক টনে ডকুমেন্ট প্রসেসিং ফি ১০ টাকা, ট্রান্সশিপমেন্ট ফি ২০ টাকা ও সিকিউরিটি চার্জ ১০০ টাকা। এ হিসাবে প্রতি কনটেইনারে ট্রান্সশিপমেন্ট ফি পড়ে ৫০০ টাকা। আর চট্টগ্রাম বা মোংলা বন্দরের জন্য নির্ধারিত মাশুলও প্রতি কনটেইনারে ৫০০ টাকা।

এদিকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের সড়ক ব্যবহার করে ট্রান্সশিপমেন্টের পণ্য নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতি কিলোমিটারে মেট্রিক টনপ্রতি দুই টাকা ১০ পয়সা হারে ফি আরোপের প্রস্তাব করা হয়। তবে ভারতের সঙ্গে সচিব পর্যায়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ প্রস্তাবে সম্মত হয়নি দেশটি। এক্ষেত্রে যুক্তি দেয়া হয়, বন্দর ব্যবহার ফি দেয়া হলে আবার সড়ক ব্যবহার ফি কেন দিতে হবে!

অন্যদিকে ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে কী ধরনের চার্জ আরোপ করা হবে, তা নির্ধারণে ২০১১ সালে গঠন করা হয়েছিল কোর কমিটি। ২০১২ সালে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ওই কমিটি। তাতে প্রতি টন পণ্য পরিবহনে কিলোমিটারপ্রতি চার দশমিক ২৫২৮ টাকা চার্জ আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছিল। এর বাইরে কাস্টমস সার্ভিস চার্জ যানবাহনপ্রতি পাঁচ হাজার ২২০ টাকা আদায়ের প্রস্তাব করে কোর কমিটি। তবে এগুলোও কোনোটিই কার্যকর হয়নি। এমনকি কোর কমিটির প্রতিবেদন আর আলোর মুখ দেখেনি।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ৬ জুন ঢাকায় বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় পণ্য সরবরাহ করতে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করা হয়। আর চূড়ান্ত চুক্তি সই হয় ২০১৮ সালের অক্টোবরে। এর অধীনে নির্ধারিত এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অব প্রটোকল) অনুযায়ী চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করবে ভারত।

মূল খবরের লিঙ্ক



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top